পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসে টালমাটাল বিশ্ব। তারপরও অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। সুরক্ষা নিয়ে অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সময়ের মতো স্বাভাবিক রেখেছে লেনদেন। গ্রাহকদের স্বার্থে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসরে চলছে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাতের কার্যক্রম। অথচ গার্মেন্টস মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে খোলা হয়েছে গার্মেন্ট, দোকান মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে খোলা হয়েছে মার্কেট, সারাদেশের হাট-বাজার-দোকানপাট। গণপরিবহন না চললেও দেশের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিকই হয়ে গেছে অথচ ব্যাংকগুলো তাদের সব শাখা খোলার ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। আর তাই কিছু সীমিত শাখায় গ্রাহকরা সেবা নিতে গিয়ে নানা রকম ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক ব্রাঞ্চ খোলা না পেয়ে অন্য ব্রাঞ্চে গিয়ে লম্বা লাইনসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। যদিও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক শুরু থেকে ঝুঁকির মধ্যে সব শাখা খোলা রেখেছে। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত তাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হননি। পাশাপাশি দেশের অধিকাংশ শাখা খোলা রেখেছে বেসরকারি সিটি ব্যাংক। তবে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংকগুলো এখনো সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চেয়ে থাকছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কি সার্কুলার দিচ্ছে তার দিকে। এতে গ্রাহকরা প্রতিদিনই নানা ভোগান্তির মুখে পড়ছেন। প্রায় দুই মাস ধরে এটা চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ অনলাইন অথবা ওয়ালেটভিত্তিক মানি ট্রান্সফার সেবা বিকাশ দেশব্যাপি তাদের কার্যক্রম সচল রেখেছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা খোলা না থাকায় বিকাশ এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণও বেড়েছে।
এদিকে গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকায় পূর্ণ দিবস খোলা থাকবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখা। লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। রমজান বিবেচনায় অন্যান্য কাজ শেষ করার জন্য সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে ব্যাংক। নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদে ব্যাংকের সব শাখা পূর্ণ কর্ম দিবস খোলা থাকবে। তবে মতিঝিল ও দিলকুশায় অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম নেই। ব্যাংকের অধিকাংশ ফ্লোরেই তালা। গুটি কয়েক কর্মকর্তা অফিস করছেন। এমনকি সাধারণ কাজ চেক ক্লিয়ারিং কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র লোকাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সরকার সবার স্বার্থে লকডাউন দিয়েছে। তাই লকডাইনের মধ্যে কিছুটা সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। যদিও গ্রাহকদে স্বার্থে ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এখন বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লেনদেন চলে। তিনি বলেন, ঈদের আগে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। তারপরও অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ এবং মোবাইল ব্যাংকিং চালু আছে। তবে সরকার যদি ১৬ মে’র পর লকডাউন খুলে দেয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে। সবকিছুই সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
আব্দুর রহমান নামের এক গ্রাহক জানান, মহাখালীতে অবস্থিত কোন ব্যাংকের শাখাই খোল নেই। তাই বাধ্য হয়ে বনানী ও গুলশানে যেতে হয়। কিন্তু ওখানকার গ্রাহকদের ভীড়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে কয়েক ঘন্টা ব্যয় করে সেবা পাওয়া গেলেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, আজ বন্ধ বনানী এলকার ব্রাঞ্চ কাল গুলশানের। এভাবে নানামুখী ঝামেলায় পড়তে হয়।
মহাখালী এলাকায় শাখা বন্ধের ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর করোনার নমুনা পরীক্ষা করায় ঝুঁকি এড়াতেই এখানকার শাখাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও আইইডিসিআর এ মাসের শুরু থেকে তাদের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো আগের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করছে।
জনতা ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, সকল ব্রাঞ্চ খোলার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এই দুর্যোগ এবং সামনে ঈদ হওয়ায় ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়েরই কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের ইচ্ছা আছে সব ব্রাঞ্চ খুলে দেওয়ার। সামনে ঈদ তাই গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এটা সত্য। তবে লকডাউনের কারণে বলা হয়েছে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালাতে। এ জন্য কিছুৃ শাখা ভাগ ভাগ করে খোলা রাখা হয়েছে। আশাকরি আগামী ১৬ মে লকডাউন উঠে যাবে। তাহলে ১৭ মে থেকে আবার ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে।
এনআরবিসি ব্যাংকের এফভিপি মো. রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেছেন, সাধারণ ছুটির মধ্যেই তাদের সব শাখার কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। গ্রাহকরা যাতে কোন ধরণের বিপাকে না পড়েন সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সামনে ঈদ। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঈদের আগ পর্যন্ত সুরক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকদের স্বার্থে ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তাই ব্যাংকগুলোকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সুরক্ষা সামগ্রী, স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং বর্তমান স্থবিরতা দূর করতে দ্রæতই ব্যাংকের সকল শাখা খুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারি : ব্যাংকে নগদ ১৫% বেশি লভ্যাংশ নয়
চলমান করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বার্ষিক লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ট) ঘোষণার নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলধন সংরক্ষণের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। কোনো ব্যাংক এই সীমার বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করে ফেলেছে, সেগুলোর লভ্যাংশের হার যদি এই সীমার বেশি হয়ে থাকে তাহলে তা স্থগিত করে সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা যখনই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা যাবে না। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, (করোনা সংক্রমণে) সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলা করে ব্যাংকগুলো যাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা অবণ্টিত রেখে (কার্যত লভ্যাংশ না দিয়ে) মূরধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য। সার্কুলারে বর্ণিত লভ্যাংশ নীতিমালা অনুসারে নিচের ধাপে লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে-প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফেরাল সুবিধার অধীন নয় এমন বা ২০১৯ সালের জন্য কোনো ডেফেরাল সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যে সকল ব্যাংকের ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ বা তার বেশী মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম, সে সকল ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।