পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চারটি পিকআপ ও মাইক্রোবাস ঝটিকা থামলো পাড়ায়। গাড়ির আরোহীরা নেমেই জেনে নিলেন পাড়ায় অভাব-অনটনে কারা। ওদের বাড়িঘরে গিয়ে হাতে হাতে তুলে দিলেন ইফতার-সাহরীর রান্না করা খাবারভর্তি ডিশ। তাজাফল, শুকনো খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ভর্তি থলেগুলো। পরিবার-পিছু নগদ টাকাও দিলেন। এরপর দ্রুত বিদায়। নিজেদের পরিচয় দিলেন না দাতা কারা!
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের একটি পাড়ায় এই দৃশ্য গত মঙ্গলবার বিকেলের। রোজকার একই চিত্র রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে উত্তরের নগর রাজশাহী, দক্ষিণে খুলনা-বরিশাল, পুণ্যভূমি সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও। প্রকাশ্যে অথবা গোপনে প্রসারিত হচ্ছে অসহায় মানুষদের প্রতি সাহায্য-সহায়তার উদার হাত।
করোনার কারণে মানুষের জীবনধারণ দুঃসহ কঠিন সঙ্কটে পড়েছে। আয়-রোজগার হারা গরিব ছাড়াও মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত অনেকেরই খাদ্য, ঔষধপথ্য ও জরুরি নিত্যপণ্য জোগাড় করতে গিয়ে ত্রাহি অবস্থা। আত্মসম্মান লোকলজ্জায় মুখ ফুটে তারা বলতেও পারেন না দুঃখ-যাতনার কথাগুলো।
করোনা মহামারীতে মহাসঙ্কটকালে আঁধারের অপর পাশেই জ্বলছে অফুরান আশা আর ভরসার আলোর মিছিল। দেশ ও সমাজের তুলনামূলক স্বচ্ছল ব্যক্তিরা উদার মনে দাঁড়াচ্ছেন অসহায় মানুষগুলোর পাশে। খাদ্য সাহায্য থেকে শুরু করে ঔষধসহ চিকিৎসা সামগ্রী, নিত্যপণ্য, নগদ অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে অভাবী জনগোষ্ঠির হাতে। অন্তত দুবেলা খাবার জুটছে।
তাই তো কবি আবদুল কাদির (মৈত্রী) লিখে গেছেন- ‘সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপরভেদ, সংসারে গড়িব এক নূতন সমাজ’। কবি কামিনী রায় লিখেন, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’। অথবা ভূপেন হাজারিকার সেই অমর গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই দেশের শহর-নগর, বন্দর-গঞ্জ, প্রত্যন্ত গ্রাম-জনপদে বেশিরভাগ দান-ত্রাণ বিলি-বণ্টন হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। এরমধ্যে আছেন দানশীল ব্যক্তিগণ, শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রুপ বা পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি, কর্পোরেট হাউস, অনেক এলাকার ধনাঢ্য এমপি-নেতৃবৃন্দ, চেম্বারসহ ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের বিভিন্ন খাত-উপখাতের সংগঠন-সমিতি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, আমদানি-রফতারিকারকগণ ইত্যাদি। তাদের দান-ত্রাণ, সাহায্য-সদকার পরিমাণ আর্থিক হিসাবে দৈনিক শত কোটি টাকা।
বিশিষ্ট দানবীর আলহাজ মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের উদ্যোগে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে এমনকি দেশের উত্তরাঞ্চলে খাদ্যসামগ্রী, নিত্যপণ্য ও নগদ সাহায্য পৌঁছানো হচ্ছে। তাছাড়া সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমানের উদ্যোগে এবং ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে মহানগরীর ১৬টি থানা এলাকায় এক হাজার জন করে মাহে রমজানে প্রতিদিন ১৬ হাজার অসহায় মানুষের মাঝে জনপ্রতি এক হাজার টাকা মূল্যের খাদ্যসামগ্রী বিতরণের বিশেষ ত্রাণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এম মনজুর আলম জানান, ‘অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর এটাই শ্রেষ্ঠ সময়’ শীর্ষক গত ২০ এপ্রিল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন-এর লিখিত সংবাদভাষ্য পড়ে উজ্জীবিত হয়েছেন।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দান-ত্রাণের প্রবাহ আশাব্যঞ্জক। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে ৩ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ-সউদী আরব সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ বজলুল হক হারুন এমপি নিজ এলাকায় কয়েক হাজার পরিবারের কাছে ইতোমধ্যেই মাহে রমজানের উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছেন সাহরী ও ইফতারের খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।
চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-পতেঙ্গার সংসদ সদস্য সাবেক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এম এ লতিফ নিজ এলাকায় দরিদ্র জনগণের মাঝে প্রতিদিন কয়েকটি মিনিট্রাক যোগে রান্না করা খাবার এবং খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপণ্য বিতরণ করছেন। তাছাড়া এলাকায় নিজ অর্থায়নে ৫টি অস্থায়ী করোনা কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প ও হাসপাতাল চালু করেন।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ইনকিলাবকে জানান, চেম্বারের উদ্যোগে প্রতিদিন ১৫টি গাড়িতে করে নামমাত্র মূল্যে চাল, ডাল, চিনি, আলু, ছোলা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি বিক্রি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চেম্বার নেতৃবৃন্দ উদার দান-সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।
বিজিএমইএ’র পোর্ট-শিপিং কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি ও চেম্বার নেতা নাসির উদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের একার পক্ষে ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়। এরজন্য বেসরকারি উদ্যোগে ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, দানবীর ব্যক্তিরা গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। তাদের দান-ত্রাণের ফলে অন্তত খাদ্যের অভাব পূরণ হচ্ছে। সমাজের ধনী ও সামর্থবান আরও যারা এখনও আসেননি তারাও তৎপর হবেন আশা করা যায়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সাথে আজ কোটি পরিবার অসহায়। তাদের কাছে খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণে বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক প্রচেষ্টাগুলো বিরাট আশার সঞ্চার করেছে। উত্তরোত্তর তা বাড়ছে। অসহায় মানুষের দুর্দশা লাঘবে হচ্ছে সহায়ক। এ উদ্যোগগুলো আরও জোরালো হোক।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের দান-ত্রাণ, সহযোগিতার ঐতিহ্য রয়েছে। সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যাপক সাড়া দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটি আমাদের সঙ্কটকালেও আশা জাগরুক করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।