Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনা ঝুঁকিতে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা

আক্রান্ত ৮৫৪

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। করোনায় ফ্রন্টলাইনে সেবা প্রদানকারী ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পুলিশেও। সর্বশেষ গতকালের পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ পুলিশ সদস্য। আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫৪ পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে শুধু ডিএমপিতেই ৪৪৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১৩ জন। আর আক্রান্তদের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যই বেশি। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ থেকে ব্যতিক্রম পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। প্রথম থেকেই বিদেশ ফেরত সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত রোগী খোঁজা, মানুষকে সচেতন করা, বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়াসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মারা যাওয়াদের দাফন পর্যন্ত করছে পুলিশ সদস্যরা। এর পরেও মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।

ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শুধু করোনা যুদ্ধে নয়, অতীতে এ রকম অনেক দুর্যোগ পুলিশ মোকাবিলা করেছে সফলতার সঙ্গে। এবারও তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে করছে। করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর জেনেও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বীরের মতো। তবে তারা যেন আক্রান্ত না হন সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রতিরোধক দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে।
করোনায় পুলিশের এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো করছেন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কিংবা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার কাজে সরাসরি মাঠ পর্যায়ের সদস্যরাই যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের নিজেদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এ সব সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দরকার।

তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা সাধারণত পেট্রোল টিম, চেকপোস্ট এবং ট্রাফিক সিগনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন। বেশিরভাগ সদস্যরাই পুলিশ ব্যারাকে থাকেন, যেখানে একটি রুমে অন্তত ১২ জন কনস্টেবল বসবাস করেন। এটা তাদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। আক্রান্তদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাব এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত না করার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশের ২ লক্ষাধিক সদস্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে মানুষকে নিরস্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জানার পরও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতোমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকশ’ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৫ গর্বিত সদস্য দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

খিলগাঁও থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আবার আমাদের ওপর রাষ্ট্রের দায়িত্বও আছে। যেটি জনগণের জন্য করে যাওয়া। এ কাজ করতে গিয়ে ঝুঁঁকি জেনেও অনেক সময় আমার মতো অনেকেই পরিবারের কথা চিন্তা করে বাসায়ও যান না। আমরা এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ