Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবহার বেড়ে কমেছে গতি

করোনার ছুটিতে ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ২৬ মার্চ থেকেই ছুটি চলছে সারাদেশে। ফলে বেশিরভাগ মানুষই অবস্থান করছেন বাসা-বাড়িতে। তারা সার্বক্ষণিক তথ্য জানা, বিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য নির্ভর করছেন ইন্টারনেটের ওপর। দেশ বিদেশের যে কোন খবর জানা, প্রিয়জনদের সাথে কথা বলা, অফিসের কাজকর্ম করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বিনোদনের জন্য ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার করেই সময় কাটছে ঘরবন্দি মানুষের। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই সময়ে বেড়ে গেছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ি, করোনাকালে বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে (ব্রডব্যান্ড) প্রায় তিনগুণ। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। সাথে সাথে ইন্টারনেট সেবা নিয়ে রয়েছে ভোগান্তির অভিযোগও। বিশেষ করে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট সেবা নিয়ে গ্রাহক অসন্তুষ্টি সবচেয়ে বেশি। ফোরজির কথা বললেও থ্রিজি সেবাও ঠিকমতো পাচ্ছেন না ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। আর জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে থ্রিজি মাঝে মাঝে আসলেও টুজিতেই ইন্টারনেট চালাচ্ছেন তারা। হঠাৎ করেই এক কোটিরও বেশি সংখ্যক গ্রাহক রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ায় প্রস্তুতির অভাবে এবং স্পেকট্রাম সঙ্কটের কারণে চাইলেও গ্রাহকদের কোয়ালিটি সার্ভিস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।

ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, ছুটি শুরু হওয়ার পর অফিস ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে ৭০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ চাহিদা কমে গেছে। তবে বাসা-বাড়িতে বেড়েছে। আগে যেখানে এক হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ চাহিদা ছিল এখন সেটি এক হাজার ৭০০ জিবিপিএসেরও বেশি। তবে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরে এমদাদুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছি, অফিস-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিল কালেকশন হচ্ছে না, বাসা-বাড়ি থেকেও অনেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিল দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু আমাদের ব্যয় ও বেতন তো দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার এই খাতের জন্য ঋণ বা প্রণোদনা কোনটারই ব্যবস্থা না করায় আমরা সঙ্কটে রয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগে অনেক প্রতিষ্ঠান বেতন-বোনাসও দিতে পারবে না।

গত কয়েকদিনে ব্যান্ডউইথের খরচ বেশি বেড়েছে ফেসবুকের ক্ষেত্রে। বাড়তি ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের প্রায় ৬০ শতাংশই বেড়েছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সক্রিয়তার থাকার কারণে। ইউটিউবের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার ও ইমো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ওয়েব টিভি নেটফ্লিক্স এবং হইচইয়ের ব্যবহার বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারও আগের চেয়ে বেড়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটে ডাটার ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ।

তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কিছুটা ভালো সেবা পেলেও মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে প্রতিনিয়তই অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। রাজধানী ও বিভাগীয় শহর ছাড়া অন্যান্য জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে ইন্টারনেটের কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না তারা। ইউটিউব, গেমিং তো দূরের কথা স্বল্প গতিতে ফেসবুকও ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। ঠাকুরগাঁওয়ের সুমন আহমেদ বলেন, শহরের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। ফেসবুকও ব্যবহার করতে পারছি না। যশোরের গ্রামীনফোন গ্রাহক রজিবুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণফোন ইন্টারনেট দিয়ে কথা বলা যায় না, শুধু রিকানেক্টিং বা পুওর নেটওয়ার্ক দেখায়। মাগুরার বাংলালিংক গ্রাহক সোহান জানান, তিনি ঢাকা থেকে ডাটা কিনে নিজ এলাকায় গেছেন, কিন্তু ওই ডাটা কোনভাবেই ব্যবহার করতে পারছেন না। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কুমিল্লায় বায়েজিদ বোস্তামি ও চাঁদপুরের রাজিউর রহমান রাজু বলেন, রবির ইন্টারনেট ভালোই ছিল কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খুব বাজে অভিজ্ঞতা পাচ্ছি।

জানতে চাইলে রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আহমেদ বলেন, আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার ২০-২২ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভয়েস কল কমে গেছে ১৫ শতাংশ। ফলে রেভিনিউও কমেছে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। গ্রাহক সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন। ঈদ বা অন্য সময়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকে এজন্য ক্যাপাসিটি এনহেন্স বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই ছুটি ঘোষণার ফলে সেটি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্পেকট্রামের সঙ্কট তো আছেই। বিটিআরসির কাছে আমরা অব্যবহৃত স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য চেয়েছিলাম কিন্তু এখনো কোন সদুত্তর পাইনি।

ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, বতর্মান সময়ে বাসা-বাড়িতে ভিডিও স্ট্রিমিং বেশি হচ্ছে, ইউটিউব বা ভিডিও কনফারেন্সে যাচ্ছে ব্যবহারকারীরা।
অপারেটরদের স্পেকট্রাম দেয়ার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, করোনার কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মানসম্মত সেবা ঠিক রাখতে কিছুটা কম মূল্যে জিপি স্পেকট্রাম কিনতে চায় আর অন্য তিন অপারেটর বিনামূল্যে চায়। বিনামূলে দেয়া সম্ভব না। তবে জিপির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ