Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিড়ম্বনা নার্সদের পিছু ছাড়ছেনা

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৪ এএম

করোনাভাইরাসের ভয়ে হোটেলের রাধুনিসহ স্টাফরা পালানোয় বিপাকে পড়তে হয় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের। দায়িত্বরত নার্সদের শুরুর দিকে দেয়া হয়নি মান সম্মত খাবার। এখনো পাচ্ছেন না মানসম্মত পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক। এছাড়া দুই জনের থাকার স্থানে ৩ জনকে রাখা হচ্ছে। কয়েকজন ডাক্তার-নার্স করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অনভিজ্ঞ নার্সদের দিয়ে চালানো হচ্ছে সব ধরণের কাজ। নার্সদের করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত প্রথম এই হাসপাতালটি যেন ‘নেই নেই এবং নেই’-এর ওপর ভিত্তি করে চলছে। চলছে এক ধরণের তথৈবচ অবস্থা। ইতোমধ্যে এসব চিত্র উঠে এসেছে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ভাষ্য ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যে। এবার অব্যবস্থাপনার বিষয়টি উঠে এসেছে হাসপাতালটিতে কর্মরত নার্সদের কথায়।

সেবাপ্রদানকারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু, সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত এখনও। ইতোমধ্যে দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্স ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা নিজেরা সংক্রমণের ভয়ে উৎকণ্ঠিত থাকায় সঠিক ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না এখানকার রোগীরা- এই অভিযোগ প্রতিদিনের।
হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের দিন পার হয় চরম প্রতিকূলতার মধ্যে। অনেকটা আতঙ্কে থাকায় প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না নার্স বা চিকিৎসকদের। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অভিজ্ঞ নার্সদের পরিবর্তে প্রেষণে যোগ দেওয়া নার্সদের পাঠানো হচ্ছে রোগীদের কাছে। আইসিইউ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরও নতুন প্রেষণে আসা নার্সদের দিয়েই চালানো হচ্ছে আইসিইউর কাজ। এসব অব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে নতুন প্রেষণে আসা ৪১ জন নার্সের বক্তব্যে। এ সংকটের সমাধান চেয়ে গত বৃহস্পতিবার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন সেখানে কর্মরত প্রেষণে আসা নার্সদের মধ্যে ৪১ জন।
এ নার্সরা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউট, সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসেছেন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তেকয়েকজন নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার আতঙ্কে এখানকার ডাক্তার-নার্সরা। আর তাই যেসব কাজ ডাক্তারের করার কথা সেগুলোও ডাক্তাররা না করে প্রেষণে আসা নার্সদের করতে বাধ্য করছেন। যেমন- রোগীর প্রেসার মাপা, প্রেসার কম-বেশি হলে নার্সরা রিপোর্ট করার পর তাদেরকেই ওষুধের নাম বলে দিয়ে আসতে বলা হয়। কোনো রোগীর শ্বাসকষ্ট হলেও নার্সদেরকে বাধ্য করা হয় ওষুধ নিয়ে তার কাছে যেতে, যেখানে ডাক্তারের যাওয়ার প্রয়োজনটাই বেশি।
এমনকি, কোনো নার্স না যেতে চাইলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। ভয় দেখানো হচ্ছে এভাবে যে, রোগী মারা গেলে দায় আপনাদের। নার্সদের আবেদনে তারা মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী-পিপিই বা মানসম্মত মাস্ক না পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও অভিযোগ করেছেন।
এ ছাড়াও, ইতোমধ্যে কয়েক জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সবার মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।
আবেদনে তারা এসব সংকটের সমাধান চেয়েছেন। তা না হলে মানবিক বিবেচনায় তাদের প্রেষণাদেশ বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরত নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন সেই ৪১ জন নার্স।
নার্সদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রত্যেকের কাজ আলাদা। বাই রোটেশন প্রত্যেকের কাজ কি হবে তা বলে দেওয়া আছে। বিষয়টি শুনেছি, এটা ওখানকার নার্সদের নের্তৃত্ব নিয়ে কিছুটা হয়তো সমস্যা। তবে একজনের কাজ যদি অন্যকে দিয়ে করানো হয় এটাও ঠিক নয়। হাসপাতালের পরিচালককে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ