পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যে কোনো দুর্যোগ-মহামারীতে ত্রাণ বিতরণ এবং সরকারি সহায়তা প্রদানের ‘তালিকা প্রণয়নে’ দলবাজির অভিযোগ অতি পুরনো। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এইসব তালিকা করায় তাদের বিরুদ্ধে দলবাজির অভিযোগ উঠে। আবার ত্রাণের চাল-টাকা চুরির অভিযোগও পুরনো। এবার ব্যতিক্রম করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি করোনাকালে দলের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের বদলে আমলাদের মাধ্যমে তালিকা করে মানুষকে সহায়তা করছেন। এতে সুফলও এসেছে। আমলারা রাজনৈতিক বিবেচনার উপেক্ষা করে সব মতপথ ও পেশার মানুষকে তালিকাভুক্ত করেছেন। অঘোষিত লকডাউনে ঘরে বসেই মানুষ ত্রাণ ও প্রণোদনার টাকা পাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটা আমলাদের দক্ষতা প্রমাণ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ। বিগত দিনগুলোতে তারা দলবাজি করে যে ইমেজ খুইয়েছেন; সেটা পুনরুদ্ধারের সুবর্ণ সুযোগ এনে নিয়েছে ঘাতক করোনা। আমলারা দায়িত্ব নেয়ার পর কিছু অনিয়ম ও ভুলভ্রান্তির অভিযোগ উঠলেও এখনো দলবাজির অভিযোগ উঠেনি।
করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো দুর্যোগ মোকাবেলায় বিপর্যস্ত। সেখানে সুচিন্তিত নেতৃত্বের কারণে চীনের মতো বাংলাদেশ কিছুটা হলেও সাফল্যের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। করোনাকালে ঘরে বসে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষকে ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী, অর্থ দেয়া হচ্ছে। এমনকি যারা সামাজিক অবস্থানের কারণে ত্রাণ চাইতে পারেন না তাদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এমনকি মোবাইলের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ববস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, ৫০ লাখ পরিবারে তালিকা শেষ হয়েছে। এখন চলছে সারাদেশের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের তালিকা তৈরি কাজ। এটা শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ঈদ উপহারের টাকা বিতরণ শুরু করবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের তালিকা তৈরির জেলা সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের তালিকা প্রণয়নে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি সহায়তা করলেও অধিকাংশ জনপ্রতিধি (এমপি) ঢাকায় অবস্থান করায় তেমন সহায়তা করছেন না। এতে ত্রাণ বিতরণ এবং ৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার তালিকায় দলবাজি করা হচ্ছে না। আমলারা দায়িত্ব থাকায় মূলত এটা সম্ভব হচ্ছে। তালিকায় কিছু ভুল ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও অতীতের মন্ত্রী-এমপি-স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকার মতো দলবাজির তেমন অভিযোগ নেই।
করোনায় বাংলাদেশে এই প্রথম দরিদ্র দুই কোটি মানুষের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র ও কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের নগদ অর্থ প্রদানের যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন তা একটি মানবিক পদক্ষেপ। বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, কেবল শেখ হাসিনার পক্ষেই এমন সাহসী মানবিক পদক্ষেপ কর্মসূচী গ্রহণ সম্ভব। সরকারের প্রতি জনগণের আস্তা ফেরাতে এবং প্রশাসনকে দল-নিরপক্ষে করতে ৬৪ জেলায় ত্রাণ তদারকিতে সচিবদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধিরা যে তালিকা দিয়েছেন তা পক্ষপাতিত্ব কিনা তালিকা যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দিয়ে। সরকার চায় আগামী চার বছর দল-নিরপক্ষভাবে কাজ করতে। একারণে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের বাদ রেখে প্রশাসনকে মাঠে নামিয়েছে সরকার।
দেশের ইতিহাসে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচী উদ্বোধনের পাশাপাশি কর্মসৃজন কার্যক্রমে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আড়াই হাজার কোটি টাকার ঈদের আগে দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সহায়তা এবং সাত হাজার কওমি মাদরাসাকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সারাদেশের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-খতিবদের তালিকা তৈরি কাজ প্রায় শেষ করেছেন। আগামী সপ্তাহে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-খতিবদের ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে টাকা দেয়া কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।
করোনাভাইরাস একটা অদৃশ্য শক্তি। এই শক্তি মোকাবেলা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো গলদঘর্ম। করোনাভাইরাস এমন এক অদৃশ্য শক্তি যেখানে সব শক্তি পর্যুদস্ত হয়ে গেছে। এদের কাছে সকলের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি গতি নিম্নমুখী। আমেরিকার মতো দেশে ৪ থেকে ৫ কোটি লোক বেকার হয়ে গেছেন। সেখানে বাংলাদেশ অর্থনীতিকে সচল রাখতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
উন্নত দেশগুলোতে দুর্যোগ, মহামারী এবং অর্থনৈতিক মহামন্দায় আর্থিক সহায়তার আওতায় নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবে নগদ টাকা প্রদানের রেওয়াজ একটি নিয়মিত ব্যাপার। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক মাহামারী করোনার সময়ে আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তাদের নাগরিকদের প্রত্যেককে ১২শ’ মার্কিন ডলার করে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান অনেক আগেই নাগরিকদের ঘর ঘরে নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছে। ভারতও তার দেশের নাগরিকদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। আর বাংলাদেশ সেটাকে আরো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বয়স্কা, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের নগদ অর্থ প্রদানের রেওয়াজ গত দুই যুগ ধরে চালু রয়েছে। তবে এই প্রথম বাংলাদেশ সরকার একটি বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় দেশের সব শ্রেণির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তাদের নগদ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করা কাজ শুরু হয়েছে।
এই নগদ অর্থ প্রদান কার্যক্রমের আওতায় প্রত্যেক পরিবারে চারজন সদস্য ধরে এই অর্থ দেয়া হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান। যেহেতু সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হচ্ছে- ছেলে হোক, আর মেয়ে হোক প্রত্যেক দম্পতিকে দ্ুটি সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করা। সেই হিসাবে দুটি সন্তান বিবেচনায় প্রত্যেক পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন ধরা হয়। এই চারজনের প্রত্যেকে ৬শ’ টাকা করে পাচ্ছেন। ফলে সরকারের এই নগদ অর্থ প্রদান কর্মসূচীতে প্রত্যেক পরিবারকে একশ’ টাকা খরচসহ আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের প্রায় এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা খরচ হবে। গত সোমবার এই টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
দেশের এই সঙ্কটকালে দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য সঙ্কট লাঘব আর কোন মানুষ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায় সেটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান লক্ষ্য। শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনায় ঘরে বসে থাকা মানুষের কারও যেন কষ্ট না হয় এবং সবাইকে কিছু দিতে পারি সেই চিন্তা থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক, যত আঘাত আসুক, যাই আসুক না কেন- আমাদের সবসময় বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা করোনার আঘাতও মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।
দেশে যারা একেবারে ভাসমান মানুষ হিসেবে পরিচিত- নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, ফেরিওয়ালা, রেলওয়ে কুলি, মজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দর, রিকশা-ভ্যান-গাড়ি চালক, নিম্নবিত্ত আয়ের লোকজনসহ বিভিন্ন ধরণের মানুষ যারা দৈনন্দিন কাজ করে করেন; তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ ও রমজান উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সহায়তা এবং ঈদের আগে আরও সাত হাজার কওমি মাদরাসাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে মাদরাসাগুলোর তালিকার কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী করোনা পরবর্তী সময়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে বেশি করে প্রবাসীসহ দেশের তরুণ-তরুণীরা যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারেন সেজন্য ঋণ দিতে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ৫শ’ কোটি টাকা সরকার থেকে আমানত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য ১৭টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ১৮তম প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজে রয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি করে সর্বমোট ২০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে সর্বমোট এক লাখ এক হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। যা মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
মহামারীর কারণে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার (নগদ, বিকাশ, রকেট, শিউরক্যাশ) মাধ্যমে সরাসরি এ নগদ অর্থ পাচ্ছেন। এ সহায়তার জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের সহায়তার জন্য এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ছয় হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদরাসায় দেয়া আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায় আরও সাত হাজার কওমি মাদরাসায় ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৪ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে উপবৃত্তি বাবদ ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
সুবিধাবঞ্চিত সমাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত হিজড়া-বেদে বা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে। মা ও শিশুদের জন্য কী কী জিনিস করা যায় সে বিষয়ে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ শুরু করেছে। করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ভালো রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।