Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন তিনদিনেই বন্ধ

খুলনা স্টেশনে এক কেজি বেগুন নিয়েও কেউ আসেনি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

চালু হওয়ার তিনদিনের মধ্যেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রেলের পার্সেল এক্সপ্রেস সার্ভিস। তিনটি ট্রেনের মধ্যে একটি ঢাকা-খুলনা রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও গত শুক্রবার চালুর প্রথমদিন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ট্রেনটি একবারও যাত্রা করতে পারেনি। এদিকে, তিনদিন চললেও আজ সোমবার থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটের পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন আর চলবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মাত্র তিনদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেল সদ্য চালু হওয়া পণ্যবাহী ট্রেনের এই বিশেষ সার্ভিস। কারোনার এই সময় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১ মে থেকে চালু করা হয় পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন। উদ্দেশ্যে ছিল, এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য কোনো মধ্যস্বত্ত¡ভোগী ছাড়াই সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা নায্য দাম পাবেন অন্যদিকে খাদ্য সংকটও কাটবে।

প্রথম দিন খুলনা থেকে একদিনও চালানো সম্ভব হয়নি কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষ এই ট্রেন সার্ভিস। খুলনা স্টেশনের ম্যানেজার বুলবুল জানান, কৃষক, খামারি কিংবা প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল ধান চাল পরিবহনের জন্য পার্সেল এক্সপ্রেস চালু করা হলেও খুলনা স্টেশনে এক কেজি বেগুন নিয়েও কোনো কৃষক আসেনি। তিনদিন অপেক্ষা করা হয়, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পণ্যপরিবহনে চাষি তো দূরের কথা অন্য কোনো ব্যবসায়িক পণ্য নিয়েও স্টেশনে আসেনি ট্রেন। যে কারণে ৩ মে খুলনা ঢাকা রুটের বিশেষ পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তিনি জানান, স্থানীয় খামারি কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীরা জানেনই না এই ট্রেন সম্পর্কে। এজন্য কেউ আসেনি পণ্য নিয়ে। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরও স্থানীয় পণ্য উৎপাদনকারীদের সঙ্গে পূর্বেই আলোচনা করার দরকার ছিল।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চালু হওয়ার আগে এই সার্ভিস সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা হয়নি। ছিল না কোনো প্রচার প্রচারণা। মানুষ আগ্রহী হয়নি খাদ্যপণ্য কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনে। তাই বাধ্য হয়েই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এই পার্সেল ট্রেনের বিশেষ সার্ভিস। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছিল নতুন চালু হওয়া পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনে। তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনার এই সময় খাদ্য সংকট দূর করতে বা কৃষকের নায্য মূল্য নিশ্চিতে এই ট্রেন চালু হলেও কৃষকের সাড়া না থাকায় তিনদিনের মাথায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩৪৬ কিলোমিটার রেলপথ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছাতে তেল খরচ হয় প্রায় ৬০০ লিটার। এভাবে আপ-ডাউনে তেল পুড়ে প্রায় ১২০০ লিটার। রেলের ইঞ্জিনে ব্যবহৃত তেল সাধারণ ডিজেল নয় ইঞ্জিন কার্যকর রাখতে এখানে ব্যবহার করা হয় হাই পারফরমেন্স (এইচপি) ডিজেল। এই ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৭০/৭২ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের তেল খরচ বাবদ গুণতে হয় ৮৪/৮৬ হাজার টাকা।

আর একটি পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ট্রেন পরিচালক ২ জন, রানিং পার্সেল ক্লার্ক ১ জন, লোকমাস্টার ও সহ- লোকমাস্টার ২ জন ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৭/৮ জন সদস্য থাকে। এতে মোট স্টাফ থাকে অন্তত ১৩/১৪ জন। রেলের নিয়িম অনুযায়ী, রেল কর্মাচারীদের মাইলেস ও আর এনবির সদস্যদের টিএ প্রদান করা হয়। এই ১৩/১৪ জন কর্মচারীকে যাওয়া আসা বাবদ দিতে হয় ১৮/২০ থেকে হাজার টাকা। তেল খরচ ও রেলওয়ে কর্মচারীদের মাইলেস প্রদান করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনে আপ ডাউনে খরচ হয় ১ লাখেরও বেশি। কিন্তু এই ট্রেন থেকে প্রতিদিন আয় হয়েছে মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা। তিনটি পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেকটি ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে চলাচলের কথা থাকলেও তিনদিন চলার পর কৃষকদের কোনো সাড়া না পাওয়ায় তার রুট পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন ম্যানেজার শাহ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা প্রায় ২০০ কি.মি রেলপথ। তেল খরচ ও স্টাফদের মাইলেজ ও অন্যান্য খরচসহ দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা আপ ডাউনে খরচ হয় ৭০/৮০ হাজার টাকা। যার বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৫/৬ হাজার টাকা করে। কৃষিপণ্য একদিনও পরিবহন করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়িক মালপত্র পরিবহন একেবারেই নেই করোনার কারণে। ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে নতুন এই ট্রেন সার্ভিসকে। স্থানীয় কৃষি পণ্য সড়ক পথে ট্রাকে করেই পরিবহন করছেন চাষিরা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ জানান, মালামালের অভাবেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই দুটি ট্রেন। এমনিতেই যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় রেলওয়ের লোকসান হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পণ্যবাহী লাগেজ ট্রেন চালু করা হলেও তা সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, এমতাবস্থায় তা বন্ধ না করলে করোনাকালে রেলের লোকসানের পাল্লা আরও ভারীই হতো।



 

Show all comments
  • jack ali ৪ মে, ২০২০, ১২:০৬ পিএম says : 0
    This is the activities of Bangladesh Government. How come people will come with their product???? They need to advertise through sms, local chairman, up members and many other ways.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ