পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস মানুষের জীবন এবং জীবিকা উভয় দিকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। শুধুই হুমকি নয়। তার আঘাত-অভিঘাতগুলো পড়ছে একের পর এক। ওলোট-পালট হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রা। পরিবার-পরিজনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখে অন্ধকার। কাজ নেই। খাবার নেই। এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা অগণিত। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে অসহায়-দুস্থ নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধের মিছিল। দুঃখী মানুষের কাতার বাড়ছেই।
টানা ছুটি, লকডাউন, শাটডাউনে সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় সবকিছুই বন্ধ। কাজকর্ম এবং আয়-রোজগার হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে এক থেকে দেড় কোটি পরিবারের ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ। দিন এনে দিনে খাওয়া লোক, দিনমজুর, ঠেলাগাড়ি-ভ্যান চালক, রিকশা চালক, হকার. কুলি, ঘাট শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক বা রাজমিস্ত্রি, জেলে-মাঝি-মাল্লা, ক্ষুদ্র দোকানি ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প শ্রমিক-কারিগর, গৃহকর্মী, ভাসমান হকার, হাফিজে কোরআনসহ আলেম-ওলামা, খন্কাডলীন চাকরি, পেশা, টিউশনিতে থাকা শিক্ষার্থী, নাপিত বা নরসুন্দর, পোলট্রি ও ডেইরি খামারী-শ্রমিক, রফতানিমুখী শাক-সবজি চাষী, টুপি, নকশি ও সৌখিন পণ্যদ্রব্য তৈরিকারক থেকে শুরু করে বর্তমান পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশের আয়-রুজিহারা মানুষজনের শ্রেণি-পেশার সংখ্যা হিসাব শেষ করা যাবে না। গার্মেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণায় অসংখ্য শ্রমিক বাড়িঘরে। তারাও আপাতত কর্মহীন।
করোনা-কারণে অনেকেরই পরিবারে দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটছে না। চুলা জ্বলেনা এমন পরিবারও কী কম? অল্পস্বল্প ক্ষুদ্র পুঁজি কারো জমা থাকলেও ইতোমধ্যে ভেঙে খেয়ে তাও নিঃশেষ। বাঁচার উপায় কী? এক আধ-পেট খেয়ে না খেয়ে চাপাকান্নায় গুমড়ে মরছে লাখো পরিবার। লোকলজ্জায় অনেকেই দুঃখ-যাতনার কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না। জটর জ্বালাও সইবার নয়! মাহে রমজানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ওদের দুঃসহ দুঃখ-কষ্ট মর্মবেদনা অবর্ণনীয়।
বাংলাদেশ যেসব পরিচয়ে পৃথিবীর বুকে অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তার অন্যতম হচ্ছে শান্তি-স¤প্রীতি, অতিথিপরায়ণতা, প্রতিবেশী ও গরীব আত্মীয়, এতিমের হক আদায়ে অত্যধিক স্পর্শকাতর যত্মশীলতা। দরিদ্র প্রতিবেশী উপোস ঘরে বসে কাঁদছে, আর স্বচ্ছল প্রতিবেশী নির্বিকার তা দেখছে বাংলাদেশে তা কী করে ভাবা যায়? করোনা-কারণে কোটি কোটি মানুষ আজ জীবিকাহারা। তারা অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের কিছুটা খাবার-দাবার, অর্থকড়ি ভাগাভাগি করে নেবে- এই তো বাংলাদেশের ছবি প্রতিচ্ছবি। এই তো দেশ-জাতির গর্বের ঐতিহ্য।
তাছাড়া মাহে রমজানের এ সময়ই অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। রোজায় দান-সাদকা, সাহায্য-সহায়তা বিলিয়ে দেয়ার বিনিময়ে আল্লাহ একটি দানের বিন্দু-কণাকে সত্তর সহস্র গুণে উন্নীত করেই সওয়াব উপহার দিয়ে থাকেন। জাকাত যাদের উপর ফরজ এই রমজান মাসই তা আদায়ের উপযুক্ত সময়। জাকাতের উৎস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা জোগানো অনায়াসেই সম্ভব। আর সম্ভব অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া।
করোনাকালে চারপাশে সমাজের দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত বঞ্চিত অসহায়দের পাশে দাঁড়ানের প্রসঙ্গে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বললেন, সরকারের একার চেষ্টায় এই মহাদুর্যোগে মানুষের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দেয়া নিশ্চিত নয়। দেশের স্বচ্ছল ভাগ্যবান শ্রেণির নাগরিকবৃন্দ দান-সাহায্য সহায়তার উদার মন নিয়ে একযোগে এগিয়ে এলে মানুষ কেউ অভূক্ত থাকবে না। খেয়ে-পরে বাঁচবে।
যেমন- এরজন্য বাংলাদেশ চেম্বার ফেডারেশন, চিটাগাং, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের প্রধান জেলাগুলোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রিসমূহ, বিজিএমইএ, বিকেইমইএ, শিপিং, সিঅ্যান্ডএফ, শিল্পোদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, বিভিন্ন খাতের পণ্যসামগ্রী রফতারিকারকগণ, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথভাবে গঠিত চেম্বার ইত্যাদি সংগঠন-সমিতি। সেই সাথে দেশের শিল্প গ্রুপ বা পরিবার, বহুজাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যিক কোম্পানিসমূহ সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করলে করোনার ধকলে পড়া দেশের কোটি মানুষের চরমতম দুর্দশা সহনীয় মাত্রায় রাখা কঠিন নয়। অন্তত জুটবে তাদের মুখে সামান্য খাবার। সাহরী ইফতার।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করছে। কাজ-কর্মহীন বেকার লোকের সংখ্যা আগামীতে আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। দেশের এক কোটি পরিবারের ৫ কোটি লোকের জন্য সরকারের ঘোষিত পদক্ষেপ অনুযায়ী রেশনে খাদ্য প্রদান অবিলম্বে শুরু করা প্রয়োজন। প্রান্তিক জনগণের জন্য বেকার ভাতা চালুসহ তাদের সুরক্ষায় সময়মতো পদক্ষেপ নেয়া না হলে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হবে। সরকারিভাবে প্রান্তিক সব মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান করা সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে ভারতের কেরালা রাজ্য সরকারের সাফল্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি খাতে সরকারকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। বোরো ফসল ঘরে উঠছে, কিন্তু আউশ-ইরি আবাদ উৎপাদন বৃদ্ধি প্রয়োজন। এক সময় আউশে ৩০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হতো। এখন তা নেমে গেছে ১০ লাখ টনে। এর পাশাপাশি অসহায়দের পাশে সামাজিক উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ ইনকিলাবকে বলেন, করোনা-সঙ্কটকালে সমাজের অসহায় মানুষের খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণে সরকারি-বেসরকারি উভয় উদ্যোগে জোরালো তৎপরতা প্রয়োজন। আমাদের দেশে দান-সাহায্য সহায়তার যে বলিষ্ঠ ঐতিহ্য তা ধারণ ও লালন করে সবারই উদারমনে অসহায়-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে হবে। তাদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সবারই। এরজন্য স্বচ্ছল জনগোষ্ঠিকে আরো এগিয়ে আসা উচিৎ। মাহে রমজানে জাকাত আদায়ে সবাই যদি তৎপর হন তাই হবে বড় আশার কথা। তাহলে অসহায় মানুষের কষ্টভার অনেকটাই লাঘব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।