পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঘরবন্দি মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শঙ্কা জেগেছে বিভিন্ন খাতে। তবে এই মহামারী উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে ই-কমার্সে। লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় অংশকে ডিজিটাল ক্রেতা হিসেবে পাচ্ছে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো। কারণ করোনায় ওষুধ-খাদ্যসহ জরুরি পণ্য ছাড়া বাকী সব কেনাবেচা দেড় মাস ধরেই বন্ধ ছিল। গত ১০ মে থেকে সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে। তবে এই সময়ে ১৫০টির মতো ই-কমার্স সাইট প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করেছে ক্রেতাদের কাছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও শিখে গেছে অনলাইন কেনাবেচার পদ্ধতি। তারা যুক্ত হচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও। এদিকে চলতি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পুরোদমে চালু হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই প্রায় তিনগুণ বিক্রি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিন্দাবাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান হক জানান, এরই মধ্যে অনলাইন অর্ডার তিনগুণ বেড়ে গেছে। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, করোনার কারণে আমরা বেশ সঙ্কটে পড়েছি। তবে আশার দিক হচ্ছে একটা শ্রেণি অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। চালডালের সিইও জিয়া আশরাফ বলেন, করোনা সঙ্কটকালে তাদের অর্ডার বিপুল পরিমাণ বেড়ে গেছে, ডেলিভারিম্যান কম থাকায় তারা সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ইভ্যালী, আড়ং, দারাজসহ বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে বিক্রি বেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন এসবের প্রতিনিধিরা। অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় যতটুকু সাপ্লাই দেয়া সম্ভব সেটুকুই অর্ডার নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
গত কয়েকবছর ধরেই বেড়েছে অনলাইন কেনাকাটা। একই সাথে বেড়েছে এর পরিধিও। কেবল ওয়েবসাইট ভিত্তিকই নয়, এখন ফেসবুকের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করছেন অনেকেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে, কাপড়, গৃহস্থালি পণ্য, অলঙ্কার, প্রসাধনী, খাবারসহ যা প্রয়োজন সবই মিলছে এই ভাচুয়াল জগতে। বিকাশমান এই খাতে হঠাৎ করেই আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। কমে গেছে বেচা বিক্রি, খাবার, পর্যটন, টিকেটিংসহ বেশ কয়েকটি খাতের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হাঙরিনাকিডটকম এর প্রধান আহমেদ জানান, সাধারণ ছুটি শুরু হলে হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মানুষ বাইরের খাবার খেতে ভয় পাচ্ছে। ফলে খাবার ডেলিভারি কমে গেছে। এই অবস্থায় তাদের টিকে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনা প্রয়োজন।
ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ সমস্যায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রসার হলেও ই-ক্যাবের ৯২ ভাগ উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। ই-ক্যাবের ১২০০ সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই সময়ে কেবল ১২০-১৫০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পেরেছে। বাকীদের কার্যক্রম ছিল বন্ধ। কিন্তু অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন ঠিকই দিতে হয়েছে। ফলে বিশাল একটি চাপ এসে পড়েছে এই সেক্টরে। প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠানগুলো। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধুমাত্র ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে। যাদের ২৬ শতাংশ নারী।
ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, যারা আগেই পহেলা বৈশাখ ও ঈদের জন্য মালামাল ক্রয় করেছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশী। শুধুমাত্র অফিসভাড়া এবং কর্মীর বেতন বাবদ মাসিক খরচের চাপ রয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। ক্রস বর্ডার ই-কমার্স থেকে যে ১০০ কোটি টাকা বৈদিশক মুদ্রা অর্জিত হতো তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের কাছে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ২৪০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ৬শ কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ চাওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স সেক্টরের বর্তমান ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ই-ক্যাবের উপদেষ্টা নাহিম রাজ্জাক এমপি বলেন, অনলাইন ব্যবসার গতি ডিজিটাল পেমেন্টকে ত্বরান্বিত করবে এবং আমাদের আগামী দিনের ডিজিটাল অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হয়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের মতো সবাই নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের লক্ষ্যপূরণ সহজ হয়ে যাবে।
এফবিসিসিআিই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ই-কমার্সের সম্ভাবনা আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে সহযোগিতা করে আরো বিকশিত করতে পারি। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই খাত। যারা এখনো প্রচলিত পন্থায় ব্যবসা করেন তাদের ই-কমার্সে আসার সময় হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মো. ওবায়দুল আজম বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা তরুনদের জন্য একটা সুযোগ। এই সময়ে স্টার্টআপগুলো বড়ো একটা ধাক্কা খেয়েছে। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলে তারা দেশের অর্থবাজারে বড়ো ধরনের ভূমিকা রাখবে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রচলিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর ঘুরে দাড়ানোর জন্য ই-বাণিজ্য হতে পারে একটা উপায়।
একসময় বিজনেস সেক্টর পুরোটাই ই-কমার্স নির্ভর হয়ে পড়বে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য ঋণসুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। প্রয়োজনে তাদের ঋণ দেয়ার শর্তকে শিথিল করার আহবান জানান তিনি।
প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ই-কমার্স সেক্টরে আগামী বছর ৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরী হবে মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী পিু মুনশি বলেন, যেভাবে মানুষ জরুরী প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ই-কমার্সের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক বছর পর ই-কমার্স, মার্কেটপ্লেস, লজিস্টিক সব সেবা মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থানের জোরালো সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তবে পণ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রেতারা যেনো একবার কিনে বিমুখ না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।