Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চ্যালেঞ্জের মুখে সচিবরা

জনপ্রতিনিধিদের বদলে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব আমলাদের হাতে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনায় গোটা বিশ্ব টালমাটাল। বাংলাদেশে চলছে সরকারি ছুটি এবং ঘরে থাকা কার্যক্রম। এ অবস্থায় কর্মহীন নিম্নআয়ের কামার-কুমার-জেলে-তাঁতী-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-শ্রমিক শ্রেণীর মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া কর্মকান্ড চলছে। দেশের নিম্নআয়ের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। বরাদ্দও দেয়া হয়েছে বিপুল। কিন্তু তালিকা তৈরিতে দলীয়করণ এবং সারাদেশের কিছু জনপ্রতিনিধির ত্রাণ চুরির জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার।

সে জন্যই ৬৪ জেলায় ত্রাণ তৎপরতা দেখভালের জন্য জনপ্রতিনিধিদের বদলে সচিব পর্যায়ের ৬৪ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের (সচিব) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেয়ায় তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। মানুষ মনে করছে সরকারি কর্মকর্তারা দলমতের ঊর্ধ্বে সকলের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন। কিন্তু সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। সরকারি দলের সেই নেতাদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে সচিবদের সবার মাঝে ত্রাণ বিতরণ করাই কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। তবে বিশিষ্টজনেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা কার্যকরে সচিবরা দৃঢ়তা দেখালে ত্রাণ বিতরণে তারা সফল হবেন। তবে প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার মতো ইদলদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে গোটা আমলাতন্ত্র বিতর্কের মুখে পড়বে।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়ে মনে করছেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে সচিবরা। ত্রাণে বিরতণে রাজনৈতিক কারণে যাতে কেউ বাদ না পড়ে সেগুলো দেখা হবে।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগে সারাদেশে নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্ত কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ত্রাণ। সেই ত্রাণ সরকারি দলীয় জনপ্রতিনিধি এবং নেতা-কর্মীরা ত্রাণের চাল আত্মসাত ও লুট করছে। আবার দলীয়ভাবে তালিকা করায় কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাল চুরি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে অনিয়ম ঠেকাতে এবং সঠিকভাবে তালিকা প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা প্রতিরোধ এবং এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের জন্য ৬৪টি জেলায় ৬৪ জন সচিব ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেন। এসব সচিবদের দায়িত্ব দেয়ার কারণে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তা ডিসি-ইউএনও এবং ত্রাণ কর্মকর্তারা সরকারি দলের এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের চাপ থেকে রক্ষা পেয়েছে। সচিবদের কারণে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের সাধারণ মানুষরা খুশি।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি ত্রাণের চাল চুরি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে অনিয়ম, স্বাস্থ্যখাতের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনিয়ম, স্বাস্থ্যখাতের সা¤প্রতিক ও অতীত বিভিন্ন কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে ইতোমধ্যে ৩৫ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় সচিব ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেয়ার পর জাতীয় সঙ্কটে সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অনেকাংশেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।

করোনাভাইরাস এবং এ থেকে সৃষ্ট সঙ্কটময় সময় মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখা, দিনমজুর, কর্মহীন মানুষদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের ওপর দেশে দেশে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের দায়িত্ব দিয়েছেন। শুরুতে তৃণমূল স্তরের কতিপয় জনপ্রতিনিধি, মনুষ্যত্বহীন হাতে গোনা কয়েকজন রাজনৈতিক পদাধিকারী ত্রাণের চাল চুরির সাথে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকেই এক বিরাট প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। আর সেই শঙ্কা, আস্থাহীনতা থেকে জেলায় জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার দায়িত্বে থাকা পরিবেশ, বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণায়লের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দেয়ার পরে কুড়িগ্রামের সকল জনপ্রতিনিধি, ডিসি, এসপি এবং সেনাবাহিনীর সদস্য র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা সঠিকভাবে তালিকা করেছেন। হবিগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, আমার জেলায় দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব স্যার সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। ত্রাণের তালিকা তৈরিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর জনগণে আস্থা বাড়বে। প্রশাসনের উপর বাড়া মানে সরকারের উপর জনগণের আস্থা বাড়বে।

রাজনীতিকরা যাই বলুক, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সঙ্কটময় মুহূর্তে আমলারা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে যাদের ত্রাণ প্রয়োজন তাদের ত্রাণ দেবেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা নিদারুণ কষ্টে থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারছেন তা তাদের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আবশ্যক। নানা কারণে আমলাদের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরারা সেই আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠবেন সে প্রত্যাশা সবার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ