Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতীয় পণ্য বিক্রির ফাঁদ

করোনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ব্যবসায়ীরা ঢাকার কিছু মার্কেট খুলছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনা পাল্টে দিয়েছে মানুষের চিন্তা-চেতনা। রমজান এলেই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যে প্রচলন চলে আসছে এবার সেটা তেমন দেখা যায়নি। বরং কিছু বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিনি-সয়াবিন তেলের দাম সামান্য হলেও কমিয়ে দিয়েছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে রমজানে সবচেয়ে বেশি অলঙ্কার বিক্রি হয়। করোনা সংক্রমণ এড়াতে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) সারাদেশের সব জুয়েলারি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ৪ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১০ মে শপিংমল ও বিপনি বিতান চালু করার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী মার্কেট খুললেই করোনা সংক্রমণ বাড়বে এমন আশঙ্কা থেকে মার্কেট-দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুত্রের দাবি ঈদের বাজারে বিক্রির জন্য ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক এসেছে। সেগুলো বিক্রির জন্যই করোনা ঝুঁকির মধ্যেই মার্কেট খোলার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে ভারতীয় পোশাক বিক্রির ফাঁদে পা দেননি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ।

জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, শপিংমলে মানুষের সমাগম বেশি হয়। যেখানে মানুষের সমাগম বেশি, সেখানে করোনা ছড়ায়। লকডাউনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের যারা মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই। আগে জীবন পরে জীবিকা। জীবনই যদি না থাকে, তাহলে জীবিকা দিয়ে কী হবে? তাছাড়া সিপিডির এক জরীপে ৯৬ শতাংশ মানুষ বলেছে করোনার কারণে ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটে যাবেন না।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি ১০ মে দেশের শপিংমল-মার্কেট খোলার সিদ্ধান্তের কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন, দোকান মালিক সমিতির সভাপতির চিঠি পেয়েই শপিংমল-মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, বাণিজ্য সচিবের চিঠি পাওয়ার পর মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে অনেকেই করোনা সংক্রমণের ভয়ে মার্কেট চালু করতে চাচ্ছেন না। তাছাড়া দোকান খোলার প্রস্তুতি সবার নেই।

দেশের ব্যবসায়ী সমাজের এই মানসিক পরিবর্তন দেশপ্রেম থেকেই এসেছে। আর সেটা করতে পেরেছে প্রাণঘাতি করোনা। ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, ঝুঁকির মধ্যে দোকান খুলে নিজে, দোকানের কর্মচারী এবং ক্রেতাদের মাঝে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারি না। বিবেকের এই তাড়না থেকেই দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ আসবে, তখন ব্যবসা করা যাবে।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে ঈদকে কেন্দ্র করে শপিংমল খোলার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবে উৎসাহের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভারতের পোশাক বাংলাদেশের ঈদ বাজারে বিক্রির জন্যই কার্যত এই ব্যস্ততা। দেশের মানুষের জীবনের চেয়ে তাদের কাছে যেন ভারতের ব্যবসায়িক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চীনের উহানে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় এবার ঈদ উপলক্ষ্যে চীনের কোনো তৈরি পোশাক বাংলাদেশে আসেনি। অন্যদিকে ঈদের মার্কেট ধরতে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ কাপড় বৈধ-অবৈধ পথে এসেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছোট ছোট মার্কেটের দোকান রয়েছে এমন অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ভারত থেকে কাপড় এনেছেন ঈদের বাজারে বিক্রির জন্য। ভারতীয় হাজার হাজার ব্যবসায়ী পোশাক-প্রসাধনী নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। তারা ঢাকার ইসলামপুরসহ বড় বড় মার্কেটে ব্যবসায়ীদের বাকিতে পণ্য দিচ্ছেন বিক্রির জন্য। বিক্রির পর টাকা সংগ্রহ করে দেশে ফিরে যাবেন। ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পথে আসা সে কাপড় বিক্রির তাগাদা থেকেই মার্কেট খুলে দেয়ার আগ্রহ। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ করোনা ঝুঁকির মধ্যে ভারতের কাপড়-প্রসাধনি বিক্রির ফাঁদে পা দেননি।

করোনা সংক্রমণের মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের অনেক শপিংমল-মার্কেট ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা নিউ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, মোতালেব প্লাজা, সেঞ্চুরি মার্কেট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর কমপ্লেক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ফুলবাড়িয়াা সুপার মার্কেট, সুন্দরবন সুপার মার্কেট, জাকির প্লাজা, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা, গুলিস্তান পুরান বাজার, বঙ্গ ইসলামী সুপার মার্কেটসহ অর্ধশত মার্কেট খুলবে না। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ী মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে খুলবে কিছু ফ্যাশন হাউস। একই সঙ্গে কিছু মার্কেট চালু হবে। আড়ং এর কিছু শোরুম খুলবে; তবে ক্রেতাদের অনলাইনে স্লট বুকিং দিতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহির আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, রোববার থেকে রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা, গাজী শপিং কমপ্লেক্সে এবং এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলো খোলা হবে।



 

Show all comments
  • Mou Islam ১০ মে, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    গোভক্তির দেশের পন্য বয়কট করুন!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Jalil ১০ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    বাহ! যে যেখানে যাবে যাক আমাদের বন্ধুত্ব ঠিক রাখতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Almamun ১০ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    এতো নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা ,হায়রে বিচক্ষণ সাংবাদিকতা
    Total Reply(0) Reply
  • Nakib Ansarullah ১০ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    এবার মামলা হবে
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ১০ মে, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    সংকটকালে দেশকে বাঁচাতে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা জরুরি। ক্রেতাদের আরও সচেতন হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ১০ মে, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশীয় পণ্য প্রোমোট করার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Rubel khan ১০ মে, ২০২০, ৪:৫১ এএম says : 0
    ভারতীয় পন্য বর্জন করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১০ মে, ২০২০, ৭:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে, ভারতীয় এবং বারমার পণ্য যাহারা আমদানি করিবে এবং যাহারা বিক্রি করিবে। তাহারা মানুষ নামের পশু। ওরা নিকৃষ্ট জাত। জাতীয় বেঈমান হইবে আর যখন মরিবে তখন মরিবে কুকুর মরা। ইনশাআল্লাহ। লন্ডনে আমি একটি কুট বাংলাদেশে দেওয়ার জন্য উয়েস্টফিল্ড শপিং মলে যাই খরিদ করার জন্য যখন দেখিলাম বারমার তৈরি তখন আমি খরিদ না করে মারকেট হইতে লই। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahadat hossain ১০ মে, ২০২০, ৭:৩১ এএম says : 0
    এক কথায় ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১০ মে, ২০২০, ৭:৫১ এএম says : 0
    ভাবতেও খারাপ লাগছে যে, বানিজ্যমন্ত্রী ও সচিব এনারা ভারতীয় কাপড় বিক্রি করার জন্যে বাংলাদেশের মানুষকে বিরাট এক ঝুকির মধ্যে ফেলছে। বাণিজ্যমন্ত্রী দোকানদার সমিতির নাম ব্যাবহার করছেন এটা এই খবরে পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। মন্ত্রী বলছেন সমিতি দোকান খুলতে চাচ্ছে অন্যদিকে সমিতির সভাপতি বলছেন বানিজ্য সচিবের নির্দেশ পেয় দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে আমাদের চোখে ধুলা দেয়ার প্রয়োজন নেই আমি মনে করি। কারন দেশবাসী জানেন ভারতের লাভ সরকারকে দেখতেই হবে। এখন ভারতের লাভ দেখতে গিয়ে যদি জনগণের প্রাণ নাশের সম্ভবনা থাকে তাতে সরকারের কিছুই যায় আসেনা এটাই এখানে বুঝা যাচ্ছে। আমি জানি এটা অতি বাস্তব (ভারতের স্বার্থ রক্ষা) কথা; সাধারন জ্ঞানেই বলে যারা মজুদ করেছেন এই করোনা পরিস্থিতিতে তারা পাশের দেশ থেকেই মজুদ করতে পেরেছেন। অন্য কোন দেশ থেকে ঈদের মার্কেট ধরতে কোন কাপড় আসেনি কারন সেসব দেশ থেকে আসতে হলে বিমান কিংবা জাহাজের প্রয়োজন। আর ভারত থেকে আনার জন্যে মানুষের মাথায় করে বা ভ্যান গাড়ী যথেষ্ট। কাজেই এই লকডাউনের সময় অন্যান্য দেশের সাথে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেইসব দেশ থেকে মালামাল আসতেই পারেনা। এই প্রতিবেদনটা পড়ার পর সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ হওয়া উচিৎ কারন যখন দেশ লকডাউন তখন কিভাবে বর্ডার দিয়ে তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে মাল দেশে প্রবেশ করলো। কিভাবে ভারতীয় মালা মাল দেশে প্রবেশ করে এটা একটা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বড় ধরনের প্রশ্ন নয় কি??? আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে (বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে) নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Masoum ১০ মে, ২০২০, ১১:৫০ এএম says : 0
    This government always tries to established India, If Bangladesh goes to hale they have no any headge,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ