Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জীবাণুনাশক রাসায়নিক টানেল

করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন বিপদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঈদ উপলক্ষে খুলে দেয়া কিছু মার্কেট ও শপিংমলে প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করা হয়েছে। ওই সব ট্যানেলের ভেতর দিয়ে ক্রেতারা প্রবেশ করেন জীবাণুমুক্ত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, জীবাণুনাশক টানেল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ণ। জীবাণুনাশক হিসেবে টানেলে ব্যবহৃত রাসায়নিক মানুষের ত্বক, চোখ, মুখে পড়লে ক্ষতি হতে পারে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি অফিসে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপনের সুপারিশ করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া বলেন, রাসায়নিক টানেলে সংস্পর্শে এলে স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। ব্লিচিং পাউডার জীবাণুনাশক হিসেবে কার্যকর হলেও তা সরাসরি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে এলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই ধরণের কেমিক্যালের সংস্পর্শে এলে চামড়ায় জ্বালাপোড়া, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে বারবার সংস্পর্শে আসতে থাকলে আরো জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিøচিং পাউডারের মূল উপাদান ক্লোরিন মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণের পর গত ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশের সব জেলার সিভিল সার্জনকে উদ্দেশ্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা এক নির্দেশনায় জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহার করে শরীরে সরাসরি জীবাণুনাশক ছিটানো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত রাসায়নিক মানুষের ত্বক, চোখ, মুখে পড়লে ক্ষতি হতে পারে। এই নির্দেশনার এক মাসের মধ্যে গত ১৩ মে সরকারি অফিসে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই বিপরীত ধর্মী পরামর্শে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান জানান এই ধরনের টানেলের কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত থাকায় কর্তৃপক্ষ দুই দফায় দুই রকম নির্দেশনা দিয়েছে। টানেলের কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতের পার্থক্য রয়েছে। তাই প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টানেল স্থাপন থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিলেও পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে অফিসে টানেল স্থাপন করা বাধ্যতামূলক নয়, কর্তৃপক্ষ চাইলে টানেল স্থাপন করতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জীবাণুনাশক টানেলের ধারণা বাস্তবায়ন করতে গেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। একজন মানুষ শপিংমলে গিয়ে অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসার পর বের হওয়ার সময় টানেলের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে এসে নিজেকে জীবাণুমুক্ত মনে করতে পারেন এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এতে ওই ব্যক্তির মধ্যে ফলস সেফটির ধারণা তৈরি হলে সতর্কতা কমবে এতে উল্টো বিপদ তৈরি হতে পারে। ব্লিচিং পাউডার ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিউশন দিয়ে তৈরি রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ ধরনের টানেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন করেনি। ফলে এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য উল্টো ক্ষতিকর। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হচ্ছে। এতে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ক্ষতিকর দিকগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। এই টানেল একটা ‘ফলস সিকিউরিটি’ দেবে। ট্যানেলের ভেতরে কয়েক সেকেন্ড সেন্সরটা কাজ করে, এাঁ কোনওভাবেই সুরক্ষা দেবে না। বরং চোখসহ সরাসরি শরীরের উন্মুক্ত স্থানের জন্য ক্ষতিকারক। অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন ফিরোজ বলেন, হাইড্রোজেন পার অক্সসাইড জীবাণুনাশক হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করছে। এক থেকে দুই শতাংশ হাইড্রোজেন পার অক্সাসাইড ঠিক ‘ইফেক্টিভলি ভাইরাস কিল’ করতে পারে কিনা-এাঁ কোথাও নেই। তাছাড়া ইউভিসি (আল্ট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন-সি অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মির সি ক্যাটাগরি) পোশাক জীবাণুমুক্ত করতে করা হয়, আবার এটা শরীরের জন্য ভালো নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ