Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌলভীবাজারে ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায়

নানা পেশার মানুষ ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন

এস এম উমেদ আলী (মৌলভীবাজার থেকে) | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৩৯ পিএম

মৌলভীবাজারের হাওরে বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ায় একযোগে ধান কাটতে নেমেছেন। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, স্কাউট সদস্য, বেকার যুবকসহ নানা পেশার মানুষ ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন। চলমান করোনা ভাইরাসে শ্রমিক সংকট, ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষকরা রয়েছেন আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তায়। তবে এক সপ্তাহ সময় পেলে স্থানীয় কৃষকরা মাঠের পুরো ধান ঘরে তোলতে পারবেন বলে বলে আশাবাদী।
করোনা পরিস্থিতি ও মৌলভীবাজার জেলা লকডাউন থাকায় বাহির থেকে কোন লোকজন প্রবেশ করতে পারছেনা। এতে করে চলতি মৌসুমে বোরো ধান তোলায় শ্রমিক সংকট এ জেলায় দেখা দিয়েছে। তবে এবছর ভিন্নতা রয়েছে ধান কাটায় নেমেছেন নানা পেশার মানুষ। কেউ ধান ঘরে তোলতে সাহায্য করছেন, আবার কেউ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতেও মাঠে নেমেছেন।
ধান কেটে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাস্তে হাতে নেমেছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী সহ আরো অনেকেই।
হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় নানা পেশার মানুষকে ধান কাটতে। এ সময় সুলতান আহমদ নামের এক স্কুল শিক্ষক ধান কাটতে দেখা যায়। তিনি জানান কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার ইছাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি ও পাশাপাশি স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের অন্যান্য নিজের জমিতে ধান কাটতে নেমেছেন। তিনি বলেন করোনার কারনে গ্রামে অনেক মানুষ তার মূল পেশায় যেতে পারছেনা। হাওরে উৎপাদিত ধান কাটতে কর্মহীনরা নেমে পরলে ধান মাঠে পরে থাকবেনা।
ভুকশিমইল এলাকায় কৃষক ও ক্ষুদ্র কাপড় ও কসমেটিক্স ব্যবসায়ী সিরাজ আহমদ জানান, প্রায় ১ মাস থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন কর্মহীন। হাতে এখন খরচ করার মতো কোন টাকা নেই, তাই নিজের বর্গা দেয়া জমির ধান নিজে কাটতে এসেছে। তিনি জানান খরা ও খাল খননের কারেনে প্রয়োজনীয় সেচ না দিতে পারায় তার জমিতে ফলন কম হয়েছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, দেশের এই সঙ্কটময় মুহুর্তে লকডাউন থাকার কারনে বাহিরের শ্রমিকরা বোরোধান কাটতে আসতে পারছেননা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কাউয়াদিঘী হাওরে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আহবানে আমরা অসহায় ও দরিদ্র কৃষকের ধান কাটার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছিলো না, তাই জুড়ী উপজেলার কৃষকদের অনুপ্রেরণা যোগাতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
রাজনগর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, লকডাউনের কারনে বাহিরের শ্রমিক না আসায় অন্তেহরী গ্রামে আরো লোকজন নিয়ে তিনি নিজেই ধান কেটে কৃষকের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। চলতি বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫’শ ৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরের নি¤œাঞ্চলে আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৭’শ ৫৪ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ৪৮ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। চা শ্রমিক সহ নানা পেশার বেকার যুবকরা ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বাহির থেকে শ্রমিক আনার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে, চলতি মাসের মধ্যেই হাওরের ধান ঘরে তোলা সম্বব বলে। আউস, আমন ও বোরোধান মিলিয়ে জেলায় আবাদ হয়ে থাকে প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬ শত ২৭ হেক্টর জমি। আউস মৌসুমে এ জেলায় অনেক জমি অনাবাদি থাকে। চলতি আউস মৌসুমে আমরা স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে চাষের আওতা বৃদ্ধির জোর চেষ্ঠা চালাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যে কোন সময় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় এলকার বেকার যুবকরা এগিয়ে আসলে মাঠ থেকে দ্রুত পাকা ধান ঘরে তোলা সম্বব। এ ছাড়াও তারা ধানের ন্যায্য মূলেরও দাবী করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ