Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেক্সিমকো ও এসকেএফ রেমডিসিভির নমুনা জমা

বাজারজাতকরণে এসকেএফ’র বিভ্রান্তি রাসায়নিক বিশ্লেষণ-স্টেরিলিটি পরীক্ষায় ১৪ দিন লাগবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসকেএফ নিয়ে বিপাকে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের আগেই প্রতিষ্ঠানটি রেমডেসিভির ওষুধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও এটাকে করোনার ওষুধ বলে চালিয়ে দেয়া নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কারণ এটি সরাসরি করোনার ওষুধ নয়; এটি একটি অ্যান্টিভাইরাল। যা প্রথম ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছিল।
তবে তখন খুব একটা কাজ করেনি এই ওষুধ। যদিও এই ওষুধ নতুন মহামারী করোনাভাইরাসসহ কিছু ভাইরাসের পুনঃউৎপাদনের প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে দেয়। ফলে রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে ব্যর্থ হয় ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধের পরীক্ষায় এর কার্যকারীতা ভালো পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওই ওষুধটি কেবল তখনি বাজারজাত করা যাবে যখন নমুনা পরীক্ষায় সেটি উত্তীর্ণ হবে। এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্টে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘জরুরি প্রয়োজনে’ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ উৎপাদনের পর অধিদফতরের গবেষণাগারে তার নমুনা জমা দিয়েছে এসকেএফ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। গতকাল অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমীন জানান, বুধবার বেক্সিমকো আর গতকাল এসকেএফ তাদের উৎপাদিত ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘রেমডেসিভির’ বাজারজাত করার অনুমতি পাবে। তারা অথরাইজেশনের জন্য আবেদন করবে। পরীক্ষার ফলাফল যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে তারা মার্কেটিংয়ের অনুমতি পেয়ে যাবে।

সূত্র মতে, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল লি. বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করে, প্রতিষ্ঠানটি রেমডেসিভির উৎপাদন সম্পন্ন করেছে এবং গত শুক্রবার থেকে বাজারজাত করার প্রস্তুতি চলছে। যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে রেমডেসিভির ওষুধটি তারা প্রথম উৎপাদন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। যদিও এই ওষুধটি উৎপাদনের প্যাটেন্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান গিলিয়াডের। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘ স্বীকৃত স্বল্পোন্নত দেশগুলো এসব প্যাটেন্ট বা সত্ত্ব অগ্রাহ্য করতে পারবে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম উৎপাদনকারী বলার সুযোগ নেই। অপরদিকে তদারকির দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে এখনও তাদের কাছে নমুনাই পাঠায়নি এসকেএফ। তাহলে কিভাবে বাজারজাতে গেল।

মেসার্স এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লি. উৎপাদিত রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন বাজারজাতকরণের বিষয়টি স্পষ্টীকরণ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়েছে, এসকেএফ এখন পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী তাদের উৎপাদিত রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন এর নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অধীন ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে দাখিল করেনি। তারা মৌখিকভাবে জানিয়েছে ১০ মে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে উক্ত নমুনা দাখিল করবে। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে পাঠানো নমুনার পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক পাওয়া গেলে বাজারজাতকরণের জন্য মার্কেটিং অথরাইজেশন সনদ প্রদান করা হবে। মার্কেটিং অথরাইজেশন সনদ প্রাপ্তির পরই প্রতিষ্ঠানটি উক্ত ওষুধটি বাজারজাত করতে পারবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলেছে, মেসার্স এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লি.সহ মোট আটটি প্রতিষ্ঠানকে রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন উৎপাদনের জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে। এসকেএফ মৌখিকভাবে অবহিত করেছে যে, তারা রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন ঔষধটি উৎপাদন করেছে এবং তাদের ল্যাবরেটরীতে ওষুধটির পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতার ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ পাওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর পরিচালক এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, আক্রান্তরদর মধ্যে রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা অন্যদের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এই ওষুধ মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত নয়।

রেমডেসিভির ওষুধ ব্যবহার করেই করোনাভাইরাস আক্রান্তরা সেরে উঠছেন বলে দাবি করেছে অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ প্রস্তুতকারক সংস্থা গিলিড সায়েন্স। সংস্থাটির দাবি, করোনাভাইরাস আক্রান্ত যেসব রোগীকে এই ওষুধ প্রথমে দেয়া হয়েছে তারা আগেই সুস্থ হয়েছেন। তবে, পরে যাদের দেয়া হয়েছে তাদের সুস্থ হতে অনেকটাই সময় লেগেছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, কয়েকটি পরীক্ষা করতে হবে এবং আমরা তাদের পাঠানো সেসব নমুনা বিশ্লেষণ করবো। তিনি জানান, নমুনাগুলোর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে স্টেরিলিটি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়লে সেক্ষেত্রে ১৪দিন মত সময় লাগবে।
এসকেএফ বাংলাদেশের ৮টি প্রতিষ্ঠানের একটি যাদের কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ উৎপাদনের অনুমতি রয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, বেক্সিমকো, বিকন, ইনেসেপ্টা, হেল্থ কেয়ার ও স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস।

এসএকএফ ফার্মাসিউটিক্যালস এর পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ড. মুজাহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেছেন, রেমডেসিভির উৎপাদনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে (শনিবার) স্যাম্পল ও পাঠানো হয়েছে অধিদপ্তরে। সব প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমোদন পেলেই বাজারজাত করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ওষুধটির ডিস্ট্রিবিউশন সাধারণ ওষুধের মতো হবে না। কেবলমাত্র কিছু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউশনেই এই ওষুধ সরবরাহ করা হবে। কোনও খুচরা ওষুধের দোকানে এই রেমডেসিভির পাওয়া যাবে না।

ওষুধের কার্যকারীতা সম্পর্কে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর বিল্লাল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু হাসপাতালে ওষুধটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, খুবই সংকটাপন্ন রোগীর ওপর এটা কাজ করছে। রোগীরা দ্রুত হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং ভাইরাসের ঘনত্ব ওষুধটি কমিয়ে আনতে পারছে। ওষুধটি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ভালো ফল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোনো ওষুধ শতভাগ কার্যকর, এমনটা বলা যাচ্ছে না। তবে রেমডেসিভির ভালো কাজ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ