পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ খোলার প্রথম জুমায় গতকাল বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশের মসজিদে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিগত চার জুমা সাধারণ মুসল্লিদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ রেখেছিল। সীমিত সংখ্যক মুসল্লি নিয়েই জামাত আদায় করা হতো। সরকার বৃহস্পতিবার জোহর নামাজ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়।
গতকাল শুক্রবার মসজিদগুলোর প্রবেশপথ এবং অজুখানায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও জীবাণুনাশক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সকাল থেকেই মসজিদ স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে আসবেন।
রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে সরকারি নির্দেশনা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তি ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমায় সলাত আদায় হয়েছে। এসময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান সকল নিয়ম মেনেই ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদের জুমা নামাজে শরিক হন। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বিশেষ করে জুমার নামাজে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, আলাদা আলাদা জায়নামাজ নিশ্চিত করে সকলকে মসজিদে প্রবেশ করানো হয়।
এর আগে আজানের পূর্বেই সম্পূর্ণ মসজিদ কমপ্লেক্স জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়া হয় এবং প্রত্যেক সিঁড়িতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। মসজিদ কমিটির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে এক মিটার ফাঁকা রেখে নামাজ আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটি জানায়, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার সাথে সাথে মসজিদকে জামাত উপযোগী করে তোলা হয়। এছাড়াও মুসল্লিদের জ্ঞাতার্থে বিভিন্ন স্থানে নোটিশ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাত আদায়ের ব্যাপারে সবাই সচেতন ছিলেন।
দুপুর ১২টার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের গেইট খুলে দেয়া হয়। মসজিদের উত্তর গেইটে জীবাণুনাশক বুথ স্থাপন করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দিয়ে এক এক জন মুসল্লি বুথের ভেতর দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। এক কাতার পর পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। অধিকাংশ মুসল্লিই মুখে মাস্ক পরে মসজিদে যান। মসজিদের পূর্ব সাহানেও মুসল্লিদের কাতার ভরে যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় মসজিদে সঙ্কুলান না হওয়ায় বিভিন্ন মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন।
গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুৎবাহ পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকি নদভী বলেন, আলেমদের অনুরোধে সরকার মসজিদ খুলে দিয়েছে। মসজিদ খুলে দেয়া মানেই ভয়ঙ্কর মহামারী করোনাভাইরাস চলে যায়নি। প্রত্যেক মুসল্লিকে নিজ নিজ উদ্যোগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে আসতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে। আপনার জন্য কেউ করোনা সংক্রমণের মুখোমুখি যাতে না হন সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পেশ ইমাম বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে রেহাই পেতে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। মাহে রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা করতে হবে। সমাজের অসহায় গরীব মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাকাতের অর্থ গরীব অসহায় পরিবারের মাঝে সঠিকভাবে বন্টন করতে হবে।
চকবাজার শাহী মসজিদেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের খতীব মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ভয়াবহ মহামারী থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলার রহমতের বিকল্প নেই। তিনি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকলকে মসজিদে আসার অনুরোধ জানান।
রাজধানীর ইসলামবাগ বড় জামে মসজিদে জুমা পূর্ব বয়ানে খতীব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি চার জুমা পর মসজিদে আসার সুযোগ করে দেয়ায় মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, বালা-মুসিবত আল্লাহই দেন এবং তিনিই তুলে নিবেন। বাকি সারাজীবন আমরা নিয়মিতভাবেই যাতে মসজিদে আসতে পারি আল্লাহপাক সে সুযোগ করে দেন। আমিন! দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনী রসুলবাগ জামে মসজিদের খতীব আল্লামা আব্দুল গনি বলেন, রহমতের মাসে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পবিত্র মাহে রমজানের গতকাল দ্বিতীয় জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রামে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সংক্রমণ এড়াতে সরকারের নির্দেশনা মেনে জুমা আদায় করেন নগরবাসী। ইমাম ও খতিবগণ মোনাজাতে করোনার ভয়াবহতা থেকে দেশবাসীকে রক্ষায় মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান। মুসিবত থেকে রক্ষায় বিশেষ রহমত কামনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের শুক্রবার জুমার আজানের আগে থেকেই অনেক মুসুল্লীকে মসজিদমুখী হতে দেখা গেছে। খতিবগণ খোতবা পূর্ব বয়ানের মাঝে মাঝেই করেনা ভাইরাসের ভয়াবহতাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে মসজিদে আসা ও নামাজ পড়াসহ সকলকে অনুসরণেরও আহবান জানান। বেশিরভাগ মসজিদেই করেনাভাইরাস থেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে পানাহ চান মুসুল্লীগণ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গতকাল জুম্মা নামাজে মসজিদে ছিল মুসল্লির ভিড়। মসজিদের মাইকে আগেই ঘোষণা দেয়া হয় জায়নামাজ নিয়ে, মাস্ক পরে ও ওজু করে আসার জন্য। নগরীর হযরত শাহমখদুম (র.) মাজার মসজিদ, সাহেব বাজার বড় মসজিদ, সোনাদিঘী মসজিদসহ মহল্লার সব মসজিদে ছিল মুসল্লিদের লক্ষনীয় উপস্থিতি। নামাজে মহামারী ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে মুনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।