Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব

স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে, কমছে প্রকল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় একদিকে ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা, অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ে ধস এই দুই কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবকাঠামো খাতে নতুন করে কোনো প্রকল্প অনুমোদন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। অবশ্য অবকাঠামোতে যেসব প্রকল্প চলমান আছে, সেগুলোতে বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে। শুধু নতুন প্রকল্প নেওয়া যাবে না। ফলে আসছে বছর এডিপিতে অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এসব কথা জানান অর্থ সচিব আব্দুর রউফ।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় চলতি অর্থবছরের জুন নাগাদ যে ৩১৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল, সেসব প্রকল্পের সময় আরো ছয় মাস বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় আলোচনা হয়, চলতি বছরের জুন নাগাদ এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে বাস্তবতার কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। তাই আরো ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ডিসেম্বর নাগাদ করার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য সচিবরা। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। তবে প্রকল্পের সংখ্যা কমছে। সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৩৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) এসব প্রস্তাব উত্থাপনের কথা রয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। গতকালের পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় যেসব বিষয়ে সবাই নীতিগত সম্মত হয়েছে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, করোনার প্রভাবে রাজস্ব আদায় কম হবে। অন্যদিকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজও বাস্তবায়ন করতে হবে। ফলে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আগামী বাজেটে প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাবে। স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়বে। এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী চাইলে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে আরো বরাদ্দ বাড়াতে পারেন।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সরকারের মেগা সাতটি প্রকল্পে ৩৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রূপুপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পে থাকছে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে তিন হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল প্রকল্পে চার হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা এবং দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এসব মেগা প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো, কিন্তু করোনার প্রভাবে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণে আসছে বাজেটে চারটি মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে। অবশ্য তিনটিতে বাড়ছে।

এদিকে গতকালের বর্ধিত সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে এপ্রিল এইসময়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাত শতাংশ কম। করোনার প্রভাবে গত প্রায় মাস সাধারণ ছুটি চলছে। সব উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির। যার প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নেও। অর্থবছরের দশ মাসে টাকার অঙ্কে খরচ হয়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকার মতো। এই বছর সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে খরচ করতে হবে আরো ৯৫ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করতে হবে। যেটি প্রায় অসম্ভব। গতকালের সভায় জানানো হয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে থোক বরাদ্দ বাবদ এক হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। এই টাকায় জরুরি কোনো প্রকল্প অনুমোদনের দরকার হলে খরচ করা হবে। সেটা স্বাস্থ্য কিংবা কৃষি সংক্রান্ত প্রকল্পে। জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা কমছে ১৫৫টি। করোনার কারণে প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প ছিল এক হাজার ৭৪২টি। আগামী বছর তা কমে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৫৮৭টি। ফলে প্রকল্পের সংখ্যা কমছে ১৫৫টি।

নতুন এডিপিতে অবশ্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে পরিববহন খাত। এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১০০ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুত খাত ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা খাত, ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে করোনার কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। আগামী বছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এখাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষি খাতের জন্য আগামী এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এখাতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ