পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব টালমাটাল। বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে সামাজিক যোগযাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এক ধরণের লকডাউনের মধ্যে সবার জন্য সামাজিক দূরত্ব রক্ষা অপরিহার্য। চিকিৎসকরাও নিজে এবং রোগীর কথা বিবেচনা করে এই মহামারী থেকে বাঁচতে চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় সময়ের প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবায় নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে; সেটা হলো টেলিমেডিসিন সেবা। এই টেলিমেডিসিন সেবা হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগী দেখা এবং রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেয়া। করোনাই মূলত এই পথ দেখিয়েছে। দেশে টেলিমেডিসিন সেবায় কার্যত বিপ্লব ঘটে গেছে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ইনকিলাবকে বলেন, প্রযুক্তি আমাদের সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির ছোয়ায় বর্তমান লকডাউনের মধ্যেও গ্রামের একজন সাধারণ মানুষও টেলিফোনে রাজধানীর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন। এটা বর্তমান সময়ে বড় একটি সেবা। যা চিকিৎসা সেবাকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। প্রত্যেকটা দুর্যোগে ক্ষতির পাশাপাশি সম্ভাবনাও দেখা দেয়। আর করোনা আমাদেরকে টেলিমেডিসিনের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে এটা আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই উপকারি হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, আমাদের সাধারণ সেবার পাশাপাশি যে সব রোগী বাসা থেকে বের হতে পারেন না তাদের জন্য টেলিমেডিসেন সেবা চালু করেছি। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই সেবা চলবে। করোনার কারণে অধিকাংশ হাসপাতাল সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে। আবার অনেক হাসপাতাল করোনা থেকে বাঁচতে রোগী ভর্তিসহ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অন্যান্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি বিপাকে পড়েছে করোনার উপসর্গ থাকা রোগী থেকে সাধারণ ডায়াবেটিস, কিডনী, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসুখে ভোগা রোগীরা। এসব রোগীরা স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এছাড়া শুধু করোনার সময়েই নয়; মফস্বল শহর বা পল্লী অঞ্চলের একজন দরিদ্র অসহায় রোগী যার ঢাকা শহরে এসে পয়সা খরচ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সামর্থ নেই অথবা কোন জটিল রোগী যাকে অনেক দূর থেকে চিকিৎসকরে কাছে আনেত দেরি হয়ে যাবে- এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসার স্বার্থে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে ঘরে বসেই দূর-দুরান্তের রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন। এসব রোগীরা যাতে করোনার সময়েও স্বাভাবিক সেবা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে প্রযুক্তি। টেলিফোনে, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ফেসবুক ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রাইভেট হাসপাতাল, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক সংগঠন, ব্যাংক ও বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। যদিও অনেক দিন থেকেই আমেরিকা, যুত্তরাজ্য, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অনেক দেশই টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে।
বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে করোনার কারণে বিশেষ ছুটি চলছে। এই সময়ে এক অর্থে অচল দেশ। আর তাই দেশে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্যসেবা বা টেলিমেডিসিন ব্যবহারের চাহিদা তীব্রভাবে বেড়েছে। সরকারিভাবে চালু করা টেলিমেডিসিন সেবায় প্রথম দিকে ৫ হাজার কল আসলেও প্রতিদিনই তা বাড়ে। এখন তা লাখ ছাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরাও সংক্রমন হতে পারে বা সম্ভাবনা আছে এমন জায়গায় থাকতে চায় না। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে টেলিমেডিসিন সেবা পদ্ধতি চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য একটি সহজ সমাধান। এটা এক ধরণের অবিশ্বাস্য বিষয়। করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে এটা একটি সফল মাধ্যম। একই সঙ্গে এটা শুধু বর্তমানই নয়; ভবিষ্যতের জন্যও একটি সফল মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তারা।
তাদের মতে, অসুস্থ রোগীরা এখন গ্রামে বসেই রাজধানীর বড় বড় ডাক্তারদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন, দেখাচ্ছেন সমস্যাগুলো। আবার কিছু কিছু ডাক্তার ফেসবুকে গ্রুপ খুলে সেগুলোতেও পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের। পুরনো রোগীরা তাদের প্রেসক্রিপশন হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবারের পাঠিয়ে দিয়ে নিচ্ছেন নতুন পরামর্শ। এর সবই চলছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। ফলে কোন রোগীকে আর হাজার হাজার টাকা খরচ করে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টারেরর সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে টেলিমেডিসিনের সেবার চাহিদা। এটা এখন রোগীদের সহজ সমাধান। তিনি বলেন, প্রথম দিকে যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টেলিমেডিসিন সেবা স্বাস্থ্য বাতায়ন চালু করে তখন দিনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ফোন কল আসতো। যা এখন লাখ ছাড়িয়েছে।
সূত্র মতে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের প্রচলন মোটামুটি নতুন এবং আধুনিক একটি ধারণা। এখানে ডাক্তাররা টেলিভিশন স্ক্রিন এবং ক্যামেরার সামনে বসে দূর-দুরান্তের রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এই পদ্ধতি চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য সহজ সমাধান।
টেলিমেডিসিন বলতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে রোগীর লক্ষণগুলির মূল্যায়ন করতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসাসহ চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়কে বোঝায়। এটি ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে করা হয়, তাই রোগীকে ক্লিনিকে সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে হবে না। ফলে তারা অন্য লোকের সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি এড়তে পারেন। রোগীর করোনভাইরাস থাকার সন্দেহ থাকলে চিকিৎসক সেটা স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করবেন। এছাড়া ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে রোগীকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো কিংবা কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ দিতে পারেন। ভার্চুয়াল এই পদ্ধতি বর্তমান করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে অনেকটা সফল বলে মনে করছেন ডাক্তাররা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্বর, স্বর্দি-কাশীর রোগীদের জন্য এবং সাধারণ রোগীদের জন্য সব ধরণের সেবা চালু আছে। তারপরও যারা এই দুর্যোগের সময়ে বাসায় আছেন। তাদের জন্য টেলিমেডিসেন সেবা চালু করেছেন। সরকারের এটুআই এর সহায়তায় গতকাল বুধবার এই সেবার উদ্বোধন করেছেন। এখানে তিন স্তরে প্রথমে মেডিকেল অফিসার, সহকারী অধ্যাপক এবং সর্বশেষ সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের সমন্বয়ে এই সেবা চলবে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই সেবা চলবে। রোজার পরে যা আরও বাড়ানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের অধিকাংশ হাসপাতাল এই টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের চীফ অব কমিউনিকেশন্স এন্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে গত ২৮ মার্চ থেকে ব্যাপক পরিসরে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। প্রতিদিনই এই সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও আগে থেকে চট্রগ্রাম ও সিলেট সেন্টারের মাধ্যমে এই সেবা চালু ছিল তাদের।
তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই সেবা চালু আছে। তবে রোজার শেষে আগামী ১ জুন থেকে ২৪ ঘন্টা এই সেবা চালু করা হবে। ৭০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিদিন টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে রোগীরা তাদের আাগের রিপোর্ট ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সে প্রয়োজনীয় করণীয় পাচ্ছেন। আবার চিকিৎসকরাও টেলিকনফারেন্সের অ্যাডভাইস ওই রোগীর ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর এসব সেবা পাওয়া রোগীদের একটি তথ্য হাসপাাতালে সংরক্ষণ করছেন। যা পরবর্তীতে রোগীর রেকর্ড হিসেবে কাজ করবে। ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু, নবজাতক, গাইনী, নাক-কান-গলা, সার্জারী, কিডনী, ক্যান্সার, হৃদরোগসহ সব ধরণের বিশেষজ্ঞ সেবা পাচ্ছেন রোগীরা টেলিফোনে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল (এ্যাপোলো) সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি গত ২০ এপ্রিল থেকে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। প্রতিদিন রোগীরা মোবাইলে কল দিয়ে নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে সেবা নিতে পারছেন। এছাড়া রাজধানীর পুপুলার হাসপাতাল, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে।
২০১৬ সাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগ টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। টেলিমেডিসিনবিষয়ক টিমের কো-অর্ডিনেটর এবং মেডিসিন বিভাগের টিম লিডার সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ যায়েদ হোসেন হিমেল বলেন, তিনিও ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগী দেখেন। ডা. যায়েদ বলেন, আমরা কয়েকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পালাক্রমে নির্ধারিত সময়ে ক্যামেরার সামনে বসে দেশের বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে অপর প্রান্তের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। তবে করোনার কারণে উপজেলা হাসপাতালে এখন রোগী নেই তাই আমরা পরিকল্পনা করেছি করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এই টেলিমেডিসি সেবা চালুর। কারণ এসব রোগীদের কাছে চিকিৎসকরা সংক্রমণ এড়াতে যেতে ভয় পায়। তাই টেলিসেডিসিন হতে পারে এসব রোগীদের জন্য একটি সফল মাধ্যম।
ডা. যায়েদ হোসেন আরও জানান, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গাইনি, সার্জারি ও শিশু বিশেষজ্ঞরা ঢাকা মেডিকেল থেকে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে তারা অসংখ্য রোগীকে এ সেবা দিয়েছেন। সবাই এটাকে খুবই কার্যকর বলেছেন। এটি স্বাস্থ্য সেক্টরে একটি মাইলফলক তথা নবযুগের সূচনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে শুধু হাসপাতালই টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে তা নয়; বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে বিভিন্ন ব্যাংক যেমন- এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক এই সেবা চালু করেছে। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশনও এই সেবা চালু করেছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।