পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যে দিকে চোখ যায় শুধু সোনালি ধানের ক্ষেত। মাইলের পর মাইল পাকা ধানের ক্ষেতে রোদের ঝিকিমিকি কৃষককে দিচ্ছে সুখের হাত ছানি। হাওর অঞ্চলসহ সারাদেশের কৃষক এখন তাদের সে সুখ মুঠি ভরে গোলায় তুলতে ব্যস্ত। হাওর অঞ্চলের কৃষকরা তাদের অর্ধেকেরও বেশি জমির ধান কেটে ঘরে তুললেও দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের জমির ধান কাটা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সে এলাকায় পুরোদমে ধানকাটা শুরু হবে। তবে সব এলাকাতে চলছে শ্রমিক সঙ্কট। এই সঙ্কটকালে মানবতার হাত প্রসারিত করে কৃষকের পাশে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন এলাকার ছাত্র, শিক্ষক, যুবসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এদিকে আবহাওয়া অফিসও দিচ্ছে আগাম বন্যার সতর্কবার্তা। আগামী এক সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এতে করে হাওর এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় আজও বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হবে। কোথাও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও বজ্রপাত ও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। একই সঙ্গে অনেক জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার আভাসও দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় এই মানবতার হাতই এখন কৃষকের আশা ভরসা।
হাওর অঞ্চলে দ্রুত ধান কাটার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে কৃষকদের বলা হচ্ছে। এরিমধ্যে বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি হাওরের নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। এসব জমির কাঁচাপাকা ধানও কৃষক কাটতে শুরু করেছেন। এসব এলাকার কৃষকের পাশে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন, এলাকার ছাত্র, যুবসমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মানবিকতার হাত বাড়িয়ে তারা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরে ১১১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনেও কৃষকের জমির ধান কাটা হচ্ছে। তারপরও পুরো জমির ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের চিন্তার শেষ নেই। আমাদের বিভিন্ন এলাকার ব্যুরো প্রধান, জেলা ও উপজেলার সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্টটি তৈরী করেছেন বিশেষ সংবাদদাতা রফিক মুহাম্মদ।
যশোর ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মিজানুর রহমান তোতা জানান, যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এই সপ্তাহ থেকে পুরাদমে ধান কাটা শুরু হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সবখানেই ধান কাটা শুরু হবে এ সপ্তাহের মধ্যেই। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে শিল্প-মিল-কলকারখানা করোনার কারণে বন্ধ। প্রচুর শ্রমিক বেকার হয়েছে। যশোরের ফুল সেক্টর ও রেণু পোনা মাছ উৎপাদনে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন তাদের অনেকেই এখন ধান কাটার কাজে লাগবে। তাছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ধান কাটার সহযোগিতা করবেন বলে যশোর জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ফলে শ্রমিক সঙ্কট থাকছে না।
যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শিববাস গ্রামের কৃষক মো: আলম জানান, আর ক’দিনের মধ্যেই ধান ঘরে উঠে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখন দুশ্চিন্তা দাম নিয়ে। ধানের মূল্য পাই না, লোকসান হয়, উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, সেজন্য ধানের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির দাবি আমাদের।
রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু জানান, কৃষি প্রধান রাজশাহী অঞ্চলের মাঠে মাঠে পাকা বোরো ধান। যে দিকে দু’চোখ যাবে নজরে আসছে পাকা ধানের সোনালি ক্ষেত। তবে শ্রমিক সঙ্কটে ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। এবার রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরোর আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনলাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। এরমধ্যে নওগাঁ জেলাতে একলাখ ৮২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। রাজশাহীতে ৬৫ হাজার হেক্টর, নাটোরে ৫৬ হাজার হেক্টর আর চাঁপাইনববাগঞ্জে ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবার আবাদ আর ফলন দুটোই ভাল হয়েছে। সর্বত্র লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেড়েছে। কৃষকের ঘাম ঝরানো স্বপ্নের সোনালি ফসল এখন কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায়। কোথাও কোথাও স্বল্প পরিসরে কাটাই-মাড়াই শুরু হয়েছে। দিন দশেকের মধ্যে পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে ধান কাটা। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। করোনাভাইরাস আর লকডাউন বিপাকে ফেলেছে শ্রমিকদের। তারা ভয়ে বাইরে আসতে পারছে না। আবার ধান কাটতেও যেতে পাড়ছে না পরিবহন সমস্যায়।
অন্যদিকে বৈশাখের আকাশ চোখ রাঙ্গাচ্ছে। কখনো ঝড়ো হাওয়া আর কালো মেঘ দেখা দিচ্ছে আকাশে। ঝড় আর শিলা বৃষ্টির দুশ্চিন্তাও কৃষকদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। উঁচু জমি নিয়ে খুব একটা চিন্তা না হলেও চিন্তায় ফেলেছে নিচু এলাকার বিশেষ করে বিলে আবাদ হওয়া ফসল নিয়ে। নওগাঁর আবাদের অর্ধেকের বেশি জমি বিল এলাকায়। মান্দার বিল, আত্রাই বিল, কালিগ্রামের বিল, মহানগর বিল, উথরাইল বিলসহ বিভিন্ন বিলে আবাদ হয়েছে। আগে এসব বিলে থৈ থৈ পানি থাকলেও এখন বছরের সাত আট মাস থাকে পানি শূন্য। আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন ফসলের। বিল ছাড়াও বিভিন্ন নদীর বুকজুড়ে আবাদ হয়েছে বোরো ধানের। নওগাঁর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, এবার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের সর্বত্রই ধান কাটার শ্রমিকের সঙ্কট।
নাটোর থেকে আমাদের জেলা সংবাদদাতা মো: আজিজুল হক টুকু জানান, নাটোরে ঝড়-শিলাবৃষ্টি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বোরো ধানে বেশি ফলন আশা করা হচ্ছে। চলতি বোরো মওসুমে জেলার চলনবিল ও হালতি বিলের ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়। এবার বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার হেক্টর। নাটোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া, নলডাংগা, গুরুদাসপুর ও নাটোর সদর উপজেলায় সিংহভাগ বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে। এবার সিংড়ায় ৩৬ হাজার ৬৫০হেক্টর, নলডাংগায় ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৬ শ’ হেক্টর ও নাটোর সদরে ২ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। ইতোমধ্যে অল্প কিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আরো সপ্তাহ খানেক পরে ধানকাটা পুরোপুরি শুরু হবে।
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা এস এম উমেদ আলী জানান, মৌলভীবাজারে ধানকাটা পুরোদমে চলছে। চলমান করোনা ভাইরাসে শ্রমিক সঙ্কট, ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষকরা রয়েছেন আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তায়। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, স্কাউট সদস্য, বেকার যুবকসহ নানা পেশার মানুষ ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় কৃষকরা মাঠের পুরো ধান ঘরে তোলতে পারবেন বলে বলে আশাবাদী।
শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কেটে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাস্তে হাতে নেমেছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, পৌর মেয়র মো: ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী, ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনসহ আরো অনেকেই। হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় নানা পেশার মানুষকে ধান কাটতে। এ সময় সুলতান আহমদ নামের এক স্কুল শিক্ষক ধান কাটতে দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যে কোন সময় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় এলকার বেকার যুবকরা এগিয়ে আসলে মাঠ থেকে দ্রুত পাকা ধান ঘরে তোলা সম্ভব। এ ছাড়াও তারা ধানের ন্যায্য মূলেরও দাবি করেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলায় প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমির পাকা বোর ধান। শ্রমিক সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্ত হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে জমির পাকা ধান কাটতে না পারলে কালবৈশাখী ছোবলে জমিতেই নষ্ট হবে ধান। ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আড়িয়াল বিলেই চাষ প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি। এসব জমির ধান কাটতে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক প্রয়োজন। চলতি মাসে ঝড় বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমে যাবে ফলে পাকা ধান আর কেটে ঘরে আনা সম্ভব হবে না। জেলার শ্রীনগরে শুধু আড়িয়াল বিলেই বোরো ধান চাষ হয় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এ জমির ধান কাটা নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় আছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা হাসান চৌধুরী জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কটকে দূরে ঠেলে চলছে ধান কাটার উৎসব। বৈশাখের শুরুতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ কাস্তে হাতে নিয়ে হাওরে নেমে ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে কৃষকরা নিজেই নিজের ক্ষেতের ধান কাটতে শুরু করেন। কৃষকদের পাশে কাস্তে হাতে দাঁড়িয়েছেন ওই এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
তবে পাকা ধান কাটা শুরু করলেও হঠাৎ করে বৃষ্টির সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। পানি বাড়তে থাকায় কৃষক ক্ষেতের আধাপাকা ধানও কেটে নিচ্ছেন। এলাকার অন্যান্য হাওরের নিচু জমিতেও পানি বাড়ছে। এতে করে কৃষকের দুশ্চিন্তাও আরো বাড়ছে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলায় ১৫৪টি ছোট-বড় হাওরে এবার জেলায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।