Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যাকাতের অর্থ ত্রাণে চলে যাচ্ছে

লাখ লাখ আলেম-হাফেজদের দুর্বিষহ জীবন-যাপন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২০, ৩:৫২ পিএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি থমকে গেছে। উৎপাদন, ভোগ, চাহিদা, জোগান ব্যবস্থাসহ অর্থনীতির সব উপাদান বর্তমানে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ফলে দেশের কর্মক্ষম মানুষ যেমন কষ্টের শিকার হচ্ছেন। একইভাবে সারাদেশে আলেম-হাফেজ মুয়াজ্জিনসহ কওমী অঙ্গনের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় চল্লিশ হাজার মাদরাসা মক্তবের লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারিরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। খোঁদ রাজধানীতেই হাজার হাজার মাদরাসার ছাত্র-হাফেজ এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনরা বাসায় বাসায় টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেকেই টিউশনির স্বল্প আয় দিয়েই সংসারের ব্যয়ভার মেটাতো। মহামারী করোনার কারণে তাদের সব কিছুই এখন বন্ধ। কষ্টের শেষ নেই এসব সাধারণ আলেম পরিবারগুলোর। এছাড়া মাহে রমজানে এসব দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেকটাই এবার যাকাতের অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনা ঝড়ে আকষ্মিকভাবে বেফাকভুক্ত এবং অন্যান্য সকল মাদরাসা মক্তব বন্ধ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়েছেন। রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শত শত মসজিদভিত্তিক নূরানী মক্তব, হিফজখানা ও মহিলা মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারি, মসজিদের মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। আয়-উপার্যনের আর কোনো মাধ্যমও তাদের নেই। কেউ কেউ টিউশনি করে চলতেন তা’ও বন্ধ। সমাজের এ আলেম-হাফেজ শিক্ষকরা কারো কাছে হাত পাততেও পারেন না। শিক্ষক-কর্মচারিরা বাসা-ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না এবং তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। জরুরিভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এসব দ্বীনি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব টিকে থাকা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। একাধিক মাদরাসার ভুক্তভোগি শিক্ষকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
করোনা মহামারী লকডাউনে গত দু’মাস যাবত এসব দ্বীনি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। শিক্ষক-কর্মচারিদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক জরুরি বৈঠক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ত্রাণ কমিটি গঠন করেছে। বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী আজ রোববার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাদরাসার শিক্ষকরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের খেদমত হিসেবে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এতেই কোন রকম সংসার চলতো এ আলেম পরিবারগুলোর। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মাদরাসার শিক্ষকরা দুই-তিন মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছেন না। ভাড়ায় চালিত বেসরকারি মাদরাসাগুলোর পরিচালকরা কয়েক মাসের মাদরাসার ভাড়া দিতে পারছেন না। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার ফোরকানিয়া, বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষক ও পরিচালকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড)সহ ছয়টি মাদরাসা বোর্ডের অধীনে সারাদেশে দাওরায়ে হাদিসের ১২শ’র অধিক মাদরাসাসহ ১৬ হাজার নিবন্ধিত মাদরাসা রয়েছে। অনিবন্ধিত মাদরাসা মক্তব, হিফজ মাদরাসা ও মহিলা মাদরাসা রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে কুরবানীর চামড়া কালেকশন, জনগণের দান অনুদান ও যাকাত তহবিল। মাদরাসাগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের নামমাত্র বেতন দিয়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেত হিমসিম খেতে হয়। ১৫ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী উল্লেখিত মাদরাসা মক্তব ও হিফজখানায় অধ্যায়নরত। মহামারী করোনাভাইরাসের দরুণ এসব মাদরাসাগুলোর আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা প্রতি বছর যাকাতের অর্থ এসব মাদরাসায় দান করেন। প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণের দরুণ বিত্তশালী ব্যক্তিদের অনেকেই এবার যাকাতের অর্থ মাদরাসার এতিম অসহায়দের দান না করে ত্রাণের কার্যক্রমে বিতরণ করেছেন। এতে মাদরাসাগুলো মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিসম্প্রতি কয়েকটি কওমী বোর্ডের অধীনে ৬ হাজার ৬৬৯টি মাদরাসায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষাধিক নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। যদিও এ অনুদান খুবই অপ্রতুল। গত ২ মে যাত্রাবাড়িস্থ বেফাকের প্রধান কার্যালয়ের মজলিসের খাসের বৈঠকে বিভিন্ন কওমী মাদরাসায় দেয়া সরকারের ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার অনুদান প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়া হয়।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর মারকাজুল আজিজ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ফখরুল ইসলাম আজ রোববার ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারীতে মাহে রমজানে কওমী নেছাবের মাদরাসাগুলোর ঘরবন্দি শিক্ষক-কর্মচারি তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছেন। ধার দেনা করে দু’বেলার খাবার যোগাতে অসহায় শিক্ষক-শিক্ষিকা-কর্মচারিদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। লোক-লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না তারা। তিনি বলেন, আমার মাদরাসায় ২২ জন শিক্ষক গত জানুয়ারি থেকে তাদের বেতন দিতে পারছি না। রমজানে ডোনারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, যাকাতের টাকায় ত্রান দিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় মাদরাসা শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার যদি এ সমস্ত মাদরাসার দিকে বিশেষ দৃষ্টি না দেন তাহলে মাদরাসা টিকানো এবং এতিম মিসকিন ও অসহায় ছাত্রদের ভবিষ্যতে পড়ালেখা করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
কামরাঙ্গীরচরস্থ হুসনুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, কওমি মাদরাসাগুলোর একটি বড় আয়ের উৎস হচ্ছে কুরবানীর চামড়া কালেকশন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ চামড়া খাতে ধসের কারণে কওমী মাদরাসাগুলো কল্পনাতিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তদুপরি নতুন করে করোনাভাইরাসের এ সংক্রমণ যেন ’মড়ার উপর খড়ার ঘা।

এদিকে, কুষ্টিয়া থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, করোনাভাইরাসের কারণে কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলার শতাধিক আলেম পরিবার কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকারি বেসরকারি, কোন ব্যক্তি বিশেষেরও কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। মসজিদ-মাদরাসায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে সেবার পাশাপাশি বাড়তি কাজ করেও আয় করতো। যে আয় দ্বারা তাদের সংসার চলতো। কিন্ত করোনার কারণে তাদের সব কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন হক্কানী দরবারের পরিচালক এম খালিদ হোসাইন সিপাহী বলেন, কুষ্টিয়ার শতাধিক আলেম উলামা পরিবারে চরম দুর্দিন চলছে। তারা অনেকেই আল্লাহর উপর ভরসা করে ঘরে বসে আছেন। কর্মবিমুখ ওইসব আলেমরা কারো কাছে কোন করুণা ভিক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের দিকে সকলেরই খেয়াল করা উচিত।



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ১০ মে, ২০২০, ৫:১৮ পিএম says : 0
    তবুও শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১০ মে, ২০২০, ১০:১৫ পিএম says : 0
    All the money belongs to Bangladeshi people, government pm to all the employee they get salary from our money and they live like king whereas we are crying for food and other help.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ১০ মে, ২০২০, ১১:৩৭ পিএম says : 0
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in American Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, Newzealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatory for all the Muslims and Muslimas.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ