Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের কেনাকাটায় ভরসা অনলাইন

করোনাভাইরাস আতঙ্ক

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসে স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু। ঘরবন্দি মানুষ, বন্ধ রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বভাবিক কাজকর্ম। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সকলকেই ঘরে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরই মধ্যে সামনে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের বড় দুটি উৎসবের মধ্যে এই ঈদেই মানুষ কেনাকাটাসহ নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। রমজানের শুরু থেকেই মার্কেটগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়, রাস্তায় থাকে নাভিশ্বাস যানজট। চলে চাঁদ রাত পর্যন্ত। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উপলক্ষে মার্কেট খোলার অনুমিত দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সংক্রমণে ঝুঁকির কারণে বড় বড় শপিং মলগুলো ঈদ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কেটাবেচা তো আর বন্ধ থাকে না। বিগত কয়েকবছর ধরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠা অনলাইন মার্কেট প্রস্তুত রয়েছে ক্রেতাদের হাতে পছন্দের পণ্য পৌঁছে দিতে। বড় বড় ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের অনলাইন শপ চালু রাখছে। দেশের ই-কমার্স, এফ-কমার্স মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠানগুলোও ঈদকে সামনে রেখে বড় আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।

প্রতি ঈদের মতো এবারও বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ঈদ উপলক্ষে তাদের পণ্যে ছাড়া ঘোষণা করছে। কেউ কেউ দিচ্ছেন ফ্রি ডেলিভারি। ফলে ক্রেতারা সংক্রমণ এড়াতে শপিং মলে না গেলেও ঝুঁকছেন অনলাইন মার্কেট প্লেসে। তাই ঘরবন্দি মানুষ এবারের ঈদের কেনাকাটায় নির্ভর করছেন ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের উপরই।

জানতে চাইলে বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস আজকের ডিল ডট কমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে পণ্য পাঠাচ্ছি। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রচুর অর্ডারও আসছে। তবে সেটা গতবছর ঈদের মতো না। এখনো সময় আছে আমরা আশা করছি গত ঈদের মতো না হলেও কাছাকাছি হবে। ফাহিম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কায় মানুষ বাইরে বের হতে চায় না। মার্কেটে যাওয়ার বিষয়ে অনেকের অনীহা তৈরি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ঢাকার বাইরে কেমন অর্ডার আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরের অর্ডারই বেশি। সাথে পণ্য পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জও বেশি। আন্ত:জেলা যোগাযোগও সমস্যা রয়েছে, সময় বেশি লাগছে।

দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আগে যারা অনলাইনে কেনাকাটার চিন্তা করতো না কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে তারা এখন এই মাধ্যমকে ব্যবহার করবে। ঘরের বাইরে মার্কেটে না গিয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষার জন্য তারা অনলাইন শপ থেকেই পছন্দের পণ্য কিনবে। একইসাথে পরিস্থিতির কারণে বিগত ঈদগুলোতে মানুষ যেমন কেনাকাটার প্রতি আগ্রহী হতো এবার হয়তো ততটা দেখা যাবে না। মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশ কেনাকাটা থেকে বিরত থাকবে বা আংশিক করবে। ডেলিভারির সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক ডেলিভারি কোম্পানি বন্ধ রয়েছে। যে কয়টা খোলা রয়েছে তাদেরও লোকবল সঙ্কট রয়েছে। এজন্য নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ওয়াহেদ তমাল বলেন, এসোসিয়েশন থেকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যারা ব্র্যান্ড শপ করেছে তারা যাতে অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। তাদেরকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের মেম্বার কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছি যাতে তারা ক্যাপাসিটির মধ্যেই অর্ডার নেয়। যতটুকু পণ্য আছে বা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারবে ততটুকুই যেনো অর্ডার নেয়।

ই-ক্যাবের ইনভেস্টমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ফারহা মাহমুদ তৃণা বলেন, অনলাইন পণ্য ডেলিভারির সময় নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক চ্যালেঞ্জ আসছে, কোথা কোথাও বাঁধা দেয়া হচ্ছে। তবে এটি আমাদের জন্য নতুন একটি অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। নতুন অনেক কিছুর সাথেই আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি যা ভবিষ্যতে কাজে দেবে।

এদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) জানিয়েছে, সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকা অবস্থায় পোশাক, বই, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও রেস্তোরাঁর তৈরি খাবার অনলাইনে বিক্রির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনলাইন পোশাক বিক্রেতাদের বিপুল পরিমাণ মজুতের বিষয়ে অবগত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ই-ক্যাব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই নির্দেশনায় ঈদকে সামনে রেখে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য অনলাইন বাণিজ্য অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুসারে রেস্তোরাঁগুলোকে শর্তসাপেক্ষে শুধু খাবারের হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য কিচেন খোলার অনুমতি দেয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনলাইনে অর্ডার করা এসব খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিক্রি ও ডেলিভারি করতে বলা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না, শুধু হোম ডেলিভারির জন্য এই অনুমতি। যেসব ফুড ডেলিভারি কোম্পানি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিধিমালা মেনে চলতে অঙ্গীকারপত্র জমা দিয়েছে, শুধু তাদের ক্ষেত্রেই এই অনুমতি প্রযোজ্য বলে জানা গেছে।

শুধু অনলাইন শপগুলোই নয়, ফেসবুকেও চলছে জমজমাট কেনাবেচা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে পেজ খুলে তাদের পণ্য পরিদর্শন ও বিক্রি করছে। ফেসবুকে ডিজিটাল ঈদ বাজার নামে একটি ইভেন্ট আয়োজন করেছে লিড লাইফ। এই ইভেন্টটি চলবে ১০ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত। এখানে এক পেজেই ছোট ছোট অনেক উদ্যোক্তারা যুক্ত হয়েছেন। ক্রেতারা এক পেজ থেকেই বিভিন্ন উদ্যোক্তার পণ্য দেখতে পাবেন। তারা সেখানে নিজের পণ্য বিক্রি করছে। ঈদ উপলক্ষে ফেসবুক পেজে মেয়েদের পোষাক বিক্রি করছে তৃষাস ক্লোজেট। গ্রামীন চেকও অনলাইন শপের মাধ্যমে এনেছে তাদের বিপুল সংখ্যক ঈদ কালেকশন। আমিন ফুট ওয়ার তাদের জুতা বিক্রি করছে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে।

প্রিয় শপের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, প্রিয়শপ ডট কম ঈদকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি ফ্যাশন পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে। করোনার এই সময়ে গ্রোসারির পাশাশাপি ফ্যাশন আইটেমের জন্য ক্রেতাদের যেনো বাইরে বের না হতে হয়। তিনি বলেন, সংকটকালে পণ্যের দাম নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ থাকে। প্রিয় শপ দামের ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে নজরে রাখে। ক্রেতাদের ন্যায্য দামে সঠিক পণ্য কেনার নিশ্চয়তা দিচ্ছে প্রিয়শপ ডট কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ