পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টালমাটাল বিশ্ব। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই এর ভয়াবহতা বাড়ছে। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৯টি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্তত ২১টিতে সংক্রমণ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া লোকজনের মাধ্যমে। আর নারায়ণগঞ্জে সংক্রমণ হয়েছে ইতালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এদিকে আক্রান্ত অন্য জেলাগুলোর মধ্যে কয়েকটি সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে যাওয়া করোনা রোগীর মাধ্যমে। তবে বেশ কয়েকটি জেলার সংক্রমণের কারণ এখনও অস্পষ্ট। এদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। এখনো রোগীর সংখ্যা শতক না ছাড়লেও রংপুর আর বরিশাল বিভাগেও সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা আছে। বিপরীতে এখন পর্যন্ত সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ কিছুটা কম। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। করোনার সংক্রমণের জন্য ঢাকা যেন এক আতঙ্কের নাম। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের ৮৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে। যার মধ্যে আবার প্রায় ৫০ শতাংশই রাজধানীতে। গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ৪ জন রোগী মারা যাওয়ার তথ্য এসেছে তাদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা। বিশেজ্ঞদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় অধিক সংখ্যক আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে- মানুষের নিয়ম-নীতি না মানার প্রবণতা, স্বাস্থ্য বিধি না মানা, বাজারগুলোতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ। একই সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গাছাড়া ভাবও এজন্য অনেকটাই দায়ী।
পুলিশ রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো তদারকি করলেও অলিগলিতে অবাধে বিচরণ করছে মানুষ। এক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেনা এমন অভিযোগ রাজধানীর প্রায় সব এলাকার বাসিন্দাদের। মিরপুরের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোরতা দেখিয়ে ফটোসেশন করে। ক্যামেরা দেখলে তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। অথচ প্রধান সড়ক বাদ দিলে ভিতরে সব ধরনের দোকানপাটই খোলা। বেলা দুটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করার নিয়ম থাকলেও মূল রাস্তার দোকানগুলো বন্ধ হচ্ছে। অলি-গলিতে খোলা থাকছে সবই।
অন্যদিকে, রাজদানীর কাঁচাবাজারে ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষের অবাধ বিচরণ। গাদাগাদি করে মানুষ বাজারে কেনাকাটা করছে। অথচ সেখানে সারাদিনেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কেউ যায় না বলে খোদ বিক্রেতারাই জানিয়েছেন। কাওরানবাজারে হাজার হাজার মানুষের জটলা দেখতে দেখতে মানুষ এখন হতাশ। যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ার বাজারে হাজার হাজার মানুষ দেখে কেউ বুঝবে না করোনায় গোটা বিশ্ব এখন কাতর। এখানকার মানুষগুলো যেমন অসচেতন তেমনি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশও দায়িত্বহীন। এ নিয়ে অনেকেই থানায় বা ৯৯৯ ফোন করেও কোন ফল পাননি।
এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৯ জন। এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩১ জন। জেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এরপরেই রয়েছে গাজীপুর ও নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। চারটি কারণে এসব জেলায় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইইডিসিআর’র তথ্যমতে, দেশের প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ওই দিন তিনজন রোগী পাওয়া যায় রাজধানী ও এর বাইরে মাদারীপুর জেলায়। প্রথমদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর ঝুঁকিপূর্ণ এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংক্রমণ রোধে এ এলাকা লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন করার পর ক্লাস্টার এরিয়া মাদারীপুরে সংক্রমণ বিস্তার বেশি না হলেও ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এর পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করায় সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। এর মধ্যে বেশি সংক্রমণ ছড়াতে থাকে গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের যেসব স্থানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজধানী। এর পরই আছে ঢাকা বিভাগের চারটি জেলা- গার্মেন্টস অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, শিল্প এলাকা নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ। এসব জেলায় ক্লাস্টার এরিয়ার সঙ্গে মুভমেন্ট বেশি থাকা, প্রবাসীর সংখ্যা বেশি, ঘনবসতি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।
ঢাকায় রোগী বাড়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশের আটটি বিভাগের ৫৯টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। এই ভাইরাসের শনাক্তকৃত রোগীর শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ হচ্ছে ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রোগী ঢাকা সিটির। এসব জেলায় মূলত চারটি কারণে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
প্রথমত, এসব জেলায় বিদেশ ফেরত মানুষের সংখ্যা বেশি। অনেক প্রবাসী আছেন, যারা কোয়ারেন্টাইনের শর্তগুলোতে ঠিকভাবে পালন করেননি। দ্বিতীয়ত, এখানকার মানুষের মুভমেন্ট বেশি হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সংক্রমিত এলাকার মানুষের সেখানে মুভমেন্ট রয়েছে। এতে করে সংক্রমণ বাড়ছে। তৃতীয়ত, এলাকাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। ঘনবসিতপূর্ণ এলাকায় বেশি সংক্রমণ ছড়ায়। চতুর্থত, এসব জেলায় মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই হাট-বাজার, বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন, গণজমায়েত করছে। সাধারণ জীবন-যাপন করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বিধায় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ শহীদ নজরুল ইসলাম মেডিকল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, এখানে করিমগঞ্জে প্রথম যিনি মারা গেছেন ওই রোগী ঢাকা থেকে এসেছিলেন। তার চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকসহ অনেকে তার সংস্পর্শে এসেছেন। ছড়ানোর এটি একটি কারণ। দ্বিতীয়ত, তাড়াইল যে রোগী শনাক্ত হয়েছেন তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি অনেকের সংস্পর্শে গিয়েছেন। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের মানুষ লকডাউন বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। এটিও একটি কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস হচ্ছে ইমিগ্র্যান্ট ভাইরাস। এই ভাইরাসটি বিদেশ ফেরত মানুষের মাধ্যমে দেশে এসেছে। প্রথমে বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করেছেন। এ কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সংক্রমণ বেশি হয়েছে। এর পর সংক্রমিত মানুষ বিভিন্ন জেলায় গেছে এবং সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গাজীপুরে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, কারণ নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশি মানুষ সেখানে গেছেন। এভাবে আস্তে আস্তে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে গেছে। মূলত: বিদেশ ফেরত মানুষ ঢাকায় বেশি অবস্থান করেছেন সেজন্য ঢাকায় এর প্রকোপ বেশি।
ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে আইসোলেশনে রাখতে হবে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। তা হলে সংক্রমণ রোধ করা যাবে।
এদিকে রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও শয্যাসংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে ঢাকা মেডিকেলে ৩০০ শয্যার এই করোনা ইউনিট চালু হবে। পাশাপাশি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এর আগে রাজধানীতে ছয়টি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকায় শুরুতে শুধু কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চলছিল। গতকাল শুক্রবার নয়টি হাসপাতালের ছয়টিতেই করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন।
নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং বেসরকারি তিন হাসপাতাল রিজেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা ও মিরপুর এবং নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন।
বহির্বিভাগ চালু থাকলেও মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিলেন না। আর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালটি এখনো রোগী ভর্তির উপযোগী হয়নি। আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নির্ধারিত নয়টি হাসপাতালে শয্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৩০টি। মুগদা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলের ৮০০ শয্যা যুক্ত হওয়ায় করোনা চিকিৎসার শয্যাসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ১৩০।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। কিন্তু নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রেলওয়ে, মহানগর এবং মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে আইসিইউ সুুবিধা নেই।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত অধিকাংশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন। বাকীগুলোও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুগদা হাসপাতালে ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিটে রোববার থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু হবে। যে সব হাসপাতালে আইসিইউ নেই সেসব হাসপাতালে রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের সংখ্যা কম তাই বড় সড়কগুলো তদারকি করছে। অলি-গলি-বাজারে পুশিল দেওয়া যাচ্ছে না। তবে করোনা থেকে বাঁচতে এবং সংক্রমণ রোধে প্রয়োজন সবার বাড়তি সতর্কতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।