পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’ শিল্পী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ১৯৭৪ সালে গেয়েছিলেন। গানটি রেকর্ডের সাড়ে চার দশক পর এখন পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রতিটি সকল শুরু হচ্ছে ‘রাতের চেয়েও অন্ধকার’ করোনাভাইরাস আতঙ্ক দিয়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে করোনা মানবজাতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে ঠিকই; কিন্তু কিছুই দিচ্ছে না! ডোনাল্ড ট্রাম্প আর একজন নৌকার মাঝিকে কি করোনা এক কাতারে নিয়ে যায়নি? করোনা ঠেকাতে মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন ও সংক্রমন পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছে; সেই উদ্ভাবনে কি বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সামিল হয়নি?
গণস্বাস্থ্য টেস্টিং কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট বন্ট’ উদ্ভাবন করেছে। ওয়ালটন কোম্পানি বিশ্বমানের পিবি ৫৬০ মডেলের স্পেসিফিকেশনে িব্লিউপিবি ৫৬০ ভেন্টিলেটার উদ্ভাবন করেছে। এটা কি জাতি হিসেবে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠার সুযোগ নয়?
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’ (ভারতচন্দ্র রায়)। সত্যিই প্রাণঘাতী করোনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। করোনা অন্ধকার যুগের মধ্যেই আমরা চেষ্টা করলেই খুঁজে পেতে পারি নতুন আলোর দিশা। বাংলাদেশের মানুষ পারে না এমন কাজ কি আছে?
আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তলাবিহনী ঝুড়ি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছি। ক্ষুধা-দারিদ্র-পুষ্টিহীনতাকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের দরবারে মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হতে পেরেছি। মানুষ তার প্রয়োজনে এগুলো করেছেন।
রাজনৈতিক হানাহানি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যেই দেশের কামার-কুমার-তাঁতী-জেলে-ক্ষেতমজুর-কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা মিলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছি। বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত দেশের তালিকায় উন্নীত হচ্ছি। প্রতিটি সেক্টরের মানুষ নিজ উদ্যোগেই দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলে আরো এগিয়ে যেত দেশ। করোনার অন্ধকার যুগে এখন সবকিছু বন্ধ। ঘরে বসে থেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে সময় পার করছি। এই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত।
স্প্যানিশ দার্শনিক ব্যালটাজার গার্সিয়ান বলেছেন, ‘যার হাতে কিছুই নেই, তার হাতেও সময় আছে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ’। আবশ্যই করোনায় ঘরে বসে থাকা সময়কে আমরা জীবনের সম্পদে পরিণত করতে পারি। জাতি হিসেবে আমরা পারি না এমন কোনো কাজ নেই।
এক সময় আমরা গোশতের জন্য ভারতের গরুর ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। চায়ের ক্ষেত্রেও তাই। এখন আমাদের কৃষকরা নানান পন্থায় গরু প্রতিপালন করে দেশের গোশতের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তেঁতুলিয়ায় ধানের জমিতে চা উৎপাদন করছেন। দুধ এবং আমিষের অভাবে লাখ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগতেন। এখন দুধ, ডিম, মাছ উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।
আমাদের হ্যান্ডিক্র্যাফট, সতরঞ্জি সারাবিশ্বে সমাদৃত। এখনো কিছু কিছু পণ্যের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল; সে জন্য দায়ি রাজনৈতিক বিরোধ এবং আমলাতন্ত্র। গত বছর বিশ্ব বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। আমরা পেঁয়াজের বিকল্প চিভ আবিস্কার করেছি।
ওষুধ শিল্পে সমৃদ্ধ হচ্ছি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু বিদেশে যায় না; সাথে যায় ওষুধ, হস্তশিল্পসহ রকমারিপণ্য। মসলিম কাপড় তৈরি বন্ধ করতে ইংরেজরা শ্রমিকদের হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছিল বটে; মেধাকে ধ্বংস করতে পারেনি। আমাদের তৈরি জামদানি এখন সারাবিশ্বে সমাদৃত। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে করোনার অন্ধকার যুগের সময়কে কাজে লাগানো উচিত। যে যার অবস্থান থেকে সময়কে কাজে লাগানো যায়। ব্যস্ততার কারণে এতোদিন কর্মজীবী পিতামাতা সন্তানদের সময় দিতে পারেননি। এখন ঘরে বসে সন্তানকে কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন।
দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর মোবাইল গেইমে আসক্ত। নিজে বই পড়ে সন্তানদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে মোবাইল গেইম থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করতে পারেন। শিল্প সাহিত্যে আমরা সমৃদ্ধ। কিন্তু ইদানিং কিছু পরমুখাপেক্ষী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী দেশজ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বদলে কোলকাতার সাহিত্য চর্চার প্রতি বেশি আশক্ত।
রাজধানীর শাহবাগের মোড় আর আজিজ সুপার মার্কেটে সন্ধ্যার পর আড্ডা আর চারুকলার ভিতরে ছিঁলিম ফুঁকিয়ে নিজেদের মেধা-প্রতিভাকে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে এক ঝাক কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিসেবি। দেশের সন্তান হয়েও তারা গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে দূরে। করোনায় ছিঁলিম ফুঁকানো বন্ধ। কবি-সাহিত্যিকরা ঘরে ঘরে।
এ সময় নিজেরা ভাল ভাল বই পড়ে ক্ষুরধার লেখনির জন্য সমৃদ্ধ হতে পারেন। বড় পড়লে স্ট্রেস কমা ছাড়াও জ্ঞানের ভান্ডার বৃদ্ধি, শব্দভান্ডার বিস্তার, স্মৃতি উন্নয়ন, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার দক্ষতা বৃদ্ধি, চিন্তার উৎকর্ষতা বাড়বে। এতে শুদ্ধ করে, সুন্দর শব্দ চয়নে লিখার দক্ষতা তৈরি হবে। মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি নিজেও শব্দহীন নির্মল বিনোদন পাবেন। আবার দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে। সিনেমা-নাটকে কোলকাতা কেন্দ্রিকতা কমে যাবে।
আইরিশ লেখিকা মারিয়া এজগ্রোথ বলেছেন ‘আমরা যদি সময়ের যত্ম নিই, তবে সময় আমাদের জীবনের যত্ম নেবে’। যে জাতি ভাষার জন্য যুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে; সে জাতি করোনাভাইরাসের অন্ধকার যুগে হতোদ্যম হতে পারে না। ভয়াবহ এই করোনাভাইরাসে ঘরে বসে থাকা সময়গুলো কাজে লাগালে আগামী দিনের জীবনে জ্বালাতে পারে আলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।