Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন : ইসলামের নির্দেশনা

মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২০, ১২:০৯ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সুগন্ধিও ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদি কোনো মৃত দেহকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দেয় বা করোনায় আক্রান্ত হয়ে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে সে মৃত দেহ মুসলিম হিসেবে পরিপূর্ণ ইসলামী পদ্ধতিতে গোসল ও দাফন সম্পন্ন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’র (সিডিসি) কর্মকর্তাদের মতে, ‘যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, প্রটোকল এবং পিপিই পরিধান করে গোসল করানো যায়, তাহলে মৃত দেহ থেকে ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা আর থাকেনা বললেই চলে। কারণ, ভাইরাসটি আক্রান্ত রোগীর থুথু, কফ থেকে সংক্রমিত হয়। যেহেতু মৃত দেহ থেকে এ জাতীয় ড্রপলেট বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই, তাই সংক্রমনের সুযোগও কমে যায়, ঝুঁকিও থাকে না। তবে সঠিক প্রোটেকল বা পিপিই না পরে গোসল করানো হয়, তাহলে সামান্য হলেও সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে।’ এ জন্য পিপিই পরা এবং কীভাবে পরতে ও খুলতে হয়, তা যেমন জানতে হবে; পাশাপাশি মৃতকে গোসল দেওয়ার ইসলামী নিয়মও জানতে হবে। আর যদি মৃত দেহকে স্পর্শ করা না যায়, বিশেষ করে রোগীর অবস্থা ভিন্ন হলে অথবা যিনি গোসল করাবেন, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কোনো ব্যবস্থা বা প্রটোকল জোগাড় করা না যায়, তখন মৃত দেহকে গোসল না করিয়ে বরং উপর থেকে পানি ঢালতে হবে। কিন্তু তাকে স্পর্শ করা যাবে না। যদি চিকিৎসকরা পনি ব্যবহার করা নিষেধ করেন, অথবা গোসল করানোর মতো পানি না পাওয়া যায় কিংবা এমন কোনো পরিস্থিতি হয় যে, মৃত দেহতে পানি লাগালে রোগের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে, তাহলে মৃত দেহতে তায়াম্মুম করাতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাতে গ্লাভস পরিধান করে নেবে। তারপর কোনো একটি শুকনো জায়গায় হাতদুটো ঘসে মৃতদেহের মুখ ও হাতে মাসেহ করতে হবে। পরবর্তীতো গ্লাভস দুটো খুলে নিরাপদ জায়গায় ফেলে দেবে। এ মতটি শাফেয়ী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম রামলি রহ. এর। আর যদি ডাক্তার মৃতদেহের কাছেই যেতে নিষেধ করেন, তায়াম্মুম করানো ও সম্ভব না হয়, লকডাউনের কারণে বা অন্য কোনো কারণে নিরাপত্তামূলক কোনো সামগ্রীও না পাওয়া যায়, তখন গোসল বা তায়াম্মুম ছাড়াই মৃত দেহ দাফন করতে হবে। এটাই আইন , এটাই বাস্তবতা। আমাদের সেখানে বিকল্প কিছু করার সুযোগ বা ক্ষমতা নেই। আর আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই আমাদের সে জন্য মাফ করে দেবেন। কারণ শরীয়াতের মূলনীতি হলো- পরিস্থিতি যত কঠিন হয়, শরীয়াতের বিধানও ততটাই সহজ হয়ে যায়।
এ মহামারি চলাকালিন সময়ে সালাতুল জানাজায় বেশী লোকের সমাগম না করে অল্প কিছু লোক জানাজা পড়ে নেবে। একজন দুই জনে এমনকি যিনি গোসল দিবেন তিনি একা একাই জানাজার নামাজ পড়ে নিতে পারবেন। এমনকি কোনো কারন ছাড়াই, মহামারির প্রকোপ ছাড়াই কবরস্থানে জানাজা পড়ার দৃষ্টান্তও ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে। হযরত আয়েশা রা. এবং উম্মে সালমা রা. এর জানাজা জান্নাতুল বাকীতে হয়েছে। পরবর্তীতে ইবনে উমরের রা. ছাত্র প্রখ্যাত তাবেয়ী নাফি র. বিষয়টা বর্ণনা করেন। তার বর্ণনায় জানা যায় যে, জান্নাতুল বাকীতে হযরত আবু হুরায়রা রা. আয়েশা রা. জানাজায় ইমামতি করেন। আর ইবনে উমার রা. সেখানে উপস্থিত থাকলেও কোনো আপত্তি করেন নি। তাই গোরস্থানেই জানাজা পড়ে নিতে হবে।
বাসায় বসে গায়বানা জানাযাও পড়া যাবে। শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মতে, কোনো কারণ ছাড়াই গায়েবানা জানাজা পড়া সম্ভব। মুসলিম বিশ্বের স্কলারগণ এই বিষয়ে একমত। সহীহ বুখারীর হাদীস থেকে জানা যায়, আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জ্বাশী ইন্তেকাল করার পর জিব্রাইলের আ. এর মাধ্যমে রাসূল সা. সেই খবর পেয়ে যান। নাজ্জ্বাশীর মৃত দেহ তখন ছিলো আবিসিনিয়ায় আর নবিজী সা. অবস্থান করছিলেন মদীনায়। তিনি তখনি সাহাবীদেরকে বললেন, ‘আমরা এখানেই আমাদের ভাই নাজ্জ্বাশীর গায়বানা জানাজা আদায় করবো।’ এভাবেই মদীনায় নাজ্জ্বাশীর গায়বানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
তাই ইসলামী চিন্তাবিদগণ একমত যে, যদি কেউ মৃত দেহের কাছে না যেতে পারে তাহলে সে যে কোনো স্থান থেকে জানাজা আদায় করতে পারেন। গায়বানা জানাজা ৪ তাকবিরে কিবলামুখি হয়ে পড়তে হয়। প্রথম তাকবীরে সূরা ফাতিহা। দ্বিতীয় তাকবীরে দুরুদ, তৃতীয় তাকবীরে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ, ৪র্থ তাকবীরে ‘রাব্বারা আতীনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার’ বলে দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
ইসলামে কাপড় পেচিয়ে দাফন করার বিধান আছে। এ পদ্ধতি সুন্নাত। সুযোগ পাওয়া নাগেলে তাহলে কোনো কিছু দিয়ে পেছিয়ে মৃত দেহকে দাফন করতে হয়। উহুদ যুদ্ধের শহীদদের ক্ষেত্রে এমন হয়েছিল যে, কাপড়ই পাওয়া যাচ্ছিলনা। শরীরের এক অঙ্গ আবৃত করলে অন্য কোন অঙ্গ অনাবৃত হয়ে যায়। আর এভাবেই তাদের দাফন করা হয়েছিল। তাই যে কোনো ব্যাগে পেছিয়েও যদি দাফন করা হয় তাহলে এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির বাস্তবতায় আমাদের তা মেনে নিতে হবে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেলে, জায়গার সঙ্কট দেখা দিলে তাহলে একই কবরে কয়েকজনকে একসাথে দাফন করা যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ