পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ব কাঁপছে করোনা মহামারীতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ইতোমধ্যে চারটি বাদে সব জেলায়ই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে করোনা ভীতি এখন দেশ জুড়ে। এ ভীতিতে চিকিৎসা পাচ্ছেন না সাধারণ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগী থেকে দীর্ঘদিন থেকে ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, থ্যালাসেমিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ভোগা রোগীরা। ক্যান্সারের রোগীকে বাঁচানোর জন্য কেমোথেরাপিসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ, কিডনি রোগীর দরকার জরুরিভাবে ডায়ালাইসিস করানো, হৃদরোগের রোগীর দরকার হার্টে রিং পরানো, ডায়াবেটিস রোগীর দরকার প্রতিদিন চিকিৎসকের ফলোআপ, থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন কয়েকদিন পর শরীরে ব্লাড নেয়া।
অথচ সবকিছু থমকে গেছে এক করোনার হুংকারে। আতঙ্কে করোনা রোগীদেরই যেখানে স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা-চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তারাই যেখানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সুচিকিৎসার পরিবর্তে অবহেলার শিকার হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা তো হাসপাতালে আসারও সাহস পাচ্ছে না। অনেকে জীবন বাঁচাতে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে গেলেও করোনার পরীক্ষার ফল নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। আর তাই বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন অনেক রোগী।
সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে সর্বত্রই একই ধরনের বিড়ম্বনায় ভুগছেন। সরকারি হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক করোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্যরা এবং বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতালের চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন না।
সরকারি-বেসরকারি কিছু হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়ার কথা বলা হলেও হাসপাতালে নার্স, ওয়ার্ডবয় ছাড়া কারও দেখা মিলছে না। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলেও তাকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর শ^াসকষ্টের কথা জানালে তো মহাবিড়ম্বনা। কিছুতেই সেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না বেসরকারি থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতালও। এভাবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুরও অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণ না থাকলে অন্য রোগীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ তাদের। একই সঙ্গে চিকিৎসা পাওয়া সবার অধিকার। কোনভাবেই রোগীকে ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকলে অন্য রোগীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ তার। তিনি বলেন, কোন রোগীর ইতিহাস যদি করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসার কোনো নজির না থাকে এবং রোগীর চিকিৎসা জরুরি হয় তাহলে চিকিৎসক অবশ্যই দেখবেন।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। যে কারণে পরিবহনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংক এবং গণমাধ্যমের মত কয়েকটি খাত চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে সরকারি হাসপাতাল চালু আছে। বেসরকারি হাসপাতালের সমিতিরও দাবি তাদের হাসপাতাল চালু আছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক-নার্স থাকলেও, যেহেতু হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বসছেন না এবং তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রয়েছে, সে কারণে সাধারণ রোগ কিংবা ক্রনিক অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে কোনো অসুস্থতায় ভোগা মানুষের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রোগবালাই তো থেমে নেই।
দেশে করোনার ভয়াবহতা বাড়ায় শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ এবং করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে সরকার। কিন্তু বিশেষায়িত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবা দেয়া কার্যত বন্ধ রয়েছে। যদিও কিছু বেসরকারি হাসপাতাল দাবি করছে তাদের কার্যক্রম চলছে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এমনকি সরকারি হাসপাতালেও রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। বেশিরভাগেই জরুরি বিভাগে চিকিৎসক-নার্স থাকেন, কিন্তু হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে কেউ থাকেন না। সেক্ষেত্রে সাধারণ রোগ এবং ক্রনিক অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে কোনো অসুস্থতায় ভোগা মানুষের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে ভুগছেন, তারা পড়েছেন বিপাকে।
ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগীর কেমোথেরাপির সিডিউল ছিল গত ২ এপ্রিল। কিন্তু সময়মতো বাধ সাধলেন চিকিৎসক। সাফ কথা, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া হাসপাতালেই ভর্তির সুযোগ নেই। রোগীর ছেলে বলেন, আমার মা ক্যান্সার পেশেন্ট হওয়া স্বত্তে¡ও তাঁকে কেমো দিতে পারছি না। কারণ চিকিৎসক এবং হাসপাতাল চাচ্ছে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট। কেমোথেরাপি যখন রোগীর বাঁচা-মরার প্রশ্ন, তখন চিকিৎসকের শর্ত পূরণে ছুটতে হলো করোনা পরীক্ষার ল্যাবে। ততোদিনে অবশ্য পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। দীর্ঘদিনের কিডনি রোগী রেজওয়ান উল্লাহর ডায়ালাইসিস দরকার হয় সপ্তাহে দুবার। কিন্তু রোগ-চিকিৎসক আলাদা হলেও শর্ত অভিন্ন। যে হাসপাতালে তার নিয়মিত ডায়ালাইসিস হয় তাদের চাওয়া করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, তার হৃদ-রোগাক্রান্ত মাকে নিয়ে ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে সপ্তম হাসপাতালে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান। রুহুল আমিন বলেন, আম্মাকে যখন ভর্তি করাতে নিলাম, সবাই বলে ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে যেতে, ওখানেই রিং পরানো হয়েছে। কিন্তু ওখানে সম্ভব না হওয়ায় অন্যখানে চেষ্টা করি। এরপর ছয়টা হাসপাতাল ঘোরার পর ঢাকার একটি হাসপাতাল তাকে ভর্তি করাতে রাজি হয়, কিন্তু তাদের শর্ত ছিল, আগে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ হলে ভর্তি করবে। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলে পরদিন তারা ভর্তি করে, কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। ভর্তির পরদিনই অবস্থা খারাপ হয় তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
করোনার সময়ে এমন সংকটে করোনা ছাড়া অন্য কোনো রোগও যেন অভিশাপ। চিকিৎসা চাইলে জটিলতা। আবার শর্ত পূরণের পথও বেশ কঠিন। উপসর্গ থাকা রোগীদেরই যেখানে করোনা টেস্ট করে কুলানো যাচ্ছে না, সেখানে অন্য চিকিৎসার জন্য করোনা টেস্টের দাবি খানিকটা বিলাসী ভাবনাই বটে।
রাজধানীর ক্যান্সার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য সময়ে যেখানে প্রতিদিন জরুরী বিভাগসহ হাসপাতালে কয়েক হাজার রোগীর ভিড় থাকত এখন তা অনেকটা স্থবির। এমনকি হাসপাতালের অর্ধেক বেডই ফাঁকা। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী মুশতাক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে রোগী কিছুটা কম। ১২৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। যা অন্যান্য সময়ে ২৫০ জন থাকে।
তিনি বলেন, খুব সতর্কতার সঙ্গে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। করোনা টেস্ট দেখতে চাওয়া হচ্ছে। তবে যে সব রোগীর জরুরীভাবে ভর্তি করা প্রয়োজন তাদেরকে ভর্তি করা হচ্ছে। সতর্কতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে থাকে। একজন আক্রান্ত হলে অন্যান্য রোগীদের বড় ক্ষতি হবে। তাই একজন থেকে যাতে অন্যজন আক্রান্ত না হয় সে জন্যই বাড়তি সতর্কতা। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাই একটু সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ীই রোগী ভর্তি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ডা. কাজী মুশতাক হোসেন।
সাধারণ সময়ে যেখানে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে বহির্বিভাগে এবং মূল ফটক ঘিরে শত শত রোগী থাকেন। রোগীর ভিড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ানোও দায়, সেখানে হাসপাতাল যেন একদম ফাঁকা। রোগী নেই বললেই চলে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নাজিমুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, রোগী খুবই কম হাসপাতালে। বারডেম-১ হাসপাতালে বর্তমানে ৪০ জন রোগী ভর্তি আছেন। বারডেম-২ (নারী ও শিশু) হাসপাতালে ২৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে করোনা পজিটিভ কেস পাওয়ায় শুধু আমাদের আইসিইউ বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য সবকিছুই খোলা। রোগী কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে ডা. নাজিমুল ইসলাম বলেন, রোগী আসার মতো যানবাহন পাচ্ছে না, তাই কম। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের চিকিৎসক-নার্সসহ সবাই রোস্টার দায়িত্ব পালন করছেন। রোগী ফিরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রোগীইতো পাচ্ছি না। কিভাবে ফিরিয়ে দিব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদেরকে যতোটা সম্ভব এখন বাসায় চিকিৎসা নেয়ার জন্যই বলব। ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী এবং সাধারণ অসুস্থতার জন্য মানুষকে সরকারি হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই সেখানে চিকিৎসা পাবেন। রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে সব হাসপাতালেই রোগী কিছুটা কম বলে উল্লেখ করেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ আছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলছে, প্রাইভেট চেম্বারে একই চেয়ারে অনেক রোগীকে বসতে হবে। তাই করোনার সংক্রমণের ভয় থাকে। পাশাপাশি এখন রোগীও যাচ্ছে খুবই কম। আর তাই অনেক হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।