Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লকডাউনের নামে সড়ক মহাসড়কে ফটোসেশন?

সড়কে প্রাইভেট কার কাঁচাবাজার, অলিগলি সর্বত্রই ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বছর ঘুরে মুসলমানদের ঘরে ঘরে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান এসেছে। এ মাসে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়া কার্যত বন্ধ। ১২ জনের বেশি মুসল্লি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন না। এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজ মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে পড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সারাদিন রোজা রাখার পর ঘরেই ইফতারির আয়োজন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রতি বছরের মতো এবার উৎসব করে রাস্তায় বা প্রকাশ্যে ইফতার বেচাকেনা নিষেধ। সবকিছু করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। গতকাল সরকারি ছুটি তথা অঘোষিত লকডাউনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কার্যকর লকডাউন কি হচ্ছে? সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় মানুষ আল্লাহর ঘর মসজিদে নামাজ পড়তে না গেলেও সামাজিক দূরত্ব কি কার্যকরভাবে বজায় রাখা যাচ্ছে? টিভি খুললেই সড়ক-মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়, কিন্তু যানবাহন চালাচল এবং মানুষের ভিড়, অলিগলিতে আড্ডা কি বন্ধ হয়েছে? প্রতিদিন দিনভর টিভির খবরে দেখানো হয় রাস্তায় রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরা। প্রাইভেট কার আটক করে মানুষের কাছে রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে। বৈশাখের রোদবৃষ্টিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী লকডাউন কার্যকর করছে সড়ক মহাসড়কে। কিন্তু রাজধানীর কাঁচাবাজার ও অলিগলির সড়কে রিকশার জট। এখানে সেখানে মানুষের জটলা। প্রথম কয়েকদিন গলিপথে দেখা গেলেও এখন প্রধান প্রধান সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রাইভেট কার। পাইকারী বাজারগুলোতে প্রতিদিন লেগে যাচ্ছে ক্রেতাদের ভিড়। সড়কের চেক-পয়েন্টে আটকানোর দৃশ্য টিভির লাইভ খবরেও দেখা যায় প্রতিদিন। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব রক্ষার যে লকডাউন তা মানা হচ্ছে না।

লকডাউনের মধ্যে দিনের বেলায় মাঝেমধ্যেই যাত্রাবাড়ীতে যানজট লেগে যায়। অনেক ফলের দোকান থাকে খোলা। ২০ থেকে ২৫টি রিকশা দাঁড়ানো থাকে যাত্রীর আশায়। পাশেই থানা। অথচ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তাকে যানজটমুক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি যাত্রাবাড়ী মোড়ে রাতের বেলায়ও রিকশা ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

গতকাল যাত্রাবাড়ী টু চিটাগাং রোডে দেখা গেল সাঁ সাঁ করে চলছে প্রাইভেট কার। ১৫ মিনিটে দাঁড়িয়ে থাকায় চোখে পড়লো ১০টি প্রাইভেট কার, ১৫টি সিএনজি এবং বেশ কয়েকটি ব্যাটারি চালিত রিকশা মূল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে। অনতিদূরে কাজলায় অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখা গেল প্রাইভেট কার চেক করতে। পুলিশের সামনে এক রিকশায় দু’জন যাত্রী যাতায়াত করছে, কাউকে কাউকে দাঁড় করিয়ে কেন ঘর থেকে বের হয়েছেন জানতে চাওয়া হচ্ছে; কিন্তু সকলকে ছেড়ে দেয়া হয়। শনির আখড়ায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল কাঁচাবাজারে একজনের গায়ের ওপর উঠে আরেকজন পণ্য কিনছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি অদূরে দাঁড়িয়ে।

দুপুরে যাত্রাবাড়ীর মোড়ের চারদিকেই রিকশা দাঁড়িয়ে। শহীদ ফারুক সড়কে টিভি ক্যামেরা দেখেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রিকশাগুলোকে সরিয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠলেন। পথচারীদের আটকিয়ে কেন বের হয়েছেন জানতে চাচ্ছেন। অদূরে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, সরেজমিনে খবর সংগ্রহ করতে বের হওয়া টিভি ক্যামেরার সামনে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালনের ফিরিস্তি দিচ্ছেন।

টিভি সাংবাদিক জানালেন, সারা ঢাকা শহরে প্রায় অভিন্ন চিত্র। মূল সড়কগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেলেও শহরের অলিগলিতে মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে। চেষ্টা করেও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে পারছেন না। তবে টিভি ক্যামেরা দেখলেই তৎপর হয়ে উঠছে। যেন দায়িত্ব পালন ক্যামেরায় সামনে ফটোসেশন করা।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে থাকা ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বাজারে মানুষের ভিড় ও সড়কে এতো যানবাহন দেখে বললেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার স্বার্থে পবিত্র রমজানে মসজিদের তারাবিহ নামাজ সীমিত করা হয়েছে; অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই বাজারে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে; রাস্তায় বেশুমার যানবাহন চলাচল করছে। এটা লকডাউন না লকডাউনের ফটোসেশন?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ