Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম বন্দরজট ৫০ শতাংশ হ্রাসের আশাবাদ

আইসিডিতে যাচ্ছে আরো কন্টেইনার : পরিদর্শনে সন্তুষ্ট নৌ-প্রতিমন্ত্রী

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:২৫ পিএম

করোনা ভাইরাস মহামারীর মহাদুর্যোগে ২৬ মার্চ থেকে টানা সাধারণ ছুটি, শাটডাউন, লকডাউনে সমগ্র দেশের প্রায় সবকিছুই বন্ধ এবং অচল-স্তব্ধ। তা সত্তে¡ও চরম ক্রান্তিকালে দেশ-জাতির প্রয়োজন পূরণে এবং অর্থনীতির চাকা যতদূর সম্ভব সচল রাখতেই দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সার্বক্ষণিক (২৪/৭) সচল রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর মানে বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড। অর্থনীতির লাইফ লাইন। প্রধান এই বন্দরের স্লোগানটি হলো- ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস’। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের শিল্প-বাণিজ্য, ব্যবসা-বিনিয়োগ সবমিলিয়ে অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সর্বোপরি হাজার বছরের সুপ্রাচীন আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের মানচিত্রে চট্টগ্রামের বিশ্বসেরা অবস্থান। বন্দর বন্ধ থাকা মানে দেশের হার্ট বন্ধ থাকা। ভাবাই যায় না। তাছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম, জরুরি সেবাপণ্যসহ খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য আমদানি ও খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। যাচ্ছে সারাদেশে।
অতীতের যে কোনো দুর্যোগের চেয়েও অকল্পনীয় বেশি মাত্রার মহাভয় আর মহাদুর্যোগ তাড়া করেই চলেছে- করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী। দেশ-জাতির চরম সঙ্কটেকালে ‘বাতিঘর’ হয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নামক বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড কীভাবে সচল রয়েছে তা নিজ চোখে দেখার তাগিদ এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ছুটে আসেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বন্দর পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন নৌ-পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ আবুল কালাম আজাদ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাগণ।
বন্দর ভবনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বন্দরজট ৫০ শতাংশ হ্রাসের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যা এ মুহূর্তে বন্দরের প্রধান সমস্যা। আমদানি কন্টেইনার রাখার জন্য আর খালি জায়গা না থাকায় জটে প্রায় স্থবির স্বাভাবিক কার্যক্রম।
সচিব জানান, কন্টেইনার জট নিয়ে বন্দর সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। জট নিরসনের উপায় আমরা খুঁজছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রথম পর্যায়ে ৩৮টি, পরে আরও ৬টি এবং আজ বৃহস্পতিবার এখানে সভা চলাকালে ঢাকায় কেবিনেট সেক্রেটারির সভাপতিত্বে একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সকল পণ্য অফডকের মাধ্যমে আমরা অপসারণ করতে পারবো। এনবিআর-এর সিদ্ধান্তের ফলে ১৮ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার বন্দর থেকে সরানো যাবে। এর মাধ্যমে কন্টেইনার জটের অনেকটা সমাধান হবে। প্রায় ৫০ শতাংশ জট কমে যাবে। আজ এনবিআর নতুন অফিস আদেশটি জারি করেছে।
বন্দর পরিদর্শণ ও সভা শেষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আমরা চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা সংক্রান্ত যত সঙ্কট তৈরি হোক না কেন, জাতীয় স্বার্থেই চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি উলে­খ করেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সচলতার পেছনে চট্টগ্রামের সাংবাদিকগণ প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়ে ইতিবাচক সংবাদের মাধ্যমে ভূমিকা ও অবদান রাখছেন। তার প্রশংসা করলেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী ও নৌ-পরিবহন সচিব। নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফ লাইন। বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় আমরা সচেষ্ট। বন্দরের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঝুঁকি হচ্ছে আগামী প্রজন্মের স্বার্থে। বন্দর শ্রমিকদের কাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা হচ্ছে। সঙ্কটকালে প্রণোদনার চেয়ে দায়িত্বই বড় বিষয়। কাজ করতে গিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দেবে।
তিনি জানান, বহির্নোঙরে ৩৩টি জাহাজ অপেক্ষমাণ আছে। সেগুলোতে ৩৬ হাজার কন্টেইনার আছে। বন্দর থেকে অফডকে কন্টেইনার পাঠিয়ে অপেক্ষমান জাহাজগুলোর কন্টেইনার নামানো এবং জট কমানো হবে।
নৌ-পরিবহন সচিব বলেন, করোনায় সব কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম বন্দর। অনেক স্টেকহোল্ডার বন্দরের। প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখার মাধ্যম বন্দর। তাই বাধা চিহ্নিত করে তা অপসারণের চেষ্টা করছি। কন্টেইনার জট নিরসনে সব পণ্য অফডকে সরিয়ে নেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের টার্গেট জট কমানো।
সচক্ষে হ্যান্ডলিং দেখলেন : পরিদর্শনে নৌ-প্রতিমন্ত্রী সন্তুষ্ট-
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার সরাসরি ঢাকা থেকে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। সঙ্কটকালে ভিন্ন পরিস্থিতিতে সচল থাকা বন্দরের আমদানি-রফতানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সচক্ষে দেখলেন। পরিদর্শনকালে নৌ-প্রতিমন্ত্রী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত বন্দরের কাজকর্মে।
কন্টেইনার জট পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে নৌ প্রতিমন্ত্রী বন্দরের এনসিটি-৩ জেটিতে আসেন। তখন ‘এমভি ওয়াইএম হারমনি’ জাহাজ থেকে আমদানি করা কন্টেইনার খালাস হচ্ছিলো ২টি কি গ্যানট্রি ক্রেনের সাহায্যে। এ সময় তিনি বন্দর কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, কত কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি এসেছে, আমদানি কন্টেইনার নামানো ও রফতানি কন্টেইনার উঠানোর কখন শেষ হবে। বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি একটু একটু করে বাড়তে থাকায় জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে আসছে কিনা।
সিসিটি ও এনসিটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বরত টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভির নৌ-প্রতিমন্ত্রীকে জানান, ৯৯৭ টি কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি ১১ এপ্রিল বন্দরের বহির্নোঙরে আসে। ২০ এপ্রিল জাহাজটি সিসিটি-৩ বার্থে ভিড়ে। পরদিন এনসিটি-৩ বার্থে আনা হয়। দুটি গ্যানট্রি ক্রেন দিয়ে জাহাজটি থেকে কন্টেইনার খালাস করা হচ্ছে। চার দিনে হ্যান্ডলিং শেষে জাহাজটি বন্দর ছাড়তে পারবে। ডেলিভারি ক্রমে বাড়ছে, তাই কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গতিশীল হচ্ছে। বন্দরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই, হাত ধোয়ার সাবান-পানির সুব্যবস্থা এবং সতর্কতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম, সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ৪৯ হাজার ২২৭ ইউনিট কন্টেইনার জটে মজুদ রয়েছে। স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ ইউনিট। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭২৫ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে। আর আমদানি উঠানামা হয়েছে ৬০০৫ টি কন্টেইনার। ৮টি জাহাজ জেটিতে আমদানি কন্টেইনার খালাসের কাজ করছে। আর বহির্নোঙরে জটে অপেক্ষা করছে আরও ৩৩টি জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এবার সবধরনের আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে (অফডক) সরিয়ে নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বন্দরজট কমাতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে আজ বৃহস্পতিবার এই অফিস আদেশটি পাঠায়। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দরের জট সমস্যা নিরসনে বড় ধরনের অগ্রগতি হলো।
যদিও জটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের জন্য বন্দর ইয়ার্ডসমূহ এবং অফডক থেকে সারাদেশে বিশেষ ব্যবস্থায় আমদানি চালু থাকা সবধরনের শিল্প-কাঁচামাল, রোজার নিত্য ও ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি দ্রুত খালাস, ডেলিভারি পরিবহনের বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীগণ। এরজন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের লক্ষ্যে গত ১৭ মার্চ সরকারের কাছে ৬ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্দর

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ