পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনায় টালমাটাল বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউনের মধ্যে তাদের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোদমে চালু রেখেছে। এছাড়া তাদের অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। বাংলাদেশেও অর্থনীতি সচলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন নানামুখী পদক্ষেপ। ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিধি। ব্যাপকভাবে চলছে দেশে ত্রাণ বিতরণ। ১৫ রোজার পর থেকে শুরু হয়েছে দেশের ধনিক শ্রেণিদের যাকাত দেয়া। এই যাকাতের পরিমাণও দেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ঈদ কেন্দ্রিক মানুষের ব্যাংক থেকে ব্যাপক অর্থ উত্তোলন এবং আমানত রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ঈদে মার্কেট খোলা না থাকলেও অনলাইন মার্কেটিং ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। করোনার মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে ঈদ কেন্দ্রিক প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। এতে দেশে বেড়েছে অর্থের প্রবাহ। কিন্তু এই সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাত গ্রাহকদের হতাশ করেছে। পাচ্ছেন না স্বাভাবিক সেবা। অথচ অন্যান্য ঈদের আগে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ব্যাংক খোলা রাখতে হতো। একই সঙ্গে ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হয়। বর্তমানে গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রুটিন কাজ টাকা দেয়া-নেয়ায় চালু আছে। ব্যাংকগুলো চেয়ে থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক কি সার্কুলার দিচ্ছে তার দিকে। সামনে ঈদ হওয়া সত্তে¡ও ব্যাংকগুলোর নেই গ্রাহকদের নিয়ে কোনো চিন্তা। সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলায় প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহকদের নানামুখী ভোগান্তি। এক ব্রাঞ্চ খোলা না পেয়ে অন্য ব্রাঞ্চে গিয়ে লম্বা লাইনসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। যদিও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক শুরু থেকে ঝুঁকির মধ্যে সব শাখা খোলা রেখেছে।
ঈদ ঘনিয়ে আসছে। এভাবে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চললে আগামী সপ্তাহে গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এই সময়ে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ব্যাংকগুলোর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কার্যক্রমও চলছে ঢিলেঢালা। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের কার্যক্রম নিয়ে হতাশ দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ গ্রাহক।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকায় পূর্ণ দিবস খোলা থাকবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখা। তবে মতিঝিল ও দিলকুশায় অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম নেই। ব্যাংকের অধিকাংশ ফ্লোরেই তালা। গুটি কয়েক কর্মকর্তা অফিস করছেন। এমনকি সাধারণ কাজ চেক ক্লিয়ারিং কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র লোকাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের কার্যক্রম চলছে।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প রক্ষা করতে বিভিন্ন খাতে সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে ঘোষণার পরে প্যাকেজের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতা শুরু হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় দুই মাস গত হতে চললেও এখনো প্রণোদনা প্যাকেজর কার্যক্রম ৫ শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রণোদনা ঘোষণার উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মত দিয়েছেন। এজন্য প্রকৃতপক্ষেই যাতে প্রণোদনাগুলো কাজে আসে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের প্যাকেজের আওতায় এপ্রিল মাসের বেতন দেয়ার কথা। করোনার সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও ব্যাংকিং কার্যক্রমের জটিলতার কারণে সময় মতো বেতন পাননি শ্রমিকেরা। কারণ শাখা খোলা না থাকায় শিল্প মালিকদের প্রণোদনা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। আর তাই করোনাভাইরাস সঙ্কটে শ্রমিকদের বেতনের জন্য সরকারের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকে অর্থ পেয়ে গত বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত আবেদন করা কারখানাগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ কারখানার মালিক অর্থ ছাড় পেয়েছেন। ব্যাংকগুলোর গাফিলতিতে টাকা ছাড় না হওয়ায় অন্যদের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। এটা শুধুমাত্র একটি খাতের চিত্র। অথচ শ্রমিকদের বেতনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ মার্চ। আর এর পরে যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন নামেই।
রবিউজ্জামান নামের এক গ্রাহক জানান, মহাখালীতে অবস্থিত কোনো ব্যাংকের শাখাই খোলা নেই। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরা, বনানী ও গুলশানে যেতে হয়। কিন্তু ওখানকার গ্রাহকদের ভিড়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করে সেবা পাওয়া গেলেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আবার অনেক সময় নির্দিষ্ট ওই ব্যাংকের শাখা মিলছে না। এছাড়া শাখা আজ খোলা তো কাল বন্ধ। এমনকি আজ বনানী এলাকার ব্রাঞ্চ খোলা কাল গুলশানের। প্রতিদিনই এ নিয়ে নানামুখী ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এদিকে সাধারণত রমজান মাসে অধিক ফজিলতের আশায় মুসলমানরা যাকাত দেন। যাকাত হচ্ছে রিলিজিয়াস (ধর্মীয়) ট্যাক্স। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রক্ষায় মুসলমানদের যাকাত দিতেই হয়। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সবাই যাকাত প্রদান করায় কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন আবার কেউ রাখছেন। হিসাব মতে, শুধুমাত্র যাকাত বাবদ এই সময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার হাতবদল হবে। এছাড়া বর্তমান মহামারীর সময়ে যে যেভাবে পারছেন ত্রাণ দিচ্ছেন। মানুষকে সাহায্য করছেন। আর তাই ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা মানুষের অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ঈদ কেন্দ্রিক মানুষের কেনাকাটা। কিন্তু ব্যাংকের অধিকাংশ শাখা খোলা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা। এমনকি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে যেসব ব্যাংক ব্যবসা করছে তারাও এখন তাদের কার্যক্রম সীমিত করে ফেলেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে যেভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগুচ্ছে তাতে ঈদের আগে খুব সামান্যই হবে। তাই ব্যাংকের কার্যক্রমে আরও গতি বাড়ানো উচিত। ইতোমধ্যে এফবিসিসিআই অ্যাসোশিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাথে দ্রুত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সভা করেছি। তবে সাধারণ ছুটি বাড়ানো, আবার কিছু খোলা রাখা এটা নিয়ে মিস ম্যানেজমেন্ট রয়েছে। শেখ ফজলে ফাহিম এই দুর্যোগের সময়ে সবার সহযোগিতার হাত বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, ব্যাংকগুলো টাকা ছাড় করতে দেরি করায় শ্রমিকদের বেতন পেতে দেরি হচ্ছে। এমনকি নিজের কারখানার অর্থই ছাড় করতে দেরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে শুধু বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রীতাই নয়; গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ শাখা কম খোলা থাকায় সবাই নির্দিষ্ট শাখায় ভিড় করছে। এতে গ্রাহক ভোগান্তির পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকের কর্মকতারা আগে থেকেই যথেষ্ট জায়গা নিয়ে বসেন। তাদের ব্যাকিং কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ আছে। যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আগে অর্থনীতি সচলে এবং দেশের স্বার্থে সকল ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খুলে দেয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সরকার লকডাউন ৩০ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। তাই এখনও আগের ধারায়ই কিছুটা সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রেখেছে। গ্রাহকদের স্বার্থে ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। তারপরও অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ এবং মোবাইল ব্যাংকিং স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। যাতে গ্রাহকদের কোন সমস্যা না হয়। সিরাজুল ইসলাম বলেন, সমস্ত ব্যাংক খোলা রাখার মতো পরিবেশ এখনও মনে করছি না।
বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, গার্মেন্টস বাদে এলসি বন্ধ, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় কাজ কম। তাই বেসরকারি ব্যাংকে গ্রাহকের ভিড়ও কিছুটা কম। তবে ঈদ কেন্দ্রিক যেখানে দরকার সেখানে শাখাগুলো খোলা রাখছে ব্যাংকগুলো।
রাষ্ট্রায়ত্ত¡ অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, লকডাউন বাড়ায় এখন আর সব শাখা খোলার চিন্তা নেই। তবে যেখানে গ্রাহকের চাহিদা বেশি সেখানে খুলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল শাখা বন্ধ ছিল। এতে জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায় চাপ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় তাই কার্জন হল শাখা খোলা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে খুলতে অসুবিধা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সামনে ঈদ। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঈদের আগ পর্যন্ত সুরক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকদের স্বার্থে ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখা দরকার।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তাই ব্যাংকগুলোকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সুরক্ষাসামগ্রী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং বর্তমান স্থবিরতা দূর করতে দ্রুতই ব্যাংকের সকল শাখা খুলে দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।