Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দপুরে বিদেশী ক্যান্টালপ ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ

বাজারজাত নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক

সৈয়দপুর (নীলফামারী) জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ৫:২৪ পিএম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে উচ্চ ভিটামিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ বিদেশী ক্যান্টালপ ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে আদর্শ কৃষক আহসান-উল-হক বাবু তাঁর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ওই ক্যান্টালপ ফলের চাষাবাদ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি পাশের আরো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ (ব্লাকবক্স জাত) আবাদ করেছেন। ক্ষেতে উল্লিখিত দুইটি ফলের ফলন দেখে উচ্ছসিত কৃষক আহসান-উল- হক বাবু। কারণ পরীক্ষামূলক ক্যান্টালপ ও তরমুজ চাষে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। আর সপ্তাহখানেক পরেই এ সব আবাদকৃত ফল বাজারজাত করা যাবে। চলমান বৈশ্বিক প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব শ্রেণী পেশার মানুষ যখন ঘরবন্দি। আর তার মধ্যে কৃষক আহসান -উল -হক বাবু’র দিনরাত হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম ও পরিচর্যায় ক্ষেতে উৎপাদিত ক্যান্টালপ ও তরমুজ বাজারজাত নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লিখিত এলাকার বাসিন্দা মো. আহসান -উল-হক বাবু মূলতঃ ধান বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এবং একজন আদর্শ কৃষক। তাঁর বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম সজীব সীডস্। বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পাশাপাশি তিনি দেশি-বিদেশী নিত্য নতুন উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাক-সবজি ও ফসলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে থাকেন। সেই সঙ্গে দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় ধান, গম ও ভূট্টার (মানুষের খাবার উপযোগী) চাষাবাদ ফিরে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাতে তিনি সফলতা পেয়েছেন ইতিমধ্যে। তাঁর গবেষণা ও অনুসন্ধানী চিন্তাধারণা থেকে তিনি চলতি মৌসুমী তাঁর সাত বিঘা উঁচু জমিতে বিদেশী ক্যান্টালপ ফল ও ব্লাকবক্স জাতের তরমুজের চাষাবাদ করেছেন।
কৃষক আহসান-উল- হক বাবু জানান, তিনি ইন্টারনেট থেকে ক্যান্টালপ জাতের ফল চাষে উদ্ধদ্ধু হন। আর ব্লাকবক্স জাতের তরমুজ চাষের ধারণা পান মেহেরপুর জেলার কৃষকদের কাছ থেকে। পরবর্তীতে তিনি ক্যান্টালপ ও ব্লাকবক্স জাতের তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেন। সংগৃহিত বীজ বপন করেন ট্রেতে। গেল ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রেতে বীজ বপনের ১৭/১৮ দিন পর তা তুলে জমিতে রোপন করেন। জমিতে সম্পূর্ণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এবং আংশিক অর্গানিক সার প্রয়োগে ওই চারা রোপন করা হয় গত ১৬ ও ১৭ মার্চ। আর ক্ষেতে নিড়ানো প্রতিরোধে ও সারের যথাযথ কার্যকারিতা রক্ষায় মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে যথারীতি নিবিড় পরিচর্যার কারণে ৪০/৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতে ক্যান্টালপ ও তরমুজ গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়।
গতকাল উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর অসুরখাই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদর্শ কৃষক আহসান- উল- হক বাবু’র ক্যান্টালপ ও তরমুজ ক্ষেতের জাংলায় বিভিন্ন আকৃতির শত শত ক্যান্টালপ ও তরমুজ ফল ঝুলছে। আবার কোনটি বাজারজাত করার মতো উপযুক্ত হয়েছে।
কৃষক বাবু জানান, তাঁর জমিতে ক্যান্টালপ ও তরমুজের চাষাবাদে সার, বীজ, জাংলা তৈরিসহ পরিচর্যায় প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। সেই হিসেবে দেখা যায় তাঁর সাত বিঘা জমিতে সাড়ে চার লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন প্রতি কেজি ক্যান্টালপ ২৫০ থেকে ৩ শ’ টাকা এবং তরমুজ ৩৫/৪০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তাঁর ক্ষেতের ওই দুইটি ফল বিক্রি করে খরচ উঠার পরও কয়েক লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমান করোনাকালে তিনি তার ক্ষেত্রের ক্যান্টালপ ও তরমুজ বাজারে নিতে পারছেন না। কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সরকারি নিদের্শনায় দোকানপাট ও গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ। শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মানুষের দৈনন্দিন আয়রোজগার বন্ধ থাকায় চরম অর্থাভাবে পড়েছেন। কিন্তু চলমান করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে তাঁর সেই আশা ও স্বপ্ন মলিন হতে বসেছে। তিনি এখন ক্ষেতের ক্যান্টালপ ও তরমুজ কিভাবে কোথায় বাজারজাত করবেন তা ভেবেচিন্তে কোন কুলকিনারা পাচ্ছেন না। তিনি চাষাবাদকৃত ক্যান্টালপ ও তরমুজ বাজারজাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন।
কৃষক আহসান-উল-হক বাবু’র বিদেশী ক্যান্টালপ ফলের চাষাবাদ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ বাসুদেব দাস সঙ্গে। তিনি বলেন, কৃষক আহসান-উল- হক বাবু একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁর জমিতে বিদেশী ফল ক্যান্টালপ চাষাবাদের পাশে থেকে কারিগরী, পোকামাড়ক ও রোগ-বালাই দমনে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছি। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনা বেগমও ক্যান্টালপ ক্ষেত পরিদর্শন করে কৃষককে নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি জানান, ওই কৃষক তাঁর জমিতে উৎপাদিত নতুন ফসল বাজারজাতকরণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাভবান হবেন। দেশের সাধারণ মানুষও বিদেশী ক্যান্টালপ ফল খেতে পারবেন। এতে করে মানুষের ভিটামিন ও প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে আমদানি নির্ভর এ ফল দেশে উৎপাদনে ফলে মানুষের চাহিদা মিটবে এবং বৈদেশিক মূদ্রাও সাশ্রয় হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ