পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপি চলছে মাহামারী করোনার ভয়াবহতা। এর প্রভাব দেশেও পড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এর প্রকোপ। ইতোমধ্যে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ালেও প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে সঠিকভাবে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে যাদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ না হওয়ায় পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। ফলে সারাদেশ থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি জানার সুযোগ মিলছে না স্বাস্থ্য বিভাগের। দেশে সরকারি পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসকের মোট পদ আছে ৩০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরিতে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট থাকতে হবে। সেই হিসেবে দেশে ১ লাখ ৫০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট প্রয়োজন। অথচ সর্বসাকুল্যে আছে মাত্র ৫ হাজার ১৬৫ জন। এরমধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাবরেটরি) রয়েছেন ২ হাজার ১৮২ টি। এই সামান্য সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট দিয়ে করোনা মহামারীর বৈতরণী পার হওয়া এর প্রকার অসম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ল্যাবে পরীক্ষা করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে দরকার সর্বস্তরে একটি কর্মী বাহিনী। অদক্ষ কর্মী দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে বাড়বে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি, ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে রোগীর শরীরে। সর্বোপরি অদক্ষ হাতে নমুনা সংগ্রহ, প্রস্তুত ও মেশিনে পরীক্ষার জন্য প্রসেসিং করলে সেখান থেকে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়ার কোন আশা থাকে না। যা সময় এবং অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র অদক্ষ হাতে নমুনা সংগ্র করায় দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নুমনা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক বলে প্রতিয়মান হচ্ছে না। তিনি বলেন, একটি ল্যাবে সম্প্রতি সন্দেহজনক রোগীদের ৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সব ফলাই নেগেটিভ এসেছে। এতে শুধু লক্ষ্যাধিক টাকার কিট নষ্ট হয়েছে তাই নয়, নষ্ট হয়েছে অনেক কর্মঘন্টা। পাশপাশি নেগেটিভ ফল পেয়ে হয়তো অনেকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করে রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা একটি জটিল কারিগরি (টেকনিক্যাল) কাজ। এই কাজে শুরু থেকে প্রত্যেকটি পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের অবশ্যই সুপ্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ ভাইরোলজিষ্ট এর পাশাপাশি দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এর কোন বিকল্প নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট থাকার কথা থাকলেও মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের মোট পদ (৬টি শাখা মিলিয়ে) ৭৯২০ টি। কর্মরত আছে ৫ হাজার ১৬৫ জন, পদ শূন্য আছে ২ হাজার ৭৫৫ টি। এর মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাবরেটরি) মোট পদ ২ হাজার ১৮২ টি, কর্মরত ১ হাজার ৪১৭ জন, পদ শূন্য আছে ৭৬৫ টি। নমুনা সংগ্রহ করছে প্রায় ৫০০ জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ বছর ধরে মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের নিয়োগ হচ্ছে না। সম্প্রতি এক হাজার টেকনোলজিষ্ট নিয়োগের কথা হলেও সেটি বাদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দেশের করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই করোনা সনাক্তে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ (রক্ত এবং নাক ও গলা থেকে লালা) পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসছে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টরা। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদেরকে দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে করোনা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হলেও বর্তমানে করোনা রোগী দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায়, রোগীর সংখ্যা এবং পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদেরকে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এ কাজ অসম্ভব হয়ে পরেছে। তাছাড়া করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় নিয়োজিত প্রায় অর্ধশত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাবরেটরি) কোর্স সম্পন্ন করা ১৫ হাজার প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদেরকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষানিরীক্ষার কাজে না লাগিয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করার ফলে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও সঠিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত কোন একাডেমিক সনদ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ল্যাবরেটরি কাজের কোন প্রশিক্ষণও নেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদের প্রাক্তন মহাসচিব সেলিম মোল্লা বলেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় দেশের স্বার্থে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির প্রথম সৈনিক মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। করোনা মোকাবেলায় বিপুল সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
সামগ্রীক বিষয়ে রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুসতাক হোসেন বলেন, নমুনা সংগ্রহ থেকে প্রস্তুত করা পর্যন্ত কাজটি মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের। এটি অন্য কাউকে দিয়ে করালে হবে না। দেশে এমনিতেই টেকনোলজিষ্টের ঘাটতি রয়েছে, তারপওে বর্তমান অবস্থায় সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় এখন টেকনোলজিষ্ট নিয়োগ দেয়ার কোন বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।