পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। হাওর অঞ্চলে ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে তারা বাজারে ধান বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা অনেক হতাশ।
গত ২০ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎপাদিত বোরো ধান দ্রুত সংগ্রহের নির্দেশ দেন। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারিভাবে কৃষকের ধান কেনার কথা থাকলেও তা এখনো শুরু হয়নি।
সরকার এবার ২৬ টাকা কেজি অর্থাৎ ১০৪০ টাকা মণ ধরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কৃষক এখনও সে দামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। তারা পাইকারদের কাছে ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন। সরকারি হিসাবে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৮৫০ টাকা। আর কৃষকদের হিসাবে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকারও বেশি।
বর্তমানে কৃষক বিক্রি করছেন ৬৮০ টাকা। প্রতি মণে লোকসান হচ্ছে ২২০ টাকা। হাওরের অনেক কৃষক দাদন ব্যবসায়ী-এনজিওসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে এখন কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। শ্রমিক সঙ্কটে দিশে হারা কৃষকদের পাশে এবার ধান কাটায় মানবিকতার হাত বাড়িয়ে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ দাঁড়িয়েছে। তবে সরকার এখনও কৃষকের ধান কিনতে তাদের পাশে নেই। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু করার কথা থাকলেও কোথাও তা শুরু হয়নি।
আমাদের নেত্রকোণা জেলা সংবাদদাতা এম আব্দুল্লাহ জানান, ২৬ এপ্রিল জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় জেলা প্রশাসক মইনুল ইসলাম খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতীকি ধান ক্রয় উদ্বোধন করেন। মাঠ পর্যায়ে এ কার্যক্রম আরও ১৫ দিন পর শুরু হবে। তিনি জানান, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। প্রতিটি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে লটারি করে কিছু সংখ্যক কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।
গত বছর যেসব কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেছেন তারা এবার এ সুযোগ পাবেন না। তাই এসব জটিল প্রক্রিয়ার আবর্তে পড়ে সব কৃষক সরকারের কাছে নির্ধারিত ১০৪০ টাকা মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন না। সরকার দেরিতে ধান কেনা শুরু করার কারণে কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে পাইকার-ফড়িয়াদের কাছ ধান বিক্রি করেন। এরপর সরকার তখন তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য পাইকার-ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান কিনে নেয়। এতে করে কৃষক সর্বস্বান্ত হলেও লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী পাইকার-ফড়িয়ারা।
খালিয়াজুড়ি উপজেলার তলার হাওর এলাকার নগর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের কৃষক সবুজ মিঞা বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে তিনি ধান চাষ করেছেন। এখন সেই ঋণের টাকা শোধ করতে মাড়াই করার সাথে সাথে ভিজা ধান কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার ধান কবে কিনবে কিছুই জানেন না। প্রয়োজনের জন্যই তাকে অনেক লোকসান দিয়ে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর এলাকার মল্লিকপুরের সঞ্জিত তালুকদার বলেন, সারা বছরে তাদের এই একটি মাত্র ফসল। এই বোরো ধান বিক্রি করে তাদের পরনের কাপড় থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় সবকিছু করতে হয়। তাই ধান মাড়ানোর সাথে সাথে তা বিক্রি করতে হয়। এখন তারা প্রয়োজনেই পাইকারের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন। সরকার যখন ধান কেনা শুরু করে তখন তাদের ধান বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
আমাদের সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা হাসান চৌধুরী জানান, সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে ধান ও চাল কেনা কর্মসূচি গত ২৯ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উদ্বোধন করেছেন। তিনি সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের ৩ কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে জেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের প্রতীকি উদ্বোধন করেন। এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ জেলার সংসদীয় আসনের এমপিগণ উপস্থিত ছিলেন। জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানায়, এবার সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলা থেকে জেলায় ২৫ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক ধান ক্রয় করবে সরকার। আগমী ১১ মে থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের খাগুরা গ্রামের কৃষক কাচা মিয়া বলেন, এবার ধানের ফলন ভালই হয়েছে। ধান কাটা এখনো পুরো শেষ হয়নি। তবে এর মধ্যে প্রয়োজনের জন্য কিছু ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। মাত্র ৬শ’ টাকা মণ দরে অল্প স্বল্প ধান বিক্রি করেছি।
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা সংবাদদাতা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, নিকলীর সিংপুর, ঘোরাদিগা, ডুবি, বড় হাওর, বড়াইল, বড়লিয়া, কাশিপুর, ধীরুয়াইল, বরাটিয়া, ছাতিরচর হাওরের ৭০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। ব্যাপারীরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ধান কিনতে শুরু করেছে। বাড়িতেই ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ব্যাপারী অনেক কম।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার কথা থাকলেও তা এখনো শুরু হয়নি। মাঠ পর্যায়ে ধান কেনা শুরু হতে আরও দু’তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এদিকে কৃষকরা তাদের প্রয়োজনের তাগিদে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করছে। নিকলীর বিভিন্ন এলাকায় ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। নিকলীর সিংপুর ইউনিয়নের ডুবি হাওর এলাকার ডুবি গ্রামের কৃষক কাঞ্চন মিয়া বলেন, যেখানে একমণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ৯০০ টাকারও বেশি সেখানে এখন বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। সরকার কবে ধান কিনবে তা তারা জানেন না।
নিকলী খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত মো. দুলাল মিয়া জানান, সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি অর্থাৎ ১ হাজার ৪০ টাকা মণ ধরে ধান কেনা খুব শিগগিরই শুরু হবে। কৃষি অফিসের তালিকা অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান ক্রয় করবে। নিকলী উপজেলাতে কৃষকদের নিকট থেকে ১ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।