Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটে

কাতারে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে তথ্য নিবন্ধনের নির্দেশ

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ৪:৪২ পিএম

করোনাভাইরাস মহামারীতে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারে ঘরবন্দি লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। দেশটিতে ফ্রি-ভিসায় এবং ভিজিট ভিসায় গিয়ে এসব অবৈধ কর্মী বর্তমানে ঘরবন্দি হয়ে অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। ধার দেনা করে খাবার যোগার করতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশটিতে গিয়ে অনেকেই এখনো খরচের টাকাও তুলতে পারেনি। যে সব কোম্পানীতে কাজ করতো তা’এখন বন্ধ থাকায় খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে তারা। আজ শনিবার কাতারের দোহা থেকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের জাজিরা গ্রামের প্রবাসী শাহ আলম অরুন এতথ্য জানান। করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে দেশটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারফিউ বলত করা হয়েছে।
এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কাতারের অনেক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি নির্দেশনার কারণে অনেক কোম্পানি কর্মীদের বিনা বেতনে ছুটি দিতে কিংবা চুক্তি বাতিল করে দেয়। সরকারি নির্দেশনায় এসব কর্মীদের খাবার ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। সাধারণত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সরবরাহ করে থাকে। প্রবাসী কর্মীরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়নি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দু’মাস ধরে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জীবন ধারণের অন্য কোনও উপায়ও তাদের নেই। আবার অনেকেই দেশে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও সে সুযোগও পাচ্ছে না। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই নিয়োগদাতা কিংবা দাতব্য সংস্থাগুলোর কাছে খাবার ভিক্ষা চাইছে।
মাত্র ২৬ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে গত কয়েক দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ অভিবাসী কর্মী কাজ করে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই প্রবাসী কর্মী। কাতার সরকারের দাবি বেশিরভাগ সংক্রমণই হাল্কা ধরনের। ফলে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা কম। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে কাতারের কতিপয় প্রবাসী জানিয়েছে, দেশটিতে মহামারীর দরুণ কোনো অভিবাসীরই আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজ-কর্ম সবই বন্ধ। নি¤œ আয়ের অনেক অভিবাসী কর্মীকে খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশি ক্লিনার রফিক জানান, আমার কাছে আর বেশি খাবার নেই। অল্প কিছু চাল আর ডাল আছে। এতে আর কয়েক দিন হয়তো যাবে। এই খাবার শেষ হয়ে গেলে কী হবে আল্লাহপাকই জানেন।
দোহা থেকে প্রবাসী শাহ আলম জানান, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে রয়েছেন অনিবন্ধিত কর্মীরা। এসব কর্মীদের প্রায়ই ফ্রি ভিসা’র কর্মী বলা হয়। তারা স্বল্প মেয়াদী বা অনিয়মিত কাজ করে থাকে। তাদের নিয়মিত নিয়োগকর্তাও থাকে না যারা খাবার বা আবাসনের ব্যবস্থা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম বলেন, অনেকেই ভিজিট ভিসায় এসে দেশটিতে অবৈধ হয়ে ঘরবন্দি রয়েছে। ছোট-খাটো অপরাধের দরুণ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী কারাগারে রয়েছে। এছাড়া বাসায় বাসায় কাজে নিয়োজিত মহিলা গৃহকর্মীরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তাদের অনেকেরই কাজ নেই। প্রবাসী দোহাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অসহায় ঘরবন্দি প্রবাসী কর্মীদের কোনো দেখভাল করছে না বলেও অভিযোগ উঠছে।
রাজধানী দোহার বাইরে শিল্প এলাকাতে বিভিন্ন কারখানা ও কর্মী ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের কর্মীদের কেউ খোঁজ খবরও নিচ্ছে না। কোয়ারেন্টিনে থাকা অভিবাসী কর্মীদের মজুরি নিশ্চিত করতে কাতার সরকার ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্ত শিল্প এলাকার অনেক কর্মী বলছেন, তাদের বিনা বেতনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মধ্যেই কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের দেশটিতে অবস্থানের তথ্য নিবন্ধন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া এই তথ্য নিবন্ধন আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে না করলে কাতারি পরিচয়পত্র (আইডি) ব্লক করাসহ কাতারি ১০ হাজার রিয়াল জরিমানা করা হবে। এ অবস্থায় সব প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই নিবন্ধন করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। ইতোমধ্যে ১০ লাখ মানুষ এই তথ্য নিবন্ধন করেছে বলে জানিয়েছে কাতার সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ