Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার প্রভাবে ভালো নেই বাকেরগঞ্জের মুড়ি কারিগররা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২০, ১:০৩ পিএম

বরিশালের বাকেরগঞ্জের হাতেভাজা মোটা ধানের মুড়ির কদর সারা দেশে থাকলেও এবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লক ডাউনের প্রভাবে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় চাহিদা অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। ফলে বাকেরগঞ্জের মুড়ির কারিগররা ভাল নেই। অথচ সারা বছর যুড়ে বাকেরগঞ্জের হাতে ভাজা মোটা ধানের মুড়ি দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেত। বিশেষকরে রমজান শুরুর একমাস আগে থেকেই বাকেরগঞ্জের মুড়ির কারিগরদের খাওয়াÑঘুম বন্ধ হয়ে যেত। একজন করিগর প্রতিদিন হাতে ৫০ কেজি থেকে ১শ কেজি পর্যন্ত মুড়ি ভাজতেন। এবার সেখানে অনেকটাই নিরবতা।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন এর বাখরকাঠি সহ কয়েকটি গ্রাম যুড়েই যুগের পর যুগ ধরে মুড়ি ভাজার ব্যাবসা চলে আসছে। দক্ষিণাঞ্চলের মোটা ধান সংগ্রহ করে বিশেষ ব্যবস্থায় সিদ্ধÑশুকনা আর ছাটাই শেষে উপযোগী করে তোলা থেকে শুরু করে মুড়ি ভাজা পর্যন্ত রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। কোন ধরনের ইউরিয়া ও হাইড্রোজ সহ রাসয়নিক ছাড়া এখানে মুড়ি ভাজা হয় বলে তা পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সম্মত হয়ে থাকে। হাতেভাজা এ মুড়িতে কোন রাসয়নিক না থাকায় তা যথেষ্ঠ সুস্বাদু হলেও রং ইসত লালচে। এ মুড়িতে কোন ছিদ্র থাকেনা। আর প্রাকতিভাবে ভাজা বাকেরগঞ্জের মুড়ির স্বাদই বলে দেয় তা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
বরিশালের রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন এর বাখরকাঠি সহ আসে পাশের গ্রামে রমজানের চাহিদা মেটাতে নারীদের সাথে পুরুষরাও সমানতালে মুড়ি তৈরির কাজ করত প্রতি বছর। তবে এবার চালচিত্র কিছুটা ভিন্ন। পরিবহন সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের বাইরে মুড়ির পাইকাররা খুব একটা আসছে না। ফলে চাহিদা কম থাকায় কারিকরদের সারা বছরের আশা অনেকটাই নিরাশায় পরিনত হচ্ছে।
অপরদিকে বাকেরগঞ্জের মুড়ির কারিগরদের টিকে থাকতে হচ্ছে মেশিনে ভাজা মুড়ির মাথে পাল্লা দিয়ে। ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মেশিনে বড় ও সাদা করে মুড়ি ভাজা হয়। ফলে তার উৎপাদন ব্যায়ও কম। মেশিনের মুড়ির খরচ ও পরিশ্রম উভয়ই কম বিধায় প্রতিযোগীতায় টেকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতে ভাজা মুড়ির কারিগরদের। স্থানীয় আড়তদার ও মিল মালিক ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, মেশিনে মুড়ি ভাজলে হাইড্রোজ মেশানো হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ঠ ক্ষতিকর। কিন্তু অনেকই কম দামে পেয়ে মেশিনের ভেজাল মুড়ি কিনে খাচ্ছে। তাই মেশিনের মুড়ি তৈরিও অব্যাহত থাকছে। এছাড়া কিছু ক্রেতা না বুঝে পরিস্কার ও আকারে বড় মুড়ি কিনতে আগ্রহী। তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে। অপরদিকে হাতে ভাজা মুড়ি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু হলেও চেহারা কিছুটা লালচে। এ মুড়ি তৈরিতে খরচও বেশি। মেশিনের মুড়ি যেখানে পাইকারি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রী হয়, সেখানে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রী হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি।
কিন্তু এবার করোনার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বরিশালে মুড়ি পল্লীতেও। পরিবহন সংকটে বকেরগঞ্জের মুড়ি এবার দক্ষিণাঞ্চলের বাইরে খুব একটা যাচ্ছে না। ফলে বাকেরগঞ্জের মুড়ি পল্লীর কয়েক হাজার পরিবারের অন্তত দশ হাজার কারিগরের কপালে এখন দুঃশ্চিন্তার ভাজ গভীর হচ্ছে ক্রমশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ