Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নিজের নামে ক‌রে‌ছেন ভিজিডি কার্ড, প্রতিবেশীদের কার্ডও তার কা‌ছে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ৮:০৩ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংরক্ষিত আসনের একজন মহিলা ইউপি সদস্য নিজের নামে দুস্থ নারীদের ভিজিডি কার্ড করেছেন। আর খোদ ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যের নামে সেই কার্ড ইস্যু করেছেন।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্যের (চাল) ভিজিডি কার্ড নিয়মবহির্ভূত নিজ নামে করে নিয়েছেন। তার কার্ড নম্বর-০৬।

 

এছাড়া তিনি এক ভিজিডি কার্ডধারীর কার্ড চার বছর ধরে নিজের কাছে রেখে ওই কার্ড ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করে আসছেন। ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে অপর এক ভাতাভোগী নারীর চাল আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

কোনো জনপ্রতিনিধির নামে ভিজিডি কার্ড দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশে এভাবে কার্ড দিয়ে চাল উত্তোলন করে আসছেন।

ইউপি সদস্য শারমিন সুলতানার প্রতিবেশী বৈরাগীর চর এলাকার জামাল সরদার। বয়স পঞ্চাশের বেশি। ২০১৬ সালে তার নামে খাদ্য অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যের (ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড ইস্যু করা হয়। তবে সেই কার্ড চার বছর ধরেও হাতে পাননি তিনি এবং এ সম্পর্কে তিনি এতদিন কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ওএমএস, ভিজিডি ও ত্রাণের বিষয়ে অনিয়ম ঠেকাতে সেনাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হচ্ছে এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল জামাল সরদারের বাড়িতে গিয়ে কার্ড বুঝিয়ে দিয়ে আসেন ওই ইউপি সদস্য।

জামাল সরদার বলেন, চার বছর আগে ওএমএস´র কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ওই ইউপি সদস্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমার কার্ড হয়নি। এরপর গত মাসের ১৫ তারিখ সকালে এসে আমাকে কার্ড দিয়ে গেছেন। চার বছর ধরে তিনি আমার কার্ড দিয়ে চাল তুলে নিয়েছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

মরিচা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের অভিযোগও একই রকমের। তার নামে ২০১৯ সালে ভিজিডি কার্ড হলেও তিনি তা হাতে পাননি। তার অভিযোগ, এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল উঠানো হয়েছে তার নামের কার্ড ব্যবহার করে। তার ভিজিডি কার্ডের নম্বর-০৪।

মানছুরা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা আমাকে ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার কথা বলেন। তার কথা অনুসারে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেই। এরপর কার্ডের জন্য বহুবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও কার্ড হয়নি বলে জানিয়ে দেন চেয়ারম্যান শাহ আলমগীরসহ পরিষদের অন্য সবাই। তবে তার ওই কার্ডে গত ১২ মাস ধরে টিপসই দিয়ে ভিজিডির চাল তোলা হয়।

সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে এক বছর পর মানছুরা খাতুনের নামে ইস্যুকৃত কার্ডটি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও এভাবে ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সব সদস্যই ভাগবাটোয়ারা করে নিজেদের নিকটাত্মীয় ও একই পরিবারের লোকজনদের কার্ড দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য শারমিন সুলতানা বলেন, আমার নামে মহিলা অধিদপ্তরের ভিজিডি কার্ড রয়েছে। আমি নিয়মিত চাল পাই। আমি অসহায় এবং বিধবা নারী, আমার উপরে চেয়ারম্যানের নেক নজর আছে। তাই সেই কার্ড করে দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন আলী জানান, গত কয়েকদিন আগে জামাল সরদারকে এক বস্তা চাল আর কার্ড দিতে যান এই মহিলা ইউপি সদস্য। এসময় জামাল সরদার কার্ডটিতে একাধিক টিপ স্বাক্ষর দেখে কার্ডটি নিতে অস্বীকার করেন।

এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তিনি নিজের স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকটাত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও ওএমএস এর কার্ড করেছেন।

অভিযোগ স্বীকার করে নাসির উদ্দীন বলেন, আমার ভাই, ভাইয়ের বউয়ের নামে ভিজিডি কার্ড আছে। তবে আমার নামে নেই। আমার পরিবারে তিনজনের নামে কার্ড রয়েছে আমার স্ত্রী, আমার মা এবং আমার বিধবা বোন। চেয়ারম্যান ভাগ করে দিয়েছিল, আমরা সেগুলো করে নিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ-আলমগীর বলেন, ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডি কার্ড করা যাবে কিনা সেটা আমার জানা ছিল না। অনেক মেম্বারই ওই সময় না বুঝে এমনটি করেছেন।

তিনি বলেন, এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মেম্বারই গরিব। এদের এসব নিয়ম-অনিয়ম দেখতে গেলে প্রায় সবারই সমস্যা হয়ে যাবে। খুঁজতে গেলে প্রায় সবাই ফেঁসে যাবে। যেমন ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাসির মেম্বারের ৪টা ভিজিডি কার্ডের মধ্যে ৪টাই তার পরিবারে। তার স্ত্রী, মা, ভাবির নামে ও বোনের নামে। আমার ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বারের ছেলের বয়স ১০ বছর। কিন্তু তার স্ত্রী মাতৃত্বকালীন ভাতা তোলেন। তার ভাবির নামেও করেছেন কার্ড। এমন অনেক আছে।

দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারী নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার কোনো নিয়ম নেই। যতই অসচ্ছল হোক এটি আইনসম্মত নয়। আমাদের নির্দেশনা দেয়া ছিল, যেন এ ধরনের অনিয়ম না করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ