Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরেন্দ্রে ধান কাটা শুরু

শ্রমিক সঙ্কটে কৃষি বিভাগ দিয়েছে ৭০টি ধান কাটার মেশিন সরকারিভাবে ধান কিনতে কৃষকদের তালিকা তৈরি হয়নি

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

ওকি গাড়িয়াল ভাই! কত রব আমি পন্থের পানে চাইয়া রে....। উত্তরবঙ্গের সেই জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গানের গাড়িয়ালদের কণ্ঠে এখন বিরহের সুর নেই। তাদের কণ্ঠে এখন ফসল তোলার গানের আনন্দ। রাজশাহী অঞ্চলের মাঠে মাঠে দুলছে বোরো ধানের সোনালি শীষ। পাকা বোরো ধানের বিস্তীর্ণ মাঠ সোনা রঙে সেজেছে। বাম্পার ফলনের স্বপ্ন কৃষকের চোখে। তবে স্বপ্ন ভঙ্গের শঙ্কাও আছে। গত ক’দিন ধরে আবহওয়া চোখ রাঙ্গাচ্ছে। বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। হয়েছে বর্ষণ। অনেক বিলের নিচু জমিতে পানি জমে গেছে। তাই ধান কেটে ঘরে তোলার শঙ্কাও তাদেরকে তাড়া করছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নিচু এলাকার জমির ধান কাটা। অন্যান্য উঁচু জায়গার ধান কাটার চলছে প্রস্তুতি। আবহাওয়ার পাশাপাশি লকডানের কারণে শ্রমিক সঙ্কটও কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। 

কৃষি বিভাগ বলছে, রাজশাহীসহ নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ অঞ্চলে পনের লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে আরো পাঁচ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আল্লাহপাক যেন কৃষকের ক্ষেত ভরিয়ে দিয়েছেন। কৃষকরা বলছেন, আল্লাহর রহমত। প্রার্থনা, কটা দিন ঝড়বৃষ্টি না হয় আর ঠিকমত ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।
কৃষি বিভাগ শ্রমিক সঙ্কটের মুখে এবার প্রথম চারধাপে বোরো ধান কাটার জন্য ৭০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর ও দশটি রিলার মেশিন দিয়েছে। আগের মওসুমের প্রায় আড়াইশো মেশিন রয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে ধান কাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অন্য পেশার মানুষ যারা রয়েছেন তাদেরও ধান কাটার কাজের সাথে সম্পৃক্ত হবার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানান, নাটোর ও নওগাঁর অধীনে চলনবিল ও রাজশাহীর তানোর, বাগমারার বিল এলাকার ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধান কাটতে বিলম্বে হচ্ছে। কারণ আবাদ ছিল বিলম্বিত। আলু তুলে তারপর তারা বোরো আবাদ করেছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমিতে বর্ষণ হলে ধান ডোবার সম্ভাবনা নেই। তবে ঝড় হলে ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। দেশজুড়ে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের তোড়জোড় শুরু হলেও রাজশাহী অঞ্চল পিছিয়ে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি কৃষি অধিদপ্তর। ফলে শুরুতেই খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয় করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য বিভাগ বলছে, দেশে ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগস্ট পর্যন্ত। চলতি মওসুমে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন। যা সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৫ দশমিক পঁচিশ শতাংশ মাত্র। ফলে উৎপাদিত ধানের একটা বড় অংশ থেকে যাবে কৃষকের হাতে। বাধ্য হবে ফড়িয়া দালালদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে। রাজশাহী অঞ্চলের খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবির বলেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। সাথে সাথে ধান কেনাও শুরু হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রাজশাহীতে বোরো ধান কৃষকের ঘরে ওঠে খানিকটা দেরিতে। তাই কৃষকের তালিকায় একটু বিলম্ব হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ