পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ যেন শুধু নামেই লকডাউন। মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে চলছে চেকপোস্টের নামে ফটোসেশন। অথচ পাড়া-মহল্লায় অবাধে চলছে যানবাহন। পাইকারি বাজার, কাঁচাবাজারসহ পাড়া-মহল্লায় সব ধরনের দোকান-পাট খোলা। গাদাগাদি করে মানুষজন বাজার করছে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে করছে ঘুরাঘুরি। অন্যদিকে, দেশের প্রায় ৮শ’ গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক ভিড় ঠেলেই যাতায়াত করছে। গাজীপুর ও সাভারে বেতনের দাবিতে কয়েক হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক গতকাল রাস্তায় নেমে তান্ডব চালিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছে। সব মিলে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য দেশব্যাপি জারি করা লকডাউন এক অদ্ভুত এক চরিত্র লাভ করেছে। একদিকে শিক্ষিত, চাকরিজীবী, ব্যবসায়িরা ঘরবন্দি জীবন যাপন করছেন, অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা দলবেঁধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। এতে করে সারাদেশের মানুষই কার্যত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে শঙ্কিত।
প্রতিদিনই দেশে বাড়ছে করোনার প্রাদুর্ভাব। গতকালও ৫শ’ ছুঁই ছুঁই ছিল করোনা আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। এ পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার জনের কাছাকাছি। মারা গেছেন ১৫২ জন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংকটে নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশ করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকির সময় পার করছে। এমনিতেই রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলো বিশেষ করে গার্মেন্টস অধ্যুষিত নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী করোনা সংক্রমণের অধিক ঝুঁকিতে। তাই শ্রমঘন এসব এলাকায় সংক্রমণ অধিক হারে ছড়িয়ে পড়লে গার্মেন্টস খোলা বুমেরাংও হতে পারে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, লকডাউন এলাকাগুলো নিয়ে শিথিলতা দেখালে কোনো সুফল মিলবে না। এ জন্য প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে। অন্যথায় করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে। পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষ মহাবিপদে পড়বে।
শ্রমঘন এলাকায় সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তেমন ব্যবস্থা নিয়ে কারখানাগুলোর উৎপাদনে যাওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা এবং গাজীপুর এই তিনটি জায়গা গার্মেন্টস প্রধান অঞ্চল। এগুলোই সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ এলাকা। এই এলাকগুলো এমনভাবে খোলা উচিত যাতে সংক্রমণ বাড়ার কোন সুযোগ না থাকে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গার্মেন্টস খোলার জন্য আরও কিছু দিনের জন্য অপেক্ষা করার দরকার ছিল। গার্মেন্টস খোলায় এখন যদি এসব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ে তখন কিছুই করার থাকবেনা। আরও অন্তত দুই সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র জানতে আরো বেশি বেশি পরীক্ষার প্রয়োজন। তিনি বলেন, যেভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব দেশে বাড়ছে তা যদিও ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের সমস্যা হবে। আরও দুই সপ্তাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে। একই সঙ্গে করোনা মহামারির সময়ে শ্রমিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড অসুসরণ করাও জরুরি।
করোনা যুদ্ধে ঘরে থাকার বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা দিন দিন কমছে। নগরীর প্রায় সব এলাকাতেই মানুষের অবাধ চলাচল দেখা গেছে। অলি-গলিতে কোনো বিধিনিষেধের বালাই নেই। একই সঙ্গে গণপরিবহন না চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা চলাচলসহ সড়কে কয়েকগুন বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। বেতন বোনাসের দাবিতে রাস্তায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা, পাইকারি ও কাঁচাবাজারে হামলে পড়ছে মানুষ। পাড়া-মহল্লায় চুটিয়ে চলছে আড্ডা। মানা হচ্ছে না সামাজিক-শারিরিক দূরত্বও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার নামে জনসাধারণের অবাধে চলাফেরা সবই বেড়েছে। বিনা প্রয়োজনেও ঘর থেকে রাস্তায় বের হচ্ছেন কেউ কেউ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আছে শুধু মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে। তবে মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সতর্কতা মানার বিষয়ে উদাসীনতাও রয়েছে। এসব কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছেই। করোনার সংক্রমণের অধিক ঝুঁকি নিয়েই গত রোববার খুলেছে প্রায় ৮শ’ পোশাক কারখানা। আর গতকাল অধিকাংশ পোশাক কারখানাই খোলা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। যদিও বলা হয়েছে, শুরুতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের নিটওয়্যার খাতের কিছু কারখানা খুলবে। এরপর ধাপে ধাপে সাভার, গাজীপুরসহ অন্য এলাকার কারখানা খুলবে। অপরদিকে কারখানা খুললেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা। আগের মতো করেই অফিস করতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
সূত্র মতে, অনেক আগে শুরু হওয়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও সংক্রমণের হার এখনো কমেনি। এ কারণে দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অধিকাংশ দেশে লকডাউন, শাটডাউন প্রত্যাহার করা হয়নি। সেদিক থেকে বাংলাদেশে সংক্রমণ এখনো তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। আর তাই এই সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখা, সব মানুষকে ঘরে অবস্থান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। গার্মেন্টস অধ্যূষিত মিরপুরের বাসিন্দা রতন সিকদার জানান, গার্মেন্টস খোলায় শ্রমিকদের সঙ্গে বাসায় থাকা তার পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনসহ সবাই ঝুঁকিতে পড়েছেন। এমনকি এলাকাবাসীও ঝুঁকিতে। ওইসব শ্রমিক বিভিন্ন দিকে চলাফেরা করবেন এতে তাদের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাই ঝুঁকিতে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে ঝুঁকির কারখানা খোলার ক্ষেত্রে কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, তা নিয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। ওই গাইডলাইন অনুযায়ী, দূরবর্তী এলাকা কিংবা ঢাকার বাইরে চলে যাওয়া শ্রমিকদের বাদ দিয়ে আপাতত কারখানার কাছাকাছি থাকা শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন কাজ চালানো হবে। যদিও এই গাইডলাইন অনুযায়ী অধিকাংশ পোশাক কারখানাই চলছে না।
শর্ত সাপেক্ষে কারখানা খুলছে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনায় রায়। তিনি বলেন, কারখানা খুলতে উপযুক্ত সময়ের ব্যবধানে উদ্যোক্তারা আংশিক এবং ধাপে ধাপে খুলতে হবে। এ ছাড়া কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রোববার রাজধানীর যেসব কারখানার রপ্তানি আদেশ আছে, সেগুলোর কয়েকটি খোলা হয়েছে।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এম এ রহিম ফিরোজ বলেন, দেশের অর্থনীতি তো টিকিয়ে রাখতে হবে। অর্থনীতির স্বার্থে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং পর্যায়ক্রমে অঞ্চলভিত্তিক অল্প শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার দিকে যাচ্ছি আমরা। প্রধানমন্ত্রীও ধীরে ধীরে কারখানা সচল করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে লককডাউনের নামে যা হচ্ছে তা আসলে লকডাউন না। সরকারের ঘোষণা করা সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের শর্ত মানা হচ্ছে না দেশের বেশির ভাগ স্থানে। ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক হলেও প্রকাশ্যে দল বেঁধে পাড়া-মহল্লায় লোকজন অবাধে চলাচল করছে। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই বসছে হাট-বাজার। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে লকডাউন এলাকাগুলো নিয়ে শিথিলতা দেখালে কোনো সুফল মিলবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রামে হুড়োহুড়িতে চালু ২৫০ গার্মেন্টস : সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি জনমনে শঙ্কা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে তাড়াহুড়ো করে গার্মেন্টসহ কলকাখানা খুলে দেওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে লকডাউন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির এ মহানগরীতে ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। তিনটি ইপিজেডসহ নগরীর শিল্প এলাকাগুলোতে শ্রমিকের ভিড় আর হুড়োহুড়িতে শঙ্কা বাড়ছেই। গতকাল সোমবার পর্যন্ত আড়াইশ কারখানা চালু হয়েছে। এসব কারখানায় সোয়া দুই লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে। কারখানা খোলার খবরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নানাভাবে শ্রমিকরা চট্টগ্রাম আসতে শুরু করেছে। তাতে চট্টগ্রামজুড়ে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে কারখানায় আসা যাওয়া ও কাজ করার ফলে শ্রমিকরা নিজেরাও ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। হুমকিতে তাদের পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশিরাও। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি পালন করা না গেলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে আর তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই চট্টগ্রামে আড়াই শতাধিক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডে ৭৫টি কারখানায় প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক কাজ করছে। কর্ণফুলী ইপিজেডের ২৫টি কারখানায় কাজ করছে ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। কর্ণফুলীর ওপারে বিশেষায়িত কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) ১৬টি কারখানায় প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক আসা-যাওয়া করছে। বিজিএমইএর কর্মকর্তারা জানান, গতকাল পর্যন্ত ১২৫ কারখানা চালু হয়েছে, কারখানাগুলোতে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে। বিজিএমইএর তালিকার বাইরে কিছু কারখানাও চালু হয়েছে।
কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের সুরক্ষায় নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কিছুই নেই। বাসা থেকে কারখানায় যাওয়া এবং কাজ শেষ বাড়ি ফেরা কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা যাচ্ছে না। কিছু কিছু কারখানা তাদের কর্মীদের কারখানায় প্রবেশের আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে। শ্রমিকরাও নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহার করছে। তবে কারখানার বাসে ঠাসা ঠাসি করে কিংবা অন্য কোন গণপরিবহনে দল বেঁধে তাদের আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের বিরাট অংশ বাস করেন নগরীর বৃহত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ হালিশহর, বন্দর ও আগ্রাবাদ এলাকায়। সকালে কারখানায় যেতে বের হওয়া শ্রমিকদের ভিড় জমে এসব এলাকায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আশপাশের শ্রমিকরা হেঁটেই কারখানায় আসা যাওয়া করছেন। অফিস শুরু আর ছুটির সময় চট্টগ্রামের ইপিজেড গুলোর সামনের সড়কে রীতিমত শ্রমিকের ঢল দেখা যায়। কিছু কারখানা তাদের শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করলেও তাতে গাদাগাদি করে শ্রমিক তোলা হচ্ছে।
নগরীর কালুরঘাট, সাগরিকা, একে খান, ষোলশহর, নাসিরাবাদ, বায়েজিদ, বাকলিয়া, অক্সিজেন, বারিকবিল্ডিং এলাকায়ও আছে অসংখ্য পোশাক কারখানা। এসব কারখানার শ্রমিকরা দলে দলে হেঁটে রিকশায়, কিংবা ভ্যানে চড়ে কারখানায় আসা যাওয়া করছেন। কর্ণফুলী নদী পার হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক কারখানায় আসছেন নৌকা সাম্পানে জটলা করে বসে। শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা আছেন চরম উৎকন্ঠায়। কারখানা চালু হওয়ায় কারখানার আশপাশের হাটবাজারেও মানুষের ভিড় জটলা বাড়ছে। তাতে জরুরি কাজে ঘরের বাইরে আসা লোকজনও বিপাকে পড়ছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি চট্টগ্রাম করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মালিকরা তাদের এবং কর্মীদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তার করো জন্য মঙ্গল হবে না।
নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, কারখানা সীমিত আকারে চালু হয়েছে। শ্রমিকরা কারখানায় যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের রাস্তায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব কারখানা তাদের শ্রমিকদের জন্য বাস চলাচলের অনুমতি চাইছে তাদের শর্ত সাপেক্ষে অনুতি দেওয়া হচ্ছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের জেনালের ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেন, কারখানাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের কর্মীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদারক করা হচ্ছে। কোথাও কোন অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তবে ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে বেশিরভাগ কারখানায় কোন স্বাস্থবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রমিকরা বলছেন, ঝুঁকি জেনেও পেটের দায়ে তারা কাজে যাচ্ছেন। একদিকে গণপরিবহন সঙ্কট অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষায় তাদেরও চেষ্টা আছে। তবে বাস্তবে তারা তা করতে পারছেন না। অনেকে কারখানায় আসা যাওয়ার কারণে বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশিদের তোপের মুখে আছেন বলেও জানা গেছে।
গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং সকল পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা কারখানার সামনে রাখা ৩টি মোটরসাইকেল ও ৮টি বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
গতকাল সোমবার সকালে মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। পরে গাজীপুরের শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন জানান, ভোগড়া এলাকার স্টাইলিস গার্মেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ করার আগে ৩০ জন শ্রমিকের বেতন এবং ৮০ জন স্টাফের ৬০ শতাংশ বেতন বকেয়া ছিল। দুইদিন ধরে ওই কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ করে দেয়া কারখানাটি দ্রুত খুলে দেয়া এবং শ্রমিক-স্টাফদের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার সামনে জড়ো হন শ্রমিকরা। পরে তারা আশপাশে থাকা ভলমন্ট ফ্যাশন, ক্রাউন ফ্যাশন, টেকনো ফাইবার নামের চলমান কারখানার শ্রমিকদের কাজ না করার আহ্বান জানান এবং ওইসব কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ক্রাউন ফ্যাশন কারখানার সামনে মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা ৩টি মোটরসাইকেল ও ৮টি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।