পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘নেতৃত্ব মানে কঠিন সময়েও তোমার টিমকে তাদের (জনগণ) সেবা দিয়ে কিছু অর্জন করার জন্য অনুপ্রাণিত রাখতে পারা’ (ক্রিস হ্যাডফিল্ড)। নেতাদের নিয়ে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের যখন এই উক্তি তখন করোনা যেন বাংলাদেশে পাল্টে দিয়েছে জনপ্রতিনিধিত্বের সংজ্ঞা। ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ এর মতো জনগণকে করোনা সংক্রমণের বিপদে ফেলে রেখে জনপ্রতিনিধরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, জনগণের নেতারা জনপ্রতিনিধি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে প্রার্থীদের ভোটের জন্য ভোটারের কাছে যেতে হতো। ২০১৪ সাল থেকে জনপ্রতিনিধি হতে হলে মানুষের কাছে যেতে হয় না। চেয়ারম্যান, মেম্বার, মেয়র, এমপি হতে এখন জনগণের ভোটের প্রয়োজন না হওয়ায় মানুষের প্রতি জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা নেই।
নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধি এবং এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার হবার দৌড়ে যারা সর্বদা ব্যস্ত হন; বিপদ-আপদে জনগণের পাশে থাকার ওয়াদা করেন; করোনা সংক্রমণ বিপদে তাদের দেখা নেই। লকডাউনে কর্মহীন মানুষ; সবকিছু বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। কেউ জনপ্রতিনিধিদের দেখা পাচ্ছেন না। অথচ নির্বাচনের সময় তাদের জনদরদী হতে দেখা যায়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘নেতা মানে যে অন্যদের মনে আশা জাগিয়ে রাখতে পারে’।
যে প্রক্রিয়ায় ভোট হোক না কেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজ জনগণের সেবা দেয়া। সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন ৪৫৭১ জন। মেম্বার ৪১১৩৯ জন এবং মহিলা সদস্যের সংখ্যা ১৩৭১৩ জন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ৪৯২ জন, সদস্য ৯৮৪ জন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ৬১ জন, সদস্য ৯১৫ জন এবং সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ৩০৬ জন। সারাদেশে ১২টি সিটি কর্পোরেশনে মেয়র, কমিশনার, মহিলা কমিশনার রয়েছে কয়েক হাজার। এর বাইরেও রয়েছে ৩৩০টি পৌরসভা। সেখানে রয়েছেন মেয়র, কমিশনার ও নারী সদস্য। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৩৫০। হিসাব করলে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্যের সংখ্যা ৬২ হাজার ১৮১ জন। এ ছাড়াও ১২টি সিটি কর্পোরেশন, ৩৩০টি পৌরসভা জনপ্রতিনিধি কয়েক হাজার। জাতীয় সংসদে ৩৫০ জন এমপিসহ জনপ্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় পৌনে এক লাখ। এদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরবন্দি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এমন সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগেরও কম। অথচ নির্বাচন এলেই এদের দৌড়ঝাপ বেড়ে যায়; জনগণের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন।
দেশে করোনা সংক্রমণের পর জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রথম আলোচনায় আসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব প্রতাবী গ্রামের রেজান মিয়ার পুত্র মুহিন আহমদ ফোন করে সুলতান মনসুরকে এলাকায় গিয়ে ত্রাণে দেয়ার অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুলতান মনসুর বলেন, ‘এলাকায় গিয়ে আমি কি তোর বোনকে বিয়ে করবো’। মুহিনের সঙ্গে সুলতান মনসুরের ৩ মিনিটির ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও জনসেবার প্রমাণ দিতে টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মানির কৃষকের কাঁচা ধান কেটে সে দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে মিডিয়ায় প্রচার করে ভাইরাল হয়েছেন। একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন এমপিসহ চারজন জনপ্রতিনিধি সুনামগঞ্জের হাওরে ক্যামেরার সামনে ধান কাটার দৃশ্য ধারণ করেও আলোচনায় এসেছেন।
বিপরীত চিত্র রয়েছে। করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের (মাসদাইর, সাব্বির আলম খন্দকার সড়ক) কাউন্সিলর মকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের আত্মমানবতার সেবায় দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। মানুষ যখন করোনা সংক্রমনে মৃত্যুদের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন; তখন তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে করোনায় নিহতদের কবর দিচ্ছেন; হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিজেই মুখআগ্নি্ করে শ্বশানে দাহ করছেন। তার এই মানবসেবার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তিনি বিশ্বমিডিয়ায় খবর হয়েছেন।
চীনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে যখন সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন তখন পহেলা ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২১ মার্চ বাগেরহাট-৩, গাইবান্ধা-৩ ও ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। করোনার মধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন এবং বগুড়া-১ ও যশোর-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের প্রচারণা চলে মাসব্যাপী। ২৯ মার্চ ভোটের কয়েকদিন আগে জনগণের চাপে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে বাধ্য হন। নির্বাচন নিয়ে যাদের এতো আগ্রহ সেই নেতা, নেত্রী এবং নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা করোনায় বিপর্যস্ত জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিরা গেলেন কোথায়? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপিদের অধিকাংশ ঢাকায় এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের নিরাপদে রাখতে ব্যস্ত। যারা করোনায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের কেউ ত্রাণের তালিকা তৈরিতে দলীয়করণের অভিযোগে অভিযুক্ত। কেউ ত্রাণ চুরি করে বরখাস্ত।
দেশে জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে নেতা-নেত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের চার হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। একটি আসনে সর্বোচ্চ পঞ্চাশজন পর্যন্ত এমপি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেয়র এবং ওয়ার্ডে ৫ থেকে ১০জন কাউন্সিলর হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। করোনা সঙ্কটে এদের শতকরা ১০ ভাগ নেতাকে পাশে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কার্যত ‘সরকারের নাচের পুতুল’। সরকার যেমনি নাচায় তেমনি নাচে। মাঝে মাঝে দিল্লিকে খুশি রাখতে বিবৃতি দেয়। আর মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির অবস্থাও প্রায় অভিন্ন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পাঁচ হাজারের বেশি নেতা মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন। এর বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীক দলগুলোর এক হাজার নেতা ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে। এদের খুব কম সংখ্যক নেতা করোনায় নিজ নির্বাচনী এলাকার বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা সংকটে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দলীয় আহবানে সাড়া দেননি বেশির ভাগ নেতাকর্মী।
ত্রাণ চুরি ঠেকানো আর জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সেবার প্রতি অনিহার কারণে আমলাদের মাধ্যমে সরকার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের ৬৪ জেলায় সচিব পর্যায়ের আমলাদের ত্রাণ বিতরণে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্যাঁচে সময়ক্ষেপনের মাধ্যমে ত্রাণ পাওয়া উপযোগী ক্ষুধার্ত মানুষের তালিকা করছেন ধীরগতিতে।
ক্ষেতমজুর সঙ্কটের কারণে হাওড়ে ধান কাটা সংকট সৃষ্টি হলে কিছু জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের টিভি ক্যামেরার সামনে ত্রাণ বিতরণে ও কৃষকের ধান কাটার দৃশ্য ধারণের চিত্র দেখা যায়। কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ এমনকি মহিলা লীগের নেতানেত্রীরা কৃষকের ধান কাটছেন। কলকাতার টিভিরগুলোর ধারাবাহিক সিরিয়াল নাটকের মতো সে দৃশ্য টিভিতে দেখানো হচ্ছে। ফেসবুকে তুমুল প্রচারণা। এ প্রসঙ্গে সুজনের সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় প্রকৃত জনপ্রতিনিধ নির্বাচিত না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের ভোটের জন্য জনগণের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ায় এ অবস্থা। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।