পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এবারের রমজান আসছে ব্যতিক্রম সময়ে। করোনা সংক্রমণে বিশ্বের দেশে দেশে লকডাউনের মধ্যে মুসলিম জাহানে বছর ঘুরে আসছে সিয়াম সাধনার রমজান। রমজান এলেই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, অতি মুনাফা, পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি চিরাচরিত ঘটনা। এবার চাহিদার তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেশি মজুদ থাকায় রমজানে পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় ৬টি পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত আমদানি করা হয়েছে। রোজা শুরুর আগেই ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরে বাজার ঠাসা। এছাড়াও বাজারে চাল, গম, আদা, হলুদ, শশা, লেবু ও রসুনের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে রমজানে দাম বাড়বে না বলে দাবি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই মত বাজার বিশ্লেষকদেরও। তাদের বক্তব্য চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে দাম বাড়ে না বরং কমে যায়।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, রমজানের জন্য প্রচুর পণ্য মজুদ রয়েছে। এবার সঙ্কট হবে না। গত রমজানে যে পরিমাণ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য লেগেছে; এবার তার দ্বিগুন মজুদ রাখা হয়েছে। পণ্যের মজুদ বাড়াতে টিসিবি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সক্ষম। রমজান সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে। আবার ভালো ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের প্রণোদনাও থাকছে।
সূত্র জানায়, রমজানে পণ্যের চাহিদার চেয়ে সারাদেশের বাজারে সরবরাহ বেশি রাখতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে রমজানের অতি প্রয়োজনীয় ৬টি খাদ্যপণ্য অধিক আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এখন করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ছুটি চলছে। এর মধ্যে সবকিছু বন্ধ এবং নিম্নআয়ের কর্মহীন মানুষকে নানাভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি চলছে। রেশন কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য যাতে বৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজারে সব ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে মনিটরিং টিম গঠন করবে। রমজান মাসে এই টিমই বাজারে থাকবে। এর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বেও বাজার মনিটরিং চলবে। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অপর সংস্থা-বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্যোগেও মনিটরিং চলবে।
রমজান মাসে ভোক্তাদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ভোগ্য তেল, পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, খেজুর, মসুর ডাল। এ সব পণ্য গত রমজানে চাহিদার চেয়ে এবার দ্বিগুন পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার করোনার কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। তাই অন্য সময়ের রোজার মতো এবার বেশি কেনাকাটা হবে না। এতে করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নয় বরং চাহিদা কম হওয়ায় কমে যেতে পারে।
ভোজ্যতেল: দেশে ভোজ্য তেলের বছরে চাহিদা ২০ লাখ টন। আর রমজান মাসে চাহিদা থাকে সাড়ে তিন লাখ টন। বর্তমানে দেশে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন ভোজ্য তেলের সরবরাহ আছে। রমজান উপলক্ষে টিসিবিকে আরো ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানির নির্দেশনা দেয়। মজুদ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বেসরকারি খাতের গুদাম ভাড়া করা হয়েছে। এর বাইরে দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে।
পেঁয়াজ: দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাহিদা থাকলেও রমজান মাসে চাহিদা তিন লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ লাখ ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় এখন দেশে পেঁয়াজ অনেক বেশি রয়েছে। তাই সরবরাহ ব্যবস্থা যথেষ্ট স্বাভাবিক ও দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। রমজানেও দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
চিনি: বছরে চিনির চাহিদা ১৬ লাখ মেট্রিক টন। রমজান মাসে অতিরিক্ত প্রয়োজন হয় আরও ৩ লাখ মেট্রিক টন। সর্বমোট বছরে চিনির চাহিদা ১৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশে প্রায় ৬৫ হাজার ৫৬২ টন চিনির উৎপাদন হয়েছে। এনবিআরের হিসেব মতে, ব্যবসায়ীরা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ২৫ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আমদানির কারণে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি চিনির মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে রমজান মাসে ভোক্তাদের কাছে গুণগত মানসম্পন্ন দেশি চিনি পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। সংস্থাটি সরকার নির্ধারিত দামে ১৫টি চিনিকল থেকে প্রতি মেট্রিকটন চিনি ৬০ হাজার টাকায় ফ্রি-সেলে বিক্রি করবে। গত ২১ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
ডাল: দেশে ডালের চাহিদা প্রায় চার লাখ টন। রোজার মাসে চাহিদা ৬০ টন। এর মধ্যে দেশে ১০ লাখ টন সব ধরনের ডালের উৎপাদন হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা বিগত অর্থ বছর (২০১৮-১৯) প্রায় ৭ লাখ টন ডাল (মশুর ও মুগ ডাল) আমদানি করেছে। এ মুহ‚র্তে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি ডালের মজুদ রয়েছে।
ছোলা: অভ্যন্তরীণ মার্কেটে বার্ষিক ছোলার চাহিদা মাত্র এক লাখ টন। শুধু রমজান মাসে চাহিদা ৮০ হাজার টন। এর মধ্যে ৭ হাজার টন দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাকিটা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। এনবিআরের তথ্য মতে, ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রায় ২ লাখ টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। রমজান উপলক্ষে ছোলার মজুদ চাহিদার তুলনায় বেশি।
খেজুর: প্রতিবছর দেশে খেজুরের চাহিদা ২০ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই বিক্রি হয় প্রায় ১৮ হাজার টন। এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টন খেজুর দেশে আমদানি হয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় দ্বিগুন খেজুর মজুদ রয়েছে। ফলে খেজুরের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। তাই রমজানেও খেজুরের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, রোজার বাজারময় ঠাসা সবধরনের নিত্যপণ্যে। প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে বুধবার পর্যন্ত রমজানে দেশে চাহিদার অতিরিক্ত প্রায় পৌনে ২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, নিত্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এবার বিশ্ববাজারেও দাম কম। বন্দরের জেটি, বহির্নোঙর, কর্ণফুলীর সদরঘাট বাংলাবাজার, চাক্তাই খাল হয়ে রোজার পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে।
মজুদ ও যোগান পর্যাপ্ত থাকায় দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, কোরবাণীগঞ্জ, রেয়াজুদ্দিন বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। তবে অধিকাংশ খুচরা তথা মুদি দোকানি ইচ্ছেমতো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মুনাফাখোরি চালাচ্ছে। নগরীর কাজীর দেউড়ীর দোকানি ইসহাকের যুক্তি, করোনায় লকডাউনে পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ দিয়েও মালামাল আনা-নেয়া কঠিন। তাই দামে কিছুটা পুষিয়ে নিতে হয়।
রোজার তিন দিন আগে গতকাল চট্টগ্রামের খুচরা দোকানে চাল, চিনি, গুঁড়োদুধ, ছোলা, মসুরসহ সবধরনের ডাল, সয়াবিন তেল, খেজুর, পেঁয়াজ-রসুন, আদা, মুড়ি, চিড়া, গুঁড়, সাবান, টিস্যু পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক সামগ্রীর দাম কমবেশি বাড়তি দাম আদায় করে নিতে দেখা যায়। বেড়েছে লেবু, ফল-মূলসহ শাক-সবজির দাম। মাছ-মুরগি, গোশতের দাম স্থিতিশীল। গ্রামাঞ্চলে সবজির দর ফেলনা। করোনা নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততায় বাজারদর নিয়ন্ত্রণে অভিযান আপাতত নেই। এই সুবাদে খুচরা ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো।
চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রোজার বাজারে কোন পদের নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই। বরং আমদানি ও মজুদ পর্যাপ্ত। বন্দর থেকে আরো নিত্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত হলে সারাদেশে রমজানের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি থাকবে। বাজারে ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, রোজায় অধিক চাহিদা হয় এমন সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ যথেষ্ট। পাইকারি দরও স্বাভাবিক রয়েছে। রোজাভর দাম স্থিতিশীল থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বড় জাহাজগুলো থেকে ছোট আকারের লাইটার কার্গোজাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন নদী-বন্দর, ঘাটের উদ্দেশে আগেই ছেড়ে যাওয়া রোজার প্রচুর পরিমাণ নিত্যপণ্য এখনো খালাস শেষ হয়নি। খাদ্যশস্য, মসুর ও বিভিন্ন ধরনের ডাল, র-সুগার (অপরিশোধিত চিনি) প্রভৃতি পণ্য বর্তমানে সারাদেশের প্রায় ৩০টি ঘাটে আটকে আছে। প্রায় ৪শ’ লাইটার ও কার্গোজাহাজে বোঝাই আছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন। এসব পণ্য ঘাটে ঘাটে খালাস সম্পন্ন হলে বাজারে মূল্য আরও কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। মূলত ঘাট শ্রমিক-কুলি সঙ্কটের কারণেই জাহাজে বোঝাই রোজার এসব নিত্যপণ্য খালাস ও সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরজটে আটকে আছে চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর, আদা-রসুন, পেঁয়াজসহ রোজায় আনীত হরেক নিত্যপণ্য। এছাড়া ফ্রোজেন কন্টেইনারে আনীত বিপুল পরিমাণ তাজা ফল-মূল। রমজান মাসের চাহিদার চেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অনেক বেশি হবে।
জানতে চাইলে ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, তেল, পেঁয়াজ, ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। রমজান এলে সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিং করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।