Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরনো চিত্রে রাজধানী

১০ মে শপিংমল-বিপণিবিতান খুলবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

‘রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ মে শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হবে’ এমন ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে গেছে রাজধানী ঢাকার চিত্র। ১০ তারিখ আসতে আরো ৫ দিন বাকী; অথচ করোনা সংক্রমণ রোধে অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা মহানগর পুরনো চেহারা ফিরে পেয়েছে। সবাই যেন একসঙ্গে বের হয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা রাজধানীতে প্রবেশের মূল পয়েন্ট যাত্রাবাড়ি, গাবতলী, আবদুল্লাহপুরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে। গতকাল এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গাবতলীতে পরিবহন শ্রমিকরা গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করেছে।

উল্লেখ ভারত করোনাভাইরাস ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করে। দেশটিতে লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দেয়ায় গত ২৪ ঘন্টা ১৯৫ জন করোনায় মারা গেছে। ভারতের এই মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে লকডাউন তুলে দেয়ার সময় এখনো আসেনি। আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিকের যাপিত জীবনের চিত্র আর বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের চিন্তা চেতনার চিত্র এক নয়। ঘনবসতিপূর্ণ এবং সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা কম। ফলে আক্রান্তের ভয় বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা তো ভয়াবহ চিত্র।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে সারা বিশ্ব বিপর্যন্ত। প্রায় প্রতিটি দেশ অন্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রায় বন্ধ ব্যবসাবাণিজ্য। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে। ৪৩ জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ)। ৬৩ জেলায় ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ৪৮টিতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছে। মহানগরীর ৪১৩টি এলাকার ১ হাজার ২২৩টি বাড়ি এখন লকডাউন। স্কুল কলেজ মাদরাসা ছুটি। ঘরবন্দি মানুষ। এরই মধ্যে প্রতিদিনই নতুন সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও থেমে নেই। কিন্তু সাধারণ ছুটির ৩৯তম দিনে গতকাল পুরনো রুপেই যেন ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। শুধুমাত্র গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায় সব ধরনের গাড়ি। এরই মধ্যে দেখা যায় যানজটও। এ যেন রাজধানী ঢাকার পুরনো চিত্র।

অদৃশ্য ঘাতক করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতদিন রিকশা ছাড়া প্রায় সব ধরণের যানবাহন বন্ধ ছিল। কিন্তু ৪ মে রংপুর বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ১০ মে থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের মার্কেট ও শপিংমল খোলার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গতকাল রাজধানী পুরনো অবস্থা ফিরে যেতে (স্বাভাবিক) হতে শুরু করে। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলতে শুরু করেছে। আর মানুষ মুখে মাস্ক পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বদলে যেন রাজধানী কয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চল্য।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরতে বের হলে রাস্তায় পুরনো চিত্রই (বিপুল পরিমান যাবনাহন) চোখে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের ভিড়। অনেককেই হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। কেউ রিকশায় যাচ্ছেন। ট্রাক লরি ছাড়াও লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য দেখা গেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু বন্ধ রয়েছে নগরে চলাচল করা পাবলিক বাস, আন্ত:জেলা বাস ও দূরপাল্লার বাস।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে ঢাকার প্রবেশপথে যানজটই চোখে পড়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এতোদিন পর যেন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গলদঘর্ম হচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ি মোড়ে দেখা গেল যানজট। শত শত রিক্সা, সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে যাত্রীর জন্য। একদিকের গাড়ি থামিয়ে রেখে অন্যদিকের গাড়ি পাড় করা হচ্ছে। ফুটপাতে অনেক দোকান খোলা হয়েছে। যাত্রাবাড়ি ছাড়াও বনানী, মহাখালি, বাড্ডা, বিজয় সরণি, রামপুরা, আব্দুল্লাহপুর, ফার্মগেইট ও গাবতলী এলাকায় যানবাহনের চাপ ছিল গত কয়েকদিনের চেয়ে বেশি। মানুষও যেন পথে নেমে পড়েছেন কোমড় বেঁধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূরপাল্লার বাস ছাড়া সবই চলছে মহাসড়কে। গাবতলী দিয়েও প্রচুর যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করছে। আব্দুল্লাহপুরে রীতিমত যানজটের চিত্র দেখা গেছে।

শনিরআখড়ার সিএনজি অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ঘওে চাল নেই, পেটে ভাত নেই, পকেটে টাকা নেই। টিভিতে ত্রাণ দেয়া দেখি কিন্তু দেড় মাসেও এক কেজি পাইনি। ঘরে ২ মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে রয়েছি। পেটের তাগিদে বের হয়েছি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মুনির বলেন, জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আমরাও বলতে চাই, এই ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ থাকার পূর্বাভাস দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। গার্মেন্টস এমনিতেই সংকটের সৃষ্টি করেছে। ১২ মের পর বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।



 

Show all comments
  • টয়া ৬ মে, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    এ কেমন সিদ্ধান্ত? জীবনের চেয়ে ঈদের কেনাকাটা জরুরি? আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দিন ৬ মে, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, আপনি দয়া করে শপিং মল খোলার বিষয়টি পূনঃবিবেচনা করবেন। উন্নত ও বড় বড় দেশ যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে চিকিৎসা দিতে, সেই হিসেবে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতখানি সক্ষম তা নিজেরাই জানি। এক বৎসর ঈদের কেনাকাটা না করলে কি হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • রাকিব হোসাইন ৬ মে, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
    ১৪৪ ধারা, লকডাউন, কারফিউ দিয়ে জনগনকে ঘরে রাখা সম্ভব হয় না, আর কিছু শর্ত দিয়ে খুলে দেওয়া। করোনার সময়ে সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত! এবার হবে জনস্রোত!
    Total Reply(0) Reply
  • বিল্লাল হোসেন ৬ মে, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
    ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে মার্কেট বন্ধ রয়েছে। বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। ভেবেছিলাম দোকান-পাট, মার্কেট ঈদের আগে আর খুলবে না। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের পর মনে হচ্ছে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আবেদ খান ৬ মে, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
    আল্লাহই ভালো জানে আমাদের দেশের কপালে কি আছে
    Total Reply(0) Reply
  • আহমেদ রাজু ৬ মে, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
    নতুন জামা-কাপড় ছাড়াও কিন্তু সুন্দরভাবে উৎসব পালন করা যায়। কিন্তু পরিবারের একজনের করোনা পজেটিভ হলে উৎসব পালন আর হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • জামিল ৬ মে, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
    জনগণ সচেতন না হলে কত মানুষের যে জীবন যাবে সেটা গুনেও কূল পাওয়া যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • পাবেল ৬ মে, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
    মানুষ কি করোনার ভয়াবহতা বুঝে না, নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছে, সেটাই আমার বুঝে আসে না
    Total Reply(0) Reply
  • খলিলুর রহমান ৬ মে, ২০২০, ৪:৪২ এএম says : 0
    নতুন কাপড় ছাড়া ঈদ করা যাবে কিন্তু সেদিন যদি আপনজনের কেউ না থাকে তাহলে ঈদ শোকে পরিণত হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ