পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনায় অঘোষিত লকডাউনে দুই কোটি মানুষ ক্যাশ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। ঋণের সুদও দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা এনজিও’র মাধ্যমে প্রদান করাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্পের যেগুলো অত্যাবশ্যকীয় নয়, সেগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাপকভাবে চলছে দেশে ত্রাণ বিতরণ। ১৫ রোজার পর থেকে বাড়বে দেশের ধনিক শ্রেণীদের যাকাত দেওয়া। এই যাকাতের পরিমানও দেশে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করোনার মধ্যেও এপ্রিল মাসে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। করোনার মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে ঈদ কেন্দ্রিক প্রবাসীদের এই রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। যা করোনার দুর্যোগের মধ্যেও দেশের টাকার প্রবাহকে চাঙ্গা করবে। মহামারীর মধ্যেও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বাড়াবে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরাও আশা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, ঈদের আগে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে একটি বড় অঙ্কের অর্থের প্রবাহ হবে। গতি পাবে দেশের অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থনীতিকে আগের পর্যায়ে নিতে হলে জনগনের স্বার্থে আরও বহুমখী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্য যতোটা স্বাভাবিক রাখা যায়, শিল্প কারখানায় যাতে বেতন-ভাতা দেওয়া যায়, কর্মসংস্থানে যাতে বড় ধরণের ক্ষতি না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করছে তাদের আয় নেই। তারা যাতে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে অর্থের প্রবাহ বাড়ার কারণে অর্থনেতিক কর্মকান্ডে গতি স্বাভাবিকভাবে ফিরে না আসলেও গতি থাকবে। স্থবির হয়ে পড়বে না। তাই বর্তমান পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য সার্বিকভাবে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন শেখ ফজলে ফাহিম।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অর্থনীতির ভাষায় দুটো বিষয় একটি কৃচ্ছতা সাধন। অন্যটি হলো- অর্থনীতির মধ্যে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্যোগের সময়ে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে তিনি মেগা প্রকল্প যেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হচ্ছিল সেটা কিছুটা শ্লথ রেখে দেশের স্বার্থে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখানে সবচেয়ে বড় কথা যেখানে প্রয়োজন সেখানে এবং দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগন থেকে সবার সহযোগীতা একান্ত কাম্য। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এসব প্রংসশনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই। তিনি খুবই দুরদর্শীতা দেখিয়েছেন। কোন কিছু বলার আগেই তিনি নিজ থেকে দেশের স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এগুলো অবশ্যই মহৎ উদ্যোগ। তিনি চাচ্ছেন দেশের অর্থনীতি আবার ঘুড়ে দাড়াক। আবার তার নেতৃত্বে দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করা যায় সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনে বিপাকে পড়েছে দেশের প্রান্তিক মানুষ। আয়ের পথ বন্ধ মানুষগুলোকে সরাসরি সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই কোটি মানুষকে (৫০ লাখ পরিবার; পরিবার প্রতি চারজন) সরাসরি নগদ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ওেয়া হয়েছে। প্রতি পরিবার নগদ দুই হাজার ৪০০ টাকা করে পাবেন। পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদারক করছে বলে জানা গেছে। এদিকে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বা ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এবার তিন হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এ তহবিল থেকে এনজিওগুলো মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে অর্থায়ন নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ না বলে সুদ কত হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। অন্যথায় এনজিওরা বিপাকে ফেলবে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। আয় উৎসারি কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা এবং যৌথ প্রকল্পের আওতায় গঠিত গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক ভিত্তিতে ঋণ আদায় করবে। আর ব্যাংকগুলো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থ আদায় করবে।
ঋণ আদায়ের সব দায়-দায়িত্ব ও ঝুঁকি সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং অর্থায়নকারী ব্যাংককে বহন করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ডসহ মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১ বছর। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ হবে গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ২ বছর। আর স্কিমের মেয়াদ হবে ৩ বছর।
এছাড়া বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিতকরণ ও গতিশীল রাখার লক্ষ্যে এপ্রিল ও মে এই দুই মাসের ঋণের সুদও স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনাভাইরাসের কারণে ঋণ আদায় না হলেও তা খেলাপি করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এর ফলে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাদের আপাতত এই দুই মাসের সুদ গুনতে হবে না। এর আগে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, বিদ্যমান করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু স্থবির হয়ে আছে। তাই ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কীভাবে এর সমাধান করা যায়, সেটি আমি দেখব। একই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এর প্রেক্ষিতেই এই সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা উচ্ছ্ব্সিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এর ফলে কিছুটা হলেও তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। একই সঙ্গে ক্ষতি সামাল দিতে সুদ মওকুফ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা প্রয়োজন হবে। তা না হলে তারা ক্ষতি সামাল দিতে পারবেন না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর অবশ্য এই প্রণোদনার সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছেন। সেন্টার ফর পলিসি (সিপিডি) ফেলো প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন যেন জটিল না হয় তার ওপর জোর দিয়েছেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।