Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গৌরনদীতে জেলেদের খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

গৌরনদী (বরিশাল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২০, ৭:২৫ পিএম

বরিশালের গৌরনদীতে জেলেদের বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার (বিশেষ ভিজিএফ) চাল বিতরণে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৫/৬ জন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মরণব্যাধি করোনার দুর্যোগের সময় জেলেদের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ২/৩ জন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিজের অপকর্মের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একজন চেয়ারম্যান কতিপয় জেলের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে ৫০/৬০ জেলের মাঝে নগদ ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে বিতরণ করেছেন । এ ছাড়া কয়েকজন চেয়ারম্যান তার নিকট আত্মীয়, ব্যবসায়ী, কৃষক, বিদেশ ফেরত, প্রবাসীসহ অন্য পেশার অধিকাংশ ব্যক্তির নাম জেলেদের তালিকাভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সব কারণে প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮৫৫ জন কার্ডধারী জেলের নামে খাদ্য সহায়তার সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ১১১ জন জেলে, বার্থী ইউনিয়নে ৮০জন, চাঁদশী ইউনিয়নে ৮০ জন, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ৯০ জন, বাটাজোর ইউনিয়নে ৯০ জন, নলচিড়া ইউনিয়নে ১৫০জন, শরিকল ইউনিয়নে ১৫০ জন ও পৌরসভায় ১০৪ জন জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত ওই ৪ মাসে জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল দেয়ার সরকারী নির্দেশ রয়েছে।
বার্থী ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০ জেলের নামে বরাদ্দকৃত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সরকারি চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহ্জাহান প্যাদা। এ কারণে আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ জেলেরা গত ২ মাসের বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চাল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেলেদের চাল আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা নিজস্ব লোক দিয়ে কয়েকদিন আগে বার্থীসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু সংখ্যক জেলেদের বাড়িতে ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা পৌছে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন।
বার্থী গ্রামের তালিকাভূক্ত জেলে মনির হাওলাাদার, অমূল্য হালদার, কালাম সরদার অভিযোগ করে বলেন, এ বছর আমরা কোন খাদ্য সহায়তা পাই নাই। জেলে না হয়েও জেলেদের তালিকায় প্রবাসী হালিম সন্যামত, বিদেশ ফেরত হাবুল হাওলাদার, মিজানুর রহমান ও ওরফে মিজান হাওলাদার, ব্যবসায়ী পরিতোষ দত্ত, ইউপি চেয়ারম্যানের চাচা আমিন আর্শেদ প্যাদার নাম রয়েছে।
ওই গ্রামের জেলে মন্টু হাওলাদার, আলম হাওলাদার বলেন, গত বছর আমরা কিছুই পাইনি। গত ২৯ এপ্রিল স্থানীয় মৎস্য চাষি তরনী রায়ের মাধ্যমে আমাদের ২৭জনকে এক হাজার করে টাকা পৌছে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা। একইভাবে তারাকুপি গ্রামের পলাশ রায় ৫০০ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বার্থী ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা বলেন, আমার ইউনিয়নে ৮০ জেলের নামে বরাদ্দকৃত ২ মাসের চাল আমি ১৬০ জন জেলের মাঝে ৪০কেজি করে বিতরণ করেছি।
শরিকল ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের জন্য বরাদ্দকৃত ১৫০ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। কিন্ত বিতরণের সময় তিনি জেলেদের ৮০ কেজির পরিবর্তে নিজের খেয়াল খুশি মতো ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন। তাও আবার কার্ডধারী সব জেলেদের দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
সাকোকাঠি গ্রামের জেলে প্রদীপ দাস, দুলাল দাস, মানিক দাস অভিযোগ করেন, তারা এ চলতি বছর ৪০ কেজি করে চাল পেয়েছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে একই গ্রামের রাম দাস, বেনু দাস, মহিষা গ্রামের মোঃ হানিফ, মন্টু সন্যামতসহ প্রায় অর্ধশত কার্ডধারী জেলে বলেন, আমরা কার্ডধারী জেলে হওয়া সত্যেও করোনার দুর্যোগের সময় আমাদের ভাগ্যে সরকারি চাল জোটেনি।
শরিকল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র হালদার ক্ষোভের সাথে জানান, চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লা জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করে নামে মাত্র বিতরণ করে বাকী চাল আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তবে শরিকল ইউপির চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা বেশী হওয়ায় আমি ১৫০ জন জেলের ২ মাসের চাল উাত্তোলন করে ৩০০ জেলের মাঝে ৪০ কেজি করে বিতরণ করেছি।
নলচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ইউনিয়নে ৭১০ জনের নাম জেলেদের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ প্রকৃত জেলে রয়েছে। যখন জেলে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন অন্য পেশার মানুষরা তাদের আইডি কার্ড নিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে জেলেদের তালিকায় নাম লেখায়। এ কারণেই অন্য পেশার মানুষ জেলেদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল প্রাপ্ত জেলেদের তালিকার (মাষ্টাররোল) কপি এখনও কোন ইউপি চেয়ারম্যানগণ আমার কাছে জমা দেয়নি। তবে নলচিড়া ও শরিকল ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি ৫ চেয়ারম্যান চাল বিতরণের সময় আমাকে জানায় নাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ