বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিনটি ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে ও কালো ধোঁয়ায় প্রায় ৫০ একর জমির ইরি-বোরো ধান সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাররে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, সৈয়দপুর উপজেলার চার নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের দিনাজপুর - রংপুর মহাসড়কের পাশে পশ্চিমে তিন ফসলি আবাদি জমিতে একবারে পাশাপাশি তিনটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এ সব ইটভাটা হচ্ছে আলহাজ্ব মো. মনছুর আলী সরকারের এমএএস ব্রিকস ও তাঁর ছোট ছেলে মো. আনিছুর রহমান সরকারের এআরএস ব্রিকস্ এবং মো. মোস্তফা ফিরোজের এমবিএস ব্রিকস্। আর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উল্লিখিত ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা ওই তিনটি ইটভাটার আশপাশে থাকা জমির মালিকরা প্রতি বছরের মতো চলতি ইরিবোরা মৌসুমেও তাদের জমিতে বিআর-২৮, বিআর- ২৯ সব বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের লাগানো ইরি-বোরো ধানের ক্ষেতগুলো বেশ ভাল হয়েছে। কৃষকদের লাগানো এ সব ধানক্ষেতের কোনটির শীষ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে, কোনটির শীষ বের হওয়া সম্পন্ন হয়েছে, আবার কোনটির শীষে পাক ধরেছে। আর মাত্র কয়েক দিন পরে কৃষকরা তাদের শ্রমে ও কষ্ট এবং অর্থে চাষাবাদ করা সোনালী ফসল ঘরে তুলবেন এমন অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। তাদের স্বপ্ন ছিল চাষ করা ধান ঘরে তুলে তা বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধসহ সংসারের দৈনন্দিন অন্যান্য ব্যয়ভার মেটাবেন। এ অবস্থায় ওই তিন ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের ওই মাঠের আবাদকৃত প্রায় ৫০ একর জমির উঠতি ইরি-বোরা ধান পুরোপুরি পুড়ে বিবর্ণ ও কালো হয়ে গেছে। কৃষকরা অভিযোগ করেন গত ২৪ এপ্রিল থেকে গত ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ওই ধানক্ষেতগুলো পুড়ে যায়। আর ক্রমান্বয়ে এর আশপাশের ক্ষেতগুলো পুড়ে বিনর্ণ ও কালচে হয়ে যাচ্ছে। আর চোখের সামনে উঠতি ধানক্ষেত পুড়ে যাওয়া কৃষকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন এখন।
গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেতগুলো পুড়ে বিবর্ণ ও কালো হয়ে গেছে। ইউনিয়নের মাঝাপাড়ার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক (৩৫) জানান, অন্যের কাছ থেকে ৪৫ শতক জমি বর্গা দিনে ইরি- বোরা ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি জমির মালিককে পুরো টাকায় পরিশোধ করে দিয়েছে। এছাড়াও তার ওই পরিমাণ জমি আবাদে ৭/৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখন ইটভাটার ধোঁয়া তাঁর জমির পুরো ক্ষেত পুড়ে গেছে। এখন তিনি কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
ইউনিয়নের তেলিপাড়ার অপর কৃষক আব্দুল মান্নান (৫৮) বলেন, তিনি তাঁর নিজের ৩৬ শতক জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। তারও পুরো ক্ষেত ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়া পুড়ে গেছে। এখন তিনি কি খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটবেন।
একই অবস্থা এলাকার সরকারপাড়ার কৃষক আইয়ুব আলী সরকার, আব্দুল মালেক,ব াবুল হোসেন, বিপুল চন্দ্র রায়,মোজাহার হোসেন, ধীরেন চন্দ্র রায়, সামিউল বশির, জিয়াউল হক বাবুসহ আরও অনেক কৃষকেরই।
এ নিয়ে কথা বলার জন্য গতকাল দুপুরে এমএএস ব্রিকসের স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব মো. মনছুর আলী সরকারকে তাঁর ইটভাটায় গিয়ে পাওয়া যায়নি।
আর এমবিএস ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমার ইটভাটার ধোঁয়া ওই সব জমির ইরি-বোরা ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আমার ইটভাটায় ইট পোঁড়ানো কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম জানান, এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা উপজেলা অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আসলে ইটভাটার ধোঁয়ায় নাকি অন্য কোন কারণে ওই সব ইরিবোরো ধান ক্ষেত পুঁড়ে গেছে তা নিয়ে আমার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তাদের কাজ শেষে ২/১ দিনের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদনসহ ক্ষতিগ্রস্থ জমি ও কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ইউএনও বরাবরে দাখিল করবো। পরবর্তীতে ইউএনও মহোদয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাসিম আহমেদ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। তদন্তে ইটভাটার কারণে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে থাকলে ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।