Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিযোগিতায় শঙ্কা

কোটি কোটি ডলার বাজি

রয়টার্স | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কোভিড-১৯ মহামারীর অবসান ঘটাতে একটি ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সরকার, দাতব্য সংস্থা এবং বড় ফার্মাগুলো কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। তবে সাফল্যের সম্ভাবনা খুব কম থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে এ ধরনের বিনিয়োগ করাকে বাজি হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সফল হলে রয়েছে বিপুল মুনাফা ও আধিপত্য অর্জনের সুযোগ।

প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার এবং নিয়মিত পর্যালোচনা চালাচ্ছে, কিন্তু এগুলো যে কার্যকর হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এগুলো অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তার পরেও তারা ভ্যাকসিনগুলোর কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য অর্ডার দিচ্ছে যা শেষ পর্যন্ত উৎপাদনের সম্ভাবনা কম। এটি এই মহামারীতে গতিতে মনোনিবেশ করা এবং ঝুঁকির সাথে যুদ্ধ করার নতুন দৃষ্টান্ত। এ বিষয়ে জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পল স্টাফেলস বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্কট এত বড় যে আমাদের প্রত্যেককে এই রোগকে থামাতে এখনই সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে হবে।’ প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন সরকারের সাথে অংশীদারি ভিত্তিতে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে ১ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পে কাজ করছে।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ভ্যাকসিনের মাত্র ৬ শতাংশ শেষ অবধি বাজারে আসতে পারে। প্রায়ই বছর ধরে এসবের গবেষণা চলে, কোনও ভ্যাকসিনের কাজ করার সম্ভাবনা দেখা না যাওয়া পর্যন্ত বড় বিনিয়োগও আসে না। তবে ২ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলা নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণের মুখে প্রচলিত নিয়মগুলো সব ভেঙ্গে পড়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য হল মাত্র ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডোজ তৈরির জন্য একটি ভ্যাকসিন সনাক্ত, পরীক্ষা এবং উপলভ্য করা।

এর মধ্যেই সরকার, বিনিয়োগকারী এবং ড্রাগ সংস্থাগুলো অর্থায়ন করে অভ‚তপূর্ব উপায়ে তাদের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ব্যয়কে বাড়িয়ে তুলছে। রয়টার্সের সাথে সাক্ষাৎকার দেয়া ৩০ টিরও বেশি ওষুধ সংস্থার কর্মকর্তা, সরকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং মহামারী-প্রতিক্রিয়া বিশেষজ্ঞরা সকলেই একমত যে, শুধুমাত্র নতুন করোনভাইরাসটির একটি ভ্যাকসিন দ্রুত বিকাশ করার জন্যই নয়, প্রস্তুত হওয়ার পরে এটি বিতরণ করার জন্যও ঝুঁকি নিতে হবে। তবে এই ঝুঁকির বিপরীতে সফল হতে পারলে বড় সুবিধাও রয়েছে। এটি ভ্যাকসিন প্রযুক্তি খাতে যোগ্যতার একটি প্রমাণযোগ্য ক্ষেত্র এবং খ্যাতি অর্জন ও শেয়ার মূল্য বাড়ানোর সুযোগ।

তবে দ্রুত ব্যাকসিন বিকাশের মধ্যে বিপদও রয়েছে। এমনকি মানব পরীক্ষায় এগুলো কার্যকর হলেও এটির সুরক্ষা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অন্তত কয়েক মাস সময় প্রয়োজন, কিন্তু অর্থদাতারা এ বিষয়ে খুব একটা সচেতন নন। সাধারণত, ভ্যাকসিনগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার আগে হাজার হাজার লোকের উপরে ক্লিনিকাল ট্রায়াল দেয়া হয়। অনেকের মতো মিনেসোটার রোচেস্টারের মায়ো ক্লিনিকের ভ্যাকসিন গবেষক ডক্টর গ্রেগরি পোল্যান্ডও মনে করেন, মানবদেহে ন্যূনতম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তৈরি একটি ভ্যাকসিন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, ‘এটি কীভাবে সম্ভব তা আমি বুঝতে পারছি না।’

আবার ভ্যাকসিন বিকাশের ইতিহাসও আশঙ্কাজনক। ২০০৯ সালের বসন্তে, সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোতে শুরু হয় এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ধনী দেশগুলো, যাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীদের সাথে অস্থায়ী চুক্তি ছিল তারা তা অবিলম্বে প্রয়োগ করেছিল। হ্যাচেট এবং অসংখ্য অফিসিয়াল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন সরবরাহে একচেটিয়াকরণ করা হয়েছে।’ কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ২৫০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার করেছিল এবং অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং ব্রিটেনেই বাকি সব ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়। পরে হু’র চাপের মুখে এই দেশগুলো তাদের ১০ শতাংশ মজুদ দরিদ্র দেশগুলির সাথে ভাগ করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ার কারণে, অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণ শুরু হওয়ার দীর্ঘ দিন পরে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৭৭ মিলিয়ন ডোজ প্রেরণ করা হয়েছিল, যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

এ কারণে গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে এবং বিশ্বব্যাপী যে কোনও সফল ভ্যাকসিনের সমান ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘যুগান্তকারী সহযোগিতা’র অংশ হিসাবে ৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্য বাড়াচ্ছে। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য এবং আমেরিকা জুড়ে দেশগুলো তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম দুটি ঔষুধ প্রস্তুতকারি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন তাতে অংশ নিতে অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়াইট হাউসের করোনভাইরাস টাস্কফোর্সের এক সদস্যে জানান, আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাকসিন বিতরণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের বিষয়টি এখনও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে বিবেচনাধীন রয়েছে। চীন কোন মন্তব্য করেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ