Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিমান সংস্থাগুলোর এক মাসে ১০ বিলিয়ন ডলার গচ্চা

শুরুতে কমলেও ভাড়া বাড়বে ৫০ শতাংশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

এয়ারলাইন্স অব আমেরিকা নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার প্রধানের কংগ্রেসনাল জবানবন্দির অনুলিপি অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিমান সংস্থাগুলো তাদের সেবা যথেষ্ট পরিমাণে সীমিত করে আনার পরেও গড়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ১৭ জন এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ২৯ জন যাত্রী তুলছেন।
একই সময়ে বিমান সংস্থাগুলো ব্যয় হ্রাস করে এবং যাত্রীদের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় সম্মিলিতভাবে প্রতি মাসে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের গচ্চা দিচ্ছে- বুধবার বিমান চলাচলের বিষয়ে সিনেটের শুনানির জন্য প্রস্তুত এই শিল্প গ্রুপের প্রধান নির্বাহী নিকোলাস ক্যালিও সাক্ষ্যটিতে বলেছেন। প্রস্তুতকৃত মন্তব্যে নিকোলাস ক্যালিও বলেন, ‘যদিও এই শিল্প বহুবিধ চ্যালেঞ্জকে প্রশমিত এবং সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাটি এই সঙ্কট থেকে মাত্র তিন মাস আগে যে পরিস্থিতি ছিল তার নিছক ছায়া নেবে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই’।
মহামারীটি কার্যত বিশ্বব্যাপী বিমানযাত্রা ৯৫ শতাংশ হ্রাস এবং ৩ হাজারেরও বেশি এয়ারক্রাইফট নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ক্যালিও বলেছিলেন, বিমান সংস্থাগুলোর আরও ১ লাখেরও বেশি কর্মীর কর্মঘণ্টা হ্রাস করা হয়েছে, বেতন কর্তন করা হয়েছে বা আগাম অবসরে পাঠানো হয়েছে।
মি. কালিও কিছু ভোক্তার অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, এয়ারলাইনগুলো বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টাকা ফেরতের পরিবর্তে ভাউচার গ্রহণের জন্য তাদের জোরাজুরি করছে। তারা বলছে, বিমান সংস্থাগুলো যদি একবারে সব বাতিল টিকিটের টাকা ফেরত দেয় তবে তাদের দেউলিয়ার প্রোটেকশন নিতে হবে।
তিনি মার্চ মাসে এই শিল্পকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ঋণ দেয়ার জন্য কংগ্রেসকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই তহবিল ‘খুব অনিশ্চিত ও চ্যালেঞ্জিং গ্রীষ্মকালে স্থিতিশীলতা দিতে সহায়তা করবে’।
এয়ারবিএনবি কমাচ্ছে একচতুর্থাংশ কর্মী
হোম-শেয়ারিং স্টার্ট-আপ এয়ারবিএনবি তার কর্মীদের প্রায় এক চতুর্থাংশ বা ১,৯০০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে। সংস্থার প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান চেস্কি কর্মচারীদের জানিয়েছেন, মহামারী সংঘটিত হওয়ার কারণে এয়ারবিএনবি এ বছরের আয় ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেকের কম করেছে। সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত এয়ারবিএনবিতে ছাঁটাইয়ের আগে ৭,৫০০ জন কর্মী ছিল।
এটি একবারে উড়ন্ত সূচনার পর ব্যয় হ্রাসের সর্বশেষ প্রচেষ্টা, যার বিনিয়োগকারীরা ৩১ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়ন করেছে। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী বিমানগুলো গ্রাউন্ডেড শুরু হওয়ার পর এবং লোকেরা তাদের এয়ারবিএনবি বুকিং বাতিল করায় সংস্থাটি তার ৮০০ মিলিয়ন বিপণন বাজেট কমিয়েছে, নতুন ঋণের ব্যবস্থা করেছে এবং নতুন তহবিলের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। এয়ারবিএনবি জানিয়েছে যে, তারা এ বছর প্রকাশ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
মি. চেস্কি বলছিলেন যে, মহামারীর ফলে ‘বাড়ির কাছাকাছি, নিরাপদ এবং আরও সাশ্রয়ী মূল্যের’ ভ্রমণের বিকল্পগুলোতে আরও মনোযোগ দেয়ার সাথে সাথে এয়ারবিএনবির ব্যবসা পরিবর্তন করতে হবে। ‘আমরা জানি যেহেতু এয়ারবিএনবির ব্যবসা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হবে, তবে যে পরিবর্তনগুলি হবে সেগুলি অস্থায়ী বা স্বল্পকালীন নয়’।
শুরুতে কমলেও ভাড়া বাড়বে ৫০ শতাংশ
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই যাত্রীবাহী প্লেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরইমধ্যে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ফ্লাইট আবার চালু হলে প্রথমে প্লেনভাড়া কমলেও পরবর্তীকালে সেটি অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, প্লেন ফের চালু করতে আগ্রহী এয়ারলাইনগুলো। সে তুলনায় যাত্রী কম থাকায়, ভাড়া কমতে পারে। তবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে প্লেনে মাঝখানের আসন খালি রাখতে বাধ্য হলে, এয়ারলাইনগুলো ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হবে।
বর্তমানে সামাজিক দূরত্বের যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে, তা মানতে হলে মাঝের আসন ফাঁকা রাখতে হবে। এতে ধারণ ক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হবে এয়ারলাইনগুলো।
আইএটিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১২২টি এয়ারলাইনের মধ্যে মাত্র ৪টি এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবে। ওই চারটি এয়ারলাইনেরও আর্থিক লাভ হবে না, শুধু খরচটুকু উঠে আসবে। বাকি এয়ারলাইনগুলোর লোকসান হবে। এ অবস্থায় ফ্লাইট চালু রাখতে হলে ভাড়া বাড়াতেই হবে। যাত্রী না থাকায় এবং বেশিরভাগ ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে লোকসান গুনছে এয়ারলাইনগুলো।
ভার্জিন অ্যাটলান্টিক জানিয়েছে, তিন হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করতে এবং গ্যাটউইক এয়ারপোর্টে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে যাচ্ছে তারা। অন্য এয়ারলাইনগুলোকেও একই পথ বেছে নিতে হতে পারে।
আইএটিএর প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান পিয়ার্স বলেন, ‘কতগুলো এয়ারলাইন লাভজনকভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ শিল্প খুব ক্ষুদ্র হয়ে যাবে।’ ফ্লাইটে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন ব্রায়ান।
এদিকে তার দলের যুক্তি, প্লেনে মাঝের আসন ফাঁকা রাখলেই যে করোনাভাইরাস ছড়াবে না তা নয়। তার বদলে প্লেনে যাত্রীদের সুরক্ষায় মাস্ক পরতে বলা যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।
তবে আশার কথা হলো, ফ্লাইট চালু হলে চাহিদা বাড়ানোর জন্যই ভাড়া কমিয়ে দেয়া হবে। যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ার আগ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তার মানে অন্তত ২০২১ সালের আগে সেটি হচ্ছে না। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ