Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিতর্কে বেসরকারি হাসপাতাল

করোনাকালে সাধারণ রোগী ভর্তিতে গড়িমসি রোগী না নিলে লাইসেন্স বাতিল : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনার হটস্পট দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ করোনা নিয়ে আতঙ্কিত-উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি তিনটি হাসপাতালসহ সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলছে। কিন্তু করোনার ভয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই অঘোষিত আধা-লকডাউন করায় অন্য রোগের রোগী ভর্তি করতে চাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়ে যাচ্ছে দেশের হাজার হাজার রোগী। রোগীদের কাছে গলাকাটা চিকিৎসা ও শয্যা ফি আদায়ের মাধ্যমে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য করা বেসরকারি ক্লিনিকগুলো দেশের ক্রান্তিলগ্নে গা বাঁচিয়ে চলার কৌশল কতটা যুক্তিসংগত?

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। করোনার সময় সাধারণ রোগী ভর্তি না নেয়ায় চিকিৎসা বাণিজ্যের নামে গলাকাটা ফিস নেয়া হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়ার দাবি করেছেন। কেউবা লাইন্সেস বাতিলের দাবি করেন। জানতে চাইলে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোর মালিক সমিতির সভাপতি ডা: মো: মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিচ্ছে না এটা ঢালাও অভিযোগ।

সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নমুখি এবং চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গেছে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্যাক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা। সম্পাদশালীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী হলেও দেশের নিম্নবিত্তরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মালিকরা চিকিৎসার নামে রমরমা ব্যবসা করেন।
এ সব হাসপাতালের অধিকাংশতেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতি না থাকলেও গলাকাটা চিকিৎসা ও শয্যা ফি আদায়ের মাধ্যমে রোগীর কাছ থেকে অঢেল অর্থ হাতিয়ে নেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের ক্রান্তিলগ্নে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো গুটিয়ে পড়েছে। করোনাকালে দেশের মানুশের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা করোনায় আক্রান্তের ভয়ে সাধারণ রোগীও ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাাতল-ক্লিনিক অঘোষিত আধা-লকডাউন করে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে গেলে আবার ব্যবসায় নামবে। এজন্য অনেক হাসপাতাল কর্মরত ডাক্তার-নার্স-ওয়ার্ডবয়দের ছুটি দিয়ে দেন। এমনকি তাদের করোনাকালে বেতন না দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেতন দিতে রাজি হলেও বোনাস না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো করোনাকালে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার করায় অনেক রোগীকে এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে ছুটতে হয়।

এমন কয়েকটি ঘটনা মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর সরকারের টনক নড়ে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ১২ মে জরুরি এক নির্দেশনায় জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর এখন আর কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই। কোনো রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কভিড হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই রেফার করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মবিন খান বলেন, লাইসেন্স বাতিল কিন্তু সমাধান না। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর কোনোটির ব্যাপারেই আমার কাছে একটিও অভিযোগ আসেনি যে, তারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে না বা রোগী ভর্তি করছে না। তবে কেউ যদি রোগী ভর্তি না করে থাকেন, তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত না।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা দুই হাজার ২৭০টি। এগুলোতে মোট শয্যা সংখ্যা ৪২ হাজার ২৩৭টি। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এ সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা বাণিজ্য হয়ে থাকে। রোগীদের সেবার নামে চলে অর্থের হরিলুট। কোনো ধরনের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে চালানো হচ্ছে চিকিৎসার নামে রোগীদেরকে হয়রানি; তাতে রোগ নির্ধারণের আগেই রোগী নিঃস্ব হয়ে যায়। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে কোনো প্রকারে ভর্তি হলেই অযথা পরীক্ষার নামে চলে রোগীর আত্মীয়স্বজনের দৌড়ঝাঁপ।

চিকিৎসকের টুকন নিয়ে চিকিৎসকের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পালা। এসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সীমাহীন অর্থের খেসারত দিতে হয়। ধান দেনা জায়গা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা ফি দিয়ে রোগীরা হাঁপিয়ে উঠেন। বছরের পর বছর ধরে চলছে চিকিৎসা নিয়ে ফ্রি স্টাইলে বাণিজ্য। তারপরও করোনার প্রাদুর্ভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর অধিকাংশই রোগী ভর্তি করার বদলে আধা লকডাউন করে রাখা হয়েছে। অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ থাকলেই এসব হাসপাতালে ঘুরেও অন্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীদের ভর্তি করে নেয়া হয় না। ফলে করোনার বাইরে অন্যান্য রোগের আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল সম্পর্কিত বিভাগের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে যুক্ত করার জন্য মালিকদের সাথে আলোচনা করেছি। তাদেরকে অনুরোধ করেছি, যেন করোনাভাইরাস ন্যাশনাল গাইড লাইন অনুসরণ করে রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা করেন। তারা সেটা না করায় সাধারণ রোগীর যেভাবে সেবা পাওয়ার কথা সেভাবে পাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ