Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ষণ মামলায় ৯ মাস জেল খাটে সম্প্রতি জামিন পায় পারভেজ

রক্তাক্ত দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর একে একে চার’জনকেই গলা কেটে হত্যা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ৬:০৮ পিএম

ধারালো বটি দিয়ে গৃহবধূ ও তার কিশোরী কন্যাসহ চার’জনকে কুপিয়ে রক্তাত্ব করার পর দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করে ঘাতক পারভেজ। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর একে এক চার’জনকেই গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে সে। এর আগেও এই ঘাতক এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিল বলে অভিযোগে জানা গেছে। গাজীপুরের চাঞ্চল্যকর প্রবাসি কাজলের স্ত্রী ও তার তিন সন্তান খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত পারভেজের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দীতে বেরিয়ে এসেছে চার খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের একটি দোতলা বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার ২৩ এপ্রিল ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারজন হলেন ফাতেমা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে সাবরিনা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে মোছা. শাওরিন (১২) ও ছোট ছেলে ফাদিল সামদানি (৮)। স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দীতে সে বলেছে, মুঠোফোন চুরি করতে রাতের আঁধারে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। তারপর একে একে কুপিয়েছে বাড়ির চার বাসিন্দাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেছে দুই কিশোরী বোনকে। এই নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি আট বছরের প্রতিবন্ধী শিশুও।
পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ঘটনার পর থানা-পুলিশ এবং সিআইডির পাশাপাশি পিবিআইও ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করে। আর ঘটনার পর থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা নিহত শিশুদের বাবা রেজোয়ান হোসেন কাজলের সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছিলেন। আর রেজোয়ানই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেছেন, গ্রেফতারকৃত পারভেজ তার মেয়েদের বিভিন্ন সময়ে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে। আর তার এই তথ্যের ভিত্তিতেই পিবিআই গত সোমবার তাকে গ্রেফতারের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ (১৭) পুলিশকে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সে ওই বাড়ির পাশে যায়। এরপর বাড়ির ওয়ালে বের হয়ে থাকা ইটে পাড়া দিয়ে দোতলার ছাদে ওঠে। পরে ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানোর রশি কেটে ছাদের একটি গ্রিলের সঙ্গে বাঁধে। পরে ওই রশি বেয়ে দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। বাথরুমে রাখা ওয়াশিং মেশিনের ওপর পা রেখে সে নিচে নামে। এসময় দুই কিশোরী নূরা ও শাওরিনের কক্ষে যায়। তখনও নূরা জেগে ছিল এবং মুঠোফোন ঘাটছিল। এঅবস্থায় ঘাতক খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা লুকিয়ে থাকার পর সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে নিশ্চিত হয়। পরে খাটের নিচ থেকে বের হয়। এসময় সে নিচতলায় গিয়ে রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে এসে গৃহবধূ স্মৃতি ফাতেমার রুমে দরজা খোলার চেষ্টা করে। এসময় ভেতর থেকে সে দরজা খুলে বের হলে ঘাতক দরজার পেছনে গিয়ে লুকায়। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে না পেয়ে পুনরায় তার রুমে ঢোকতে ছিলেন। আর তখনই তাকে বঁটি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে। এতে গৃহবধূ ফাতেমা তখন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই শব্দ পেয়ে নূরা ঘুম থেকে জেগে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন কিশোরটি তাকেও এলোপাতাড়ি কোপায়। এরপর জেগে ওঠে নূরার আট বছরের প্রতিবন্ধী ভাই ফাদিল। সে ঘরের এদিক- সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল। তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। ঠিক তখন শাওরিনের ঘুম ভেঙে গেলে সে চিৎকার করে ওঠে। এসময় ঘাতক পারভেজ তখন তাকেও বঁটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এরপর দুই বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করে। আর ধর্ষণের পর প্রত্যেকের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে ছুরি দিয়ে সবাইকে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ফাতেমা আক্তারের গলায় থাকা স্বণের চেইন, দুটি কানের দুল, একটি কানফুল, একটি নাকফুল এবং দুই বোনের আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি আংটি, একটি লাল রঙের ডায়েরি নিয়ে নেয়। আর ফাতেমার ঘর থেকে দুটি মুঠোফোন নিয়ে সে হাতমুখ ধুয়ে ফেলে। এরপর বাড়ির পেছনের গেট খুলে ফজরের আজানের সময় তার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, ঘাতক যখন গৃহবধূ ও তার তিন সন্তানকে কুপিয়েছে, তখন নিহতদের দু’জন চিৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু আশপাশের কেউ তা শুনতে পাননি। বাড়িটিতে সে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করে। গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ির আলনায় অন্যান্য কাপড়ের সঙ্গে রাখা তার রক্তমাখা গেঞ্জি উদ্ধার করে পিবিআই। আর লুট করা স্বর্নেরগহনা ও দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে।
পিবআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এই কিশোরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে তার চাচার এক ভাড়াটের সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় হওয়া মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে। ৯ মাস জেল খাটার পর কিছুদিন আগে সে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। গ্রেফতারকৃত পারভেজ স্থানীয় একটি মক্তবে পড়ত। তার বাবা রিকশাচালক। সে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়।



 

Show all comments
  • salam ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৩৮ পিএম says : 0
    shoot him in open squad.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ