বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অঘোষিতভাবে লকডাউন প্রত্যাহার গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগন। লকডাউন শিথল করায় গত এক সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলে করেনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকি পুলিশ সদস্য সহ চিকিৎসক ও নার্স এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। বরিশাল মহানগরী এতদিন কিছুটা সেফ জোনে থাকলেও সেখানে করোনা বিস্তার ঘটছে। শুধুমাত্র মহানগর পুলিশের দশজন সদস্য আক্রান্ত হয়ে এখন প্রতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন। শুক্রবার পুলিশ হাসপাতালের এক কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স আক্রান্ত হবার পরে তার পুরো পরিবারের সকলেই সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছে।
প্রথমে নরায়নগঞ্জ থেকে চোরাই শ্রোত দক্ষিণাঞ্চলে করেনা সংক্রমিত করলেও এখন তা সামজিক সংক্রমনের পর্যায়ে গেছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬তে পৌছেছে। যার অর্ধেকই আক্রান্ত হয়েছে গত ১০মে লক ডাউন শিথিল করার পরে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুনহারে বাড়ছে। রবিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে আরো ১৩ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ এবং আরেক ছোট জেলা বরগুনাতে ৪২জন আক্রান্ত হয়েছে। বরিশাল মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩০-এর কাছে। জেলায় মোট আক্রান্ত প্রায় ৭৫। এছাড়া ভোলায় গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা শূণ্য থেকে ১৬তে উন্নীত হয়েছে। পটুয়াখালীতেও ৩২ জন আক্রান্তের খবর দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। দক্ষিণাঞ্চলে ইতোমধ্যে করেনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১০জন। যারা মধ্যে ‘কোভিড-১৯’এ মৃত্যুর সংখ্যা ৬।
কিন্তু গত মার্চের শেষে প্রথম করেনা রোগী সনাক্ত হবার পরে বরিশালকে লকডাউনের আওতায় আনার পরে প্রথম দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকলেও এপ্রিলের শেষভাগ থেকে তা পরিবর্তন হতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমনই ছিল যে, দিনে বৃষ্টি আর রাতে অভ’ক্ত বেওয়ারিশ কুকরের দলই অবাধ্য মানুষকে লকডাউন পালনে বাধ্য করছিল। কিন্তু গত ১০ মে থেকে দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে শিথিলতা সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। প্রথমে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট না খোলার পক্ষে ছিলেন। এমনকি সিটি মেয়রের সাথে বৈঠকেও ব্যবসায়ীগন দোকানপাট না খোলার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সব এলামেলো হয়ে গেছে। ফলে করোনার বিস্তার ঘটছে। কিন্তু এর পরেও খুব বেশী প্রশাসনিক পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়। তবে শণিবার বরিশাল মহানগরীর ৩টি দোকানে অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্য বিধি না মানা সহ সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখায় ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করেছে। রবিবারও পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। পরিস্থিতি এমনই যে জীবনের চেয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেই অনেক মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর অনেক ব্যবসায়ী পরক্ষোভাবে তাদের উৎসাহিত করছেন বলে মনে হচ্ছে। এসব আত্মঘাতি কর্মকান্ড নিবৃত্ত করারও এখন কেউ আছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না।
রবিবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে নুতন করে আরো ১৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬তে দাড়াল। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল মহানগরীতে দুজন , ভোলাতে ৬জন, পিরোজপুরে ৩জন ও ঝালকাঠীতে ২জন রয়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা মূক্তহয়ে সুস্থবস্থায় ঘরে ফিরেছেন আরো ৪জন। এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তদের মধ্যে জন সুস্থ্য হলেন ১০৫জন। এপর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ২১৬ জনের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে মোট ৯৬ জন করেনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলেও প্রায় ৭৫ জন সুস্থ্য হয়েছেন। আর বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ৩৬৮ জনের মধ্যে ২১৮ জন ছাড়পত্র লাভ করেছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে।
তবে অবিলম্বে লকডাউন কঠোরভাবে প্রয়োগ সহ পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি অনুসরনে মানুষকে বাধ্য না করলে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে স্বস্থ্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।