Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাল্টার বাজারে সিন্ডিকেট

রাজধানীতে ৭ ও চট্টগ্রামে ৩ সদস্য ৬০ টাকা কেজি হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনার মধ্যে রোজায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের কদর বেড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টার দাম দ্বিগুণের চেয়ে বেশি করেছে ১০ সদস্যের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিদেশ থেকে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই মূলত মাল্টা আমদানি করে থাকে। এদের মধ্যে ঢাকার আমদানিকারক আছেন ৭ জন। বাকি ৩ জন চট্টগ্রামের। করোনা সঙ্কটের মধ্যে কৌশলে এরা মাল্টার দাম দ্বিগুণের চেয়েও বাড়িয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোজার শুরুতে পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মাল্টা। রোজার মধ্যেই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মাল্টার চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। এই সুযোগে ১০ সদস্যের এই সিন্ডিকেট কারসাজি করে মাল্টার দাম বাড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবারও খুচরা বাজারে মাল্টা ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ঢাকার বাদামতলীর ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন যে সব মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো অনেক আগেই আমদানি করা। কেজিতে এই মাল্টার দাম পড়েছে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
জানা গেছে, ঢাকায় মাল্টা সিন্ডিকেটের সাত জন সদস্য রমজান এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সাতজন হলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, আরিফ, সেলিম, কামাল, করিম, সিরাজ এবং আরিফ (২)। পুরান ঢাকার এই সিন্ডিকেটের কাছে পাইকারি ব্যবসায়ি ও আড়তদাররা জিম্মি। তারা মুখে মুখে যে দাম নির্ধারণ করে দেন সেই দামেই পাইকার বা আড়তদাররা বিক্রি করতে বাধ্য। খুচরা বাজারে গিয়ে সেই দাম আরও কয়েক ধাপ বেড়ে যায়। র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাল্টার এই সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাল্টার লট খালাস করে ঢাকায় এনে মজুদ করে রাখে। ভাড়া করা গুদামে মাল্টাগুলো গোপনে গুদামজাত করে। রমজানের আগে ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারজাত করে। প্রতি বছরই এরা একই কৌশলে মাল্টা বাজারজাত করে থাকে। এবার রমজানের অনেক আগে থেকেই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এই সিন্ডিকেটের পোয়াবারো। এদের কারসাজিতেই তাই সর্বোচ্চ ৮০ টাকার মাল্টা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। ব্যবসায়িরা জানান, রমজানের আগেও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ মাল্টা জাতীয় ফলের দাম ১৫ কেজির কার্টুন প্রতি ১২০০-১৩০০ টাকা দর ছিল। কিন্তু রমযানের কয়েকদিন আগে থেকে বাদামতলীর আড়তদারদের উপর অতিরিক্ত দামে পাইকারি পর্যায়ে কার্টুন প্রতি ২৩০০-২৫০০ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়। আমদানিকারক এবং কমিশন এজেন্টদের চাপে মাল্টার দাম হু হু করে বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ী আড়তের পাইকারী ব্যবসায়ি আশরাফ হোসেন বলেন, এমন নয় যে রমজানে নতুন করে মাল্টার চালান এসেছে। চালান যা আসার তা তো রমজানের অনেক আগেই এসে গেছে। তাহলে তখন ১৫ কেজির কার্টন ১২০০ টাকায় বিক্রি হলে এখন সেই কার্টন ২৫০০ টাকায় কেন বিক্রি হবে। আমদানিকারকরা যা দাম নির্ধারণ করেন তার উপর আমাদের কিছু বলার থাকে না। কথায় কথায় তারা মাল শর্ট বলে হুমকী দেয়। সাফ বলে দেয়, এই দামে নিলে নেন, পরে কিন্তু পাবেন না। আমরা বাধ্য হই বেশি দামে কিনতে। ওই ব্যবসায়ি বলেন, আমরা কিছু টাকা লাভ তো করবোই। সব মাশুল খুচরা ক্রেতা বা ভোক্তার।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে মাল্টা সিন্ডিকেটের সদস্য হলেন, নজরুল ইসলাম, জাকির ও আবুল কাশেম। এই তিনজন মিলে নিয়ন্ত্রণ করে পুরো চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক আগে চট্টগ্রাম রিয়াজুদ্দিন বাজারে জেলা প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর যৌথ বাজার মনিটরিং টিম অভিযান চালায়। সে সময় সেখানকার খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ফলমুন্ডির আড়তগুলোতে আপেল, খেজুর,আংগুর, তরমুজ জাতীয় ফলের পাইকারি দাম স্বাভাবিক থাকলেও মাল্টার দাম দ্বিগুণ হয়েছে। যা ১৫ কেজির কার্টুন ২৩৫০-২৪৫০ টাকা ( কেজিতে ১৬০ টাকাতে) বিক্রি করছে। এটি ১০-১৫ দিন আগেও ১৫ কেজির কার্টুন প্রতি ১২০০-১৩০০ টাকা (কেজিতে ৮০-৮৫ টাকা) দর ছিল। এসময় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং সেনাবাহিনীর টিম রিয়াজুদ্দিন বাজারের কয়েকজন খুচরা ফল ব্যবসায়ী’কে নিয়ে ফলমুন্ডিতে সরেজমিনে অভিযান চালায়। এসময় ফলমুন্ডিতে চড়াদামে মাল্টা বিক্রির জন্য ৫ জন আড়তদারকে মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে, জুলেখা এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা, মেসার্স আজম ট্রেডার্সকে ৩০ হাজার টাকা, মেসার্স এন এম এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা, জে কে ফ্রুটসকে ১০ হাজার টাকা ও মনির এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড দেওয়া হয়।



 

Show all comments
  • Alamin Miah ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশ সব কিছু সিন্ডিকেট চলে এক টাকার জিনিস ৫ টাকা , বাহিরে দেশে সব সময় মাল্টা বাংলা৭০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা ভিতরে উঠা নামা করে
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার হোসেন বকুল ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং আরও কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Amzad Hossain ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আল্লাহ্ কেন যে এই দেশে জন্মদিয়েছেন আমায়, অমানুষদের ভিড়ে আর থাকতে মন চায় না এই দেশে
    Total Reply(0) Reply
  • Azadur Rahman ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    Furnished every trader
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Noman ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এমন কোন জায়গা আছে যেখানে সিন্ডিকেট নাই
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ৯ মে, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    কোনোদিন তো একশ টাকা কেজি ও কিনতে পারলাম না!
    Total Reply(0) Reply
  • Minhaj ৯ মে, ২০২০, ৮:১৮ এএম says : 0
    এই পবিত্র রমজান মাস বরকতের মাস, অথচ এই ব্যবসায়ী লোকজনকে তা কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটেছে, আমি মনে করি সরকার তার কঠিন কঠিনভাবে দেখা উচিত, এবং শাস্তির বিধান রাখা উচিত,
    Total Reply(0) Reply
  • mohi uddin khan ৯ মে, ২০২০, ৯:১৪ এএম says : 0
    ১৫-১৬বছর পেরিয়েগেল মাল্টা কিন্তাছি কিন্তু কোন ১৪০ নিচে পাই নাই হায় আফসোস
    Total Reply(0) Reply
  • Md azad ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৪৪ পিএম says : 0
    Tax কত জানেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ