Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার ভয়াবহতা বাড়ছেই

১২০ মৃত্যু, ৩৭৭২ শনাক্ত : ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১০, শনাক্ত ৩৯০ নিম্নমানের পিপিই-মাস্ক সিএমএসডি সরবরাহ করেনি : পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩৯০ জন। ফলে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৭৭২ জন। এছাড়া আরও পাঁচজনসহ সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৯২ জন।

এদিকে আক্রান্তদের ৭৩ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। এর অর্ধেক প্রায় ঢাকা মহানগরীতে এবং বাকি অর্ধেক ঢাকার অন্যান্য জেলায়। আর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত জেলা ৫৫টি এবং করোনার আক্রমণ হয়নি ৯ জেলায়। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৯২ জন। যার মধ্যে সিটি করপোরেশনের আছে ৩৬৪ জন।

নারায়ণগঞ্জে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন। নারায়ণগঞ্জে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৮১ জন। এরমধ্যে ৫৯৮ জন কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের পর রয়েছে গাজীপুর। এরপরে কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা, অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদ উল্লাহ।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭৪টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৩৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৭২ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২০ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও পাঁচজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৯২।

ডা. নাসিমা বলেন, নতুন করে যে ১০ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ সাতজন এবং নারী তিনজন। সাতজন ঢাকায় এবং তিনজন ঢাকার বাইরে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে একজন করে মারা গেছেন। বয়স হিসাবে ষাটোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব দুইজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন এবং ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুইজন মারা গেছেন।

বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৫০ জনকে। বর্তমানে মোট আইসোলেশনে আছেন ৯০০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৫ জন। এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৫৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে তিন হাজার ২৪০ জনকে। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৪ জনকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩২৭ জনকে। এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে সাত হাজার ৩৩৯ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে তিন হাজার ৫৬৭ জনকে এবং এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৭৩ জনকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিন হাজার ১৭২ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮০ হাজার ১৭৬ জন। এর আগে মো. শহীদ উল্লাহ ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসহ (পিপিই) চিকিৎসা সামগ্রী গ্রহণ ও বিতরণের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) থেকে নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে যথাযথ মান পরীক্ষা করে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিএমএসডির বাইরে অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে বা অন্য কারও কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিতরণ করছে। ফলে এসব চিকিৎসা সামগ্রী ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কেনা কিংবা অনুদানে প্রাপ্ত সামগ্রীর ব্যাপারে চিকিৎসক ও নার্সরা জানেন না বলে (নিম্নমানের সামগ্রীর জন্য) সিএমএসডিকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলো (নিম্নমানের মাস্ক ও গ্লাভস) সিএমএসডি থেকে সরবরাহ করা হয়নি।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদ উল্লাহ জানান, গত ২১ এপ্রিল) পর্যন্ত সিএমএসডি পিপিই সংগ্রহ করেছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৫০টি। বিতরণ করেছে ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৪৮টি। বর্তমানে মজুদ রয়েছে তিন লাখ ২৯ হাজার ৯০২টি। সিএমএসডি প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার পিপিই গ্রহণ ও বিতরণ করে থাকে।
বর্তমানে সিএমএসডি বিভিন্ন গ্রেডের এবং উন্নতমানের পিপিই পাচ্ছে এবং কোভিড-১৯ এর জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালে বিতরণ করছে। এছাড়া লক্ষাধিক এন-৯৫, কেএন-৯৫, এসইপি-২ ও পি-২ বা সমমানের মাস্ক মজুদ রয়েছে। এগুলো কোভিড হাসপাতাল ও পিসিআর ল্যাবরেটরিতে বিতরণ করা হচ্ছে।

বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তান্ডব চালাচ্ছে।

চীন পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এক লাখ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। তবে প্রায় সাত লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ।

এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।



 

Show all comments
  • Ba Bu ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর হার নিয়ে গত ২৬শে মার্চে তৈরি জাতিসংঘের একটি ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল রিপোর্ট বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এতে পূর্বাভাস করা হয়, বাংলাদেশে জনঘনত্বের বিবেচনায় করোনাভাইরাসে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটতে পারে। কিন্তু এই পূর্বাভাসে একটি শর্ত ছিল। আর সেটি হলো করোনাভাইরাসের বিস্তার, প্রশমন এবং অবদমনে সরকারের তরফে একেবারেই যদি কোন ধরনের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলেই শুধুমাত্র এই পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোবারক হোসেন ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় আসছে না- বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ আক্রান্তের ২৫% যেখানে সুস্থ হয়ে উঠছেন সেখানে বাংলাদেশে সুস্থতার হার কেন ৩.৫%-এর মত।
    Total Reply(0) Reply
  • Anowar Hussain ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে তাণ্ডব চালালেও বাংলাদেশের কিছু নেতা-কাথা আর চেয়ারম্যান মেম্বারদের তকদির খুলে দিয়েছে আবার কিছুকিছু নেতা-কাথা আর চেয়ারম্যান মেম্বারদের লুঙ্গি খুলে নেংটা ও করে দিয়েছে.
    Total Reply(0) Reply
  • Kiran Samadder n ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    10 জন মারা যায় 5 জন সুস্থ হয়।এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে বাংলাদেশে সাত কোটি জনসংখ্যা হতে বেশিদিন সময় লাগবে বলে মনে হয় না। এবং তখন যারা বেঁচে থাকবে তারা একটি সুন্দর,দূষণমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত ,মানবিক বাংলাদেশ ফিরে পাবে। হয়তো সে বাংলাদেশে আমি বেঁচে নাও থাকতে পারি । যারা থাকবে তাদের জন্য শুভকামনা রইল
    Total Reply(0) Reply
  • চানক্য পন্ডিত ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    পরিসঙখ্যান দেখে অনুমান করা যাচ্ছে যে ৬০-৮০ হাজার মানুষ মরার সম্ভাবনা রয়েছে যদি এভাবে চলে। আর যদি আরো উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে ১-২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jaber Ahmed Rumel ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    দেখুন কোথায় দাড়াবে সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হল সরকারের পাশাপাশি আমরা জনগন ঠিক ততটা সতর্ক এবং সচেতন নই যার প্রভাব এবং ভোগান্তি জীবনের শেষ সব কিছুই আমাদেরই হবে জনগনের ভুলের কারনেই? যেমন মানুষে মানুষে সংঘাত ঘটলে মামলার আসামী হয় অনেক নিরপরাধ মানুষ ঠিক সেই রকমই বলা যায়? আরেকটু যদি বলি জীবনে হীসাব কষতে হলে আপন কর্মের ফলই বেড়িয়ে আসবে এটাই বাস্তব!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alam ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ৮:১৬ এএম says : 0
    ভরসা রাখুন একমাত্র আল্লাহর উপর। এবং সেইসাথে যতটুকু সম্ভব নিজ নিজ দায়িত্বে সর্তকতা অবলম্বন করুন। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রায়ই মানুষই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই মহামারীতে সুস্থ এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখেই তো বঝায় যায় যে, দেশের চিকিৎসা কতটুকু স্বাবলম্বী। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ