পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন ছিল ২ মে। তার নির্মিত কালজয়ী সিনেমার নাম ‘অশনি সংকেত’। ওই ছবিতে অভিনয় করেন বাংলাদেশের নায়িকা ববিতা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে গার্মেন্টস চালুর পর শপিংমল, বিপণিবিতান, কাপড়ের মার্কেট খুলে দিয়ে দেশের ১৭ কোটি মানুষ যেন ‘করোনা’ সিনেমার অভিনয়ের মধ্যদিয়ে জাতিকে ‘অশনি সংকেত’ উপহার দিতে যাচ্ছি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঈদ সামনে রেখে আগামী ১০ মার্চ থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলবে, সরকারি এমন ঘোষণা সামনের দিনগুলো ঘিরে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। মার্কেট খুলবে এই খবরে মানুষের মনে লকডাউন শিথিল হচ্ছে মানসিকতা তৈরি করছে। ঢালাওভাবে গার্মেন্টস ও কলকারখানা খুলতে শুরু করায় করায় এমনিতেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের আগে মার্কেট খুলতে লকডাউন তথা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। যা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী।
ঈদের আগে শপিংমল ও দোকান খুলে দেয়া প্রসঙ্গে গত ৪ মে সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয়, সারাদেশের দোকানপাট, শপিংমলগুলো আগামী ১০ মে থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এতে আরো বলা হয়, রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার স্বার্থে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। তবে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। বড় শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহন অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। গার্মেন্টস খুলে সংকটের সৃষ্টি করেছি; মার্কেট খুললে লকডাউন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং পরিস্থিতি মহাসঙ্কটের দিকে ধাবিত হবে। প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আবদুল্লাহ বলেন, নিজেদের রক্ষা করতে হলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার কৌশল আরো কার্যকর করতে হবে। সেটা যদি শপিংমল খুলে দেয়ার পর্যায়ে চলে যায় তা হবে মারাত্মক।
প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী ‘ভুল পথে হাঁটছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘শুরু থেকেই আমরা সমন্বয়হীনতা দেখে চলেছি। যেদিন বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ালো সেদিন আমরা সবাইকে অবাক করে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালাম। অথচ মসজিদে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখলাম। হাটবাজার শর্ত দিয়ে হয়! বেঁচে থাকলে জীবনের অনেকবার ঈদ আসবে’।
৫ মে ‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত’ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, শপিংমলগুলো খুললেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে করোনা সংক্রমণরোধে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে কোনো যুক্তিতে শপিংমলগুলো খুলে দেয়া কেন? এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে। শুধু তাই নয়, সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কারণ দেশে করোনা সংক্রমণের কাছাকাছি সময়ে যেসব দেশে সংক্রমণ ঘটছে সেসব দেশে এখনো মার্কেট, শপিংমল ঢালাওভাবে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। এ অবস্থায় শপিংমলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত কতটা বিজ্ঞানসম্মত তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন মানুষ বলছেন, করোনা ঠেকাতে চলমান লকডাউনকে আরও জোরদার করা উচিত। ঘরে বসে থাকা নিম্নআয়ের মানুষ, বিশেষত বস্তির বাসিন্দাদের সামাজিক সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বস্তির বাসিন্দাদের জন্য স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার কিংবা নির্মাণাধীন ভবনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে আগামী দুই সপ্তাহ পর রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে। এতো বিপুলসংখ্যক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।
রমজান ও ঈদ সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে ১০ মে থেকে দোকান-পাট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেট বন্ধ থাকায় প্রচুর সঙ্কটের মধ্যে দিন যাচ্ছে। ১০ মার্চ মার্কেট খোলা হলে ঈদের বেঁচাকেনায় কিছুটা হলেও আমাদের সঙ্কট কাটাতে সহায়তা করবে। তাই এই বন্ধের মধ্যেও আমরা দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে নির্ধারিত সময়ে সরকারের বিধি-নিষেধ মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পারি। সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। আমরা সেটি মেনে চলার চেষ্টা করব। এজন্য আজ দোকানটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। একই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখব। কর্মচারীদের ঢাকায় ফিরতে বলেছি। টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান বন্ধ থাকায় কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া ও বাসা ভাড়া জমে গেছে। ঈদের বাকি যে কয়েকটি দিন আছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা কিছুটা হলেও আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা পাবো।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন বলেন, সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে আগামী ১০ মে থেকে আমরা দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।