পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাওর অঞ্চলে চলছে ধান কাটার উৎসব। প্রথম দিকে শ্রমিক সংকটে কৃষকের কপালে যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল তা সরে গেছে। কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এরিমধ্যে হাওরের প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।তবে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের আগাম বন্যা সতর্কতায় বাকি অর্ধেক জমির ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকেরা বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, হাওরের পুরো ফসল কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি মাসের শেষের দিকে সীমান্তের ওপার থেকে অর্থাৎ ভারত থেকে নেমে আসতে পারে পাহাড়ি ঢল। গত দু’তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কষৃকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দু’তিনদিন হাওর এলাকায় ভারী বর্ষনের সম্ভবনা রয়েছে। এ ছাড়া পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এসব অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে পানির ঢল নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই সতর্কবাণীর পর গত বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জের হাওরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দ্রুত ধান কাটার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষেতের ধান ৮০ভাগ পাকলেই কৃষকদের কেটে ফেলতে বলা হচ্ছে।
কৃষকদের ধান দ্রুত কাটার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দূর করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, অন্য সে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে, তারাও ধান কাটার কাজে নিয়োজিত হবেন। ইতোমধ্যে ধান কাটার জন্য পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে অনেক শ্রমিক চলে এসেছে।
শ্রমিকের পাশাপাশি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড়ে আসার ভিডিপি’র চার হজার সদস্য, বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসার দুই হাজার শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাস্বেচ্ছাশ্রমে কাস্তে হাতে ধান কাটছেন। এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। মানুশ মানুষের পাশে দাড়ানোর এ ঘটনা সত্যি বিরল।
আনসার ও গ্রাম গ্রতিরক্ষা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অসহায় বোরো চাষিদের ধান কাটার বিষয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন এই বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। পরে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সিলেট রেঞ্জের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। সুুনামগঞ্জের জেলা কমান্ডান্ট এনামুল খাঁনের সমন্বয়ে ধান কাটছেন এই বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ৩৩টি হাওড়ের এবং সমতলের ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটার লক্ষ্য নিয়ে ১১টি উপজেলা থেকে তরুণ আনসার-ভিডিপি ৪ হাজার সদস্য নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল থেকে জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় এবং ২২ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, জগন্নাথপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ধান কেটেছে তারা।এভাবে পর্যায় ক্রমে প্রতিদিনই তারা ধান কাটবে। এছাড়া জেলায় ধান কাটার জন্য ১২৬টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ২১২টি রিপার মেশিন সরবরাহ করেছে কৃষি-বিভাগ।
সুনামগঞ্জ জেলার পাশাপাশি সিলেট জেলার ১২টি উপজেলায় ৮০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং মৌলভীবাজার জেলার দুটি উপজেলায় ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির ধান কাটতে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আনসার-ভিডিপি সদস্যরা নিন্ম আয়ের শ্রমিক। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। রয়েছেন শিক্ষকবৃন্দও।
নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা কাজী মো. মোফাজ্জল হোসেন সবুজ জানান, নেত্রকোণা জেলার হাওর এলাকার ধান অর্ধেকের চেয়ে বেশি কাটা হয়ে গেছে। বাকি জমির ধান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা শেষ হয়ে যাবে। বিআর ২৮ ধান কাটা শেষ এখন বিআর ২৯ কাটা দু’একদিনের মধ্যে শুরু হবে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোস্তফা কামালের বরাদ দিয়ে তিনি জানান, উপজেলার হওরের ৬হাজার ৫০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৫ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি না হলে চলতি সপ্তাহে বাকি জমির ধান কাটা শেষ হবে। সুনামগঞ্জ জেলায় দেশের সবচেয়ে বড় হাওরগুলো রয়েছে। এ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সাতগাঁয়ের কৃষক আছাব আলী তার পাঁচ একর জমির মধ্যে তিন একর জমির ধান ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছেন। এ জমিতে তিনি বিআর-২৮ ধান লাগিয়েছিলেন। বাকি দুই একর জমিতে বিআর-২৯ ধান। এ ধান পাকতে আরও তিন চারদিন সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
ধর্মপাশার কৃষি অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলার অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেকও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা শেষ হবে বলে আশা করি। এ এলাকায় এখন পর্যন্ত তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আগামী এক সপ্তাহ খুব বেশি ভারি বৃষ্টিপাত না হলে ধান কেটে ঘরে তুলতে সমস্যা হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।